ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেধাবী দুই বোনের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৮ এপ্রিল ২০১৮

মেধাবী দুই বোনের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার

চিতলমারী উপজেলার শিবপুর গ্রামের বশির মল্লিকের মেয়ে মরিয়ম ও আফসানা। দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে মরিয়ম আর ছোট বোন সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী আফসানা। দুই বোনই মেধাবী ছাত্রী। মরিয়ম প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে। ৮ শ্রেণীতেও বৃত্তি। ছোটবোন আফসানা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলার মধ্যে প্রথম স্থান লাভ করেছে। অথচ অর্থের অভাবে মেধাবী এ দুই বোনের ভবিষ্যত এখন অন্ধকার। পড়াশোনা দূরে থাক তিন বেলা ঠিকমত খাবার জোটে না। মরিয়ম ও আফসানা দু’জনে উপজেলা সদরের হাসিনা বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বশির মল্লিক মরিয়ম ও আফসানাসহ ৪ মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে বর্তমানে চিতলমারী সদর বাজার সংলগ্ন বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজের পাশে এবাদত আলী ফরাজীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন। নিজের বাস্তুভিটাটুকু পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন। সহায়-সম্বল সব বিক্রি করে গত বছর বিদেশ গিয়ে ছিলেন ভাগ্য বদলানোর জন্য। এছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেন। ইচ্ছা ছিল বিদেশ থেকে টাকা পাঠিয়ে লোন শোধ করবেন এবং মেয়েদের লেখাপড়া করাবেন। কিন্তু বিদেশ যাওয়াটাই এখন তার জন্য বড় কাল হয়েছে। দালালদের খপ্পড়ে পড়ে বিদেশ গিয়ে এখন সর্বস্বান্ত হয়ে কোন রকম জীবন নিয়ে দেশে ফিরেছেন। এখন আর বেঁচে থাকার মতো যেন কোন অবলম্বন নেই। মেয়েদের পড়াশোনা করানোর ব্যাপারে চরম হতাশা প্রকাশ করে বশির মল্লিক বলেন, ভাগ্যে এমনটি হবে কখনও ভাবতে পারিনি। তার মেয়েরা মেধাবী ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও এখন আর তাদের পড়াশোনা করানোর মতো কোন সামর্থ্য নেই। দু’বেলা ঠিকমতো সন্তানদের মুখে খাবারও তুলে দিতে পারছেন না। বশির মল্লিক ও তার স্ত্রী রুমিছা বেগম সংসারের অভাবের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। রুমিছা বেগম বলেন, ব্র্যাক, আশা, উদ্দিপন ও একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প থেকে কয়েক লাখ টাকা লোন নিয়ে স্বামীকে বিদেশ পাঠান। প্রতারকের খপ্পরে পড়ে এখন নিঃস্ব। ভিটে-মাটি সব হারিয়েছেন। এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। তার ওপর কিস্তির টাকা শোধের চাপে দিশেহারা। সন্তানদের কিভাবে পড়াশোনা করাবেন। অন্যের আশ্রয়ে আছেন বর্তমানে। এ পরিস্থিতিতে মেয়েদের পড়াশোনা করানো দূরে থাক বেঁচে থাকাই যেন দুস্কর হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে এবাদত আলী ফরাজী ও স্থানীয় স্কুল শিক্ষক বিজয় কৃষ্ণ পোদ্দার জানান, মরিয়ম ও আফসানা খুবই মেধাবী ছাত্রী। বর্তমানে তাদের যে অবস্থা এতে করে পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের পড়াশোনা করানোটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাসিনা বেগম মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শৈলেন্দ্র নাথ বাড়ৈ জানান, মরিয়ম ও আফসানা মেধাবি ছাত্রী। নানা অভাব অনাটনের মধ্যে থেকেও খুব ভালো রোজাল্ট করে তারা বিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তাদের পড়াশোনা যাতে চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য তিনি বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি বিত্তবান ও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। -বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে
×