ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিশ্চিত হচ্ছে জবাবদিহিতা

প্রতিটি জেলায় সরকারী অফিসে সেবার মানের ওপর গ্রেডিং

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ এপ্রিল ২০১৮

প্রতিটি জেলায় সরকারী অফিসে সেবার মানের ওপর গ্রেডিং

সমুদ্র হক ॥ জনপ্রশাসনের (সিভিল সার্ভিস) সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের আওতায় আনা হয়েছে। দেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (তৃতীয় বিশ্ব) থেকে উন্নয়নশীল দেশে (দ্বিতীয় বিশ্বে) পা ফেলেছে। এ পথে সরকারী কর্মকর্তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের পূর্বের ধারণা পাল্টিয়ে সরাসরি জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষ উন্নত দেশগুলোর মতো সেবা পেয়ে নিজেদের গড়ে তোলে। মাঠ পর্যায়ের সাধারণ মানুষ তা পেতেও শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে ডিজিটাল সেবা (ই সেবা)। তথ্যই শক্তি হিসেবে কাজ করছে। এখনই মোবাইল ফোন নম্বর থেকে নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বরে কল করলে দ্রুত সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এই ব্যবস্থা আরও উন্নত হচ্ছে। এ বিষয়ে একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, ২৫ বছর আগের দেখা চোখে ২৫ বছর পরের বাংলাদেশকে মেলানো যাবে না এবং তা ঠিকও নয়। সেদিনের সেই জেলা প্রশাসন আর আজকের জেলা প্রশাসনের মধ্যে অনেক পার্থক্য। বর্তমানে জেলা প্রশাসনে প্রত্যেক নাগরিক সেবা পাওয়ার সমান অধিকার রাখে। এখন আর কোন কিছুকে চাপা দিয়ে রাখা যাবে না। সামান্য চুন থেকে পান খসলেই সোস্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠবে। বাংলাদেশের সোস্যাল মিডিয়া এখন উন্নত বিশ্বের মতো শক্তিশালী। দেশে বর্তমানে যত প্রশিক্ষণ কর্মসূচী চলছে তার প্রত্যেকটিতেই শুদ্ধাচার কৌশল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সচিব পদমর্যাদার একজন বিষয়টি দেখভাল করছেন। শুদ্ধাচারে প্রতিটি জেলায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সেবার মান পর্যবেক্ষণ করে ওই জেলার গ্রেড নির্ণয় করে সরকারীভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। যেমন গতবছর বগুড়া জেলা ১৩তম অবস্থান পেয়েছে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনে কেউ যদি সেবা না পেয়ে ফিরে যায় তাহলে কেন এবং কি কারণে ফিরে গেল তা প্রকাশের সঙ্গেই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেবা প্রদানে দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে জেলা প্রশাসন। সূত্র জানায়, এই ব্যবস্থা দ্রুত জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়ক হবে। উল্লেখ্য, সরকারের নির্দেশে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে শুদ্ধাচার কর্মসূচী অবমুক্ত হয়েছে। দেশের মানুষ যেন সরকারী সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কাছ থেকে ভাল ব্যবহার ও সময়মতো কাজ বুঝে পায় এবং কোনভাবেই যেন দুর্নীতির মধ্যে জড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত করাই এই কর্মসূচীর অন্যতম উদ্দেশ্য। একই সঙ্গে জবাবদিহিতা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে খোঁজ খবর করে জানা যায়, এখনও সীমিত সাধ্য নিয়ে জেলা প্রশাসন কর্মদক্ষতা চালিয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, জেলা প্রশাসনে যে লোকবল থাকার কথা তা নেই। জেলা প্রশাসকগনের (ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) কাজের পরিধি কয়েকগুণ বেড়েছে। যে অর্গানোগ্রাম আছে তা ঢাকা নারায়ণগঞ্জ গাজীপুরসহ হাতে গোনা কয়েকটি জেলা ছাড়া অন্য কোথাও শতভাগ পূর্ণতায় নেই। যে জনবল থাকার কথা তার ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ (জেলা ভেদে) দিয়ে কাজ চলছে। এই জনবল নিয়েই ভিশন (রূপকল্প) ২০২১’র দিকে ছুটে চলেছে দেশ। জেলা প্রশাসকের অফিসগুলোতে অনলাইনের একটি নেটওয়ার্ক লেন সার্ভার বসানো হয়েছে। একটি নেটওয়ার্কে প্রশাসনের সকল কর্মকর্তা সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবেন। তারপরও প্রশাসনের অনেক স্থানে আধা কাজ (ম্যানুয়ালে বা কাগজ কলমে) আধা কাজ কম্পিউটারে চলছে। এই অবস্থায় ছুটে চলার গতি কিছুটা বিঘ্নিতও হচ্ছে। তবে কর্মকর্তাগণ আশা করছেন, যেভাবে তথ্য শক্তি সুপার হাইওয়েতে ছুটছে তাতে যারা এখনও পিছিয়ে তারা ছিটকে পড়বেন। মেধা ও প্রযুক্তিতে দক্ষ শক্তি সেই স্থানে বসবে। শুদ্ধাচারের পরিকল্পনার প্রধান বিষয় হলো সুশাসন প্রতিষ্ঠা রাষ্ট্রের আবশ্যিক কর্তব্য। এই বিষয়ে বগুড়া জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক সুফিয়া নাজিম বলেন, শুদ্ধাচার বলতে সাধারণভাবে নৈতিকতা ও সততা দ্বারা প্রভাবিত আচরণ ও উৎকর্ষ বোঝায়। ব্যক্তি পর্যায়ে এর অর্থ হলো কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততা, তথা চরিত্রনিষ্ঠা। দলিলটিতে শুদ্ধাচারের এই অর্থই গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকগণের (ডিসি) কাজে সরাসরি সহযোগী হিসেবে থাকেন, উপ-পরিচালক স্থানীয় সরকার (ডিডি এলজি), অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) তিনজন (সার্বিক, রাজস্ব এবং শিক্ষা ও আইসিটি), নেজারত ডেপুটি কালেক্টরেট (এনডিসি) এবং কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। দেখা যায় বিভিন্ন অনুষ্ঠান, বিভিন্ন দিবস, প্রটোকলসহ বহুমূখী চাপে প্রতিদিনকার কাজ কেউই সময়মতো সারতে পারেন না। কখনও মধ্যরাত অবধি কাজ করতে হয়। দেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর গত ৪৭ বছরে জনসংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। এই তুলনায় সিভিল প্রশাসনে জনবল বেড়েছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ১৯৮৭ সালে সিভিল প্রশাসনে সব মিলিয়ে জনবল ছিল ১০ লাখ ৯০ হাজার ৩শ’ ৩৩ জন। বর্তমানে সিভিল প্রশাসনে সব মিলিয়ে জনবল প্রায় ১৫ লাখ। জনপ্রশাসনে এই জনবল দিয়েই কাজ চলছে। একজন যুগ্ম-সচিব জানালেন জেলা প্রশাসক মূলত জেলার সকল কাজের সমন্বয়কারী। জেলার সকল কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করেন। তার মতে জেলা প্রশাসনের কাজের গতি দ্রুত করতে প্রথম দরকার যে অর্গানোগ্রাম (কাঠামো) আছে সেই অনুযায়ী মেধা ও প্রযুক্তিতে দক্ষতার শতভাগ লোকবল নিশ্চিত করা এবং ডিজিটালের সকল কাঠামো স্থাপন। বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে তা এখনই প্রয়োজন।
×