ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জে হাওড়ের ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

সুনামগঞ্জে হাওড়ের ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ, ১৮ এপ্রিল ॥ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর ও শাল্লা জগন্নাথপুর উপজেলার হাওড়ের বোরো ফসল (ব্রি-২৮) জাতের ধান ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। হাওড়ের বোরো ফসলগুলোতে নতুন রোগ দেখা দেয়ায় কৃষকদের মনে আবারও আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। কৃষকরা জানিয়েছেন ‘ফসল ভাল হলেও ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধানের গোছা (গোটা আসা ধানের গোছা) সাদা হতে থাকায় তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা হয়েছে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানিয়েছেন, ‘ব্লাস্ট ভাইরাস থেকে ধান রক্ষা করতে প্রচারপত্র বিলিসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা হাওড়ে গিয়ে ওষুধ স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, ‘২ লক্ষ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে এবার বোরো আবাদ করা হয়েছে। ফসলের সার্বিক অবস্থাও ভাল। কিন্তু বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও কোথাও ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়েছে। জেলার ৫টি উপজেলার ১২০ হেক্টর জমিতে ব্লাস্টের আক্রমণ হয়েছে। বিশেষ করে ২৮ ধানে এ রোগের প্রকোপ বেশি। এ ব্যাপারে প্রত্যেক উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ সবাই কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন, বিভিন্ন বিষয়ে প্রেসক্রিপশন করছেন বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার সাহা। সরেজমিনে তাহিরপুরের শনির হাওড় ও মাটিয়ান হাওড় ঘুরে দেখা গেছে, ‘কেবল ব্রি-২৮ জাতের ধানই ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ধানের শীষ (ধানের গোটা) বের হওয়ার পরপরই হলুদ রং ধারণ করে সাদা হয়ে যায়। আর শীষের নীচের অংশের গিঁটের ভেতর কালো রং ধারণ করে। ব্লাস্ট ভাইরাসে আক্রান্ত শীষে ধান হয় না। সবধানই সাদা রং ধারণ করে চিটা হয়ে যায়। উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের কৃষক আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, ‘গত বছর ফসল হারানোর পর সারাবছর কষ্টে কাটিয়েছি। এবার জমির ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে আমরা চিন্তিত। রোগ সারাতে জমিতে ছত্রাক নাশক ন্যাটিভো বা ট্রুপার স্প্রে করলেও রোগমুক্ত হচ্ছে না ধান গাছ। শনির হাওড়পাড়ের গোবিন্দশ্রী গ্রামের কৃষক সেলিম আখঞ্জি বলেন, ‘শনির হাওড়ে ৬ একর জমিতে ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষাবাদ করেছি। ২-৩ দিন আগে থেকে ধানের শীষ সাদা হতে দেখি। কৃষি কর্মকর্তাকে বলার পর তারা এক ধরনের স্প্রে এনে জমিতে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রতি একর জমিতে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ করে স্প্রে ব্যবহার করছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস সালাম বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগ সাধারণত ধানে তিন পর্যায়ে দেখা যায়। ধানের বীজ তলায়, শানের কিটে এবং ধানের শীষ বের হওয়ার সময় ধানের ছড়ায়। এর ফলে ধানের ছড়া ভেঙ্গে যায়। তাহিরপুরে এই পর্যন্ত ৩০ হেক্টর জমিতে এ রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে প্রকৃতি বিরূপ থাকলে দ্রুত এ রোগ আরও বিস্তার লাভ করবে। এ জন্য আমরা কৃষকদের ব্লাস্ট রোগাক্রান্ত এবং ভাল দুই ধরনের জমিতেই ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে বলেছি। আমরা কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’ সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স্বপন কুমার সাহা জানান মূলত জমিতে প্রয়োজনীয় পানি না থাকায় এ রোগ দেখা দিয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে ব্লাস্টের প্রকোপ কমে আসবে। তবে ব্লাস্ট রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়ার জন্য প্রত্যেক উপজেলার কৃষি অফিসের কর্মকর্তা ও মাঠকর্মীরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।
×