ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পূজা রায়

সুখ শান্তি স্বস্তি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

সুখ শান্তি স্বস্তি

কেউ দুই বেলা বিরিয়ানি খেয়েও সুখী না, আবার কেউ সামান্য পান্তা ভাতেও সুখী! ছোটবেলায় পাশের বাসার কাকুকে দেখতাম কাকিকে সপ্তাহে ৩ দিন গালিগালাজ আর মারধর করতেন। কারণ হিসেবে বেশি কিছু কখনই তেমন থাকত না। হয়ত রান্নাতে একটু ঝাল নুন বেশি হয়েছে। কিংবা সময়মতো রান্না হয়নি। অথবা কাকু বাইরে থেকে এলে কখনও কাকির দরজা খুলে দিতে একটু সময় লেগেছে। পান থেকে চুন খসলেই অমনি গালিগালাজ আর মারধর। তার কাছে জীবনের সংজ্ঞা আদৌ কি, আমি বুঝতে পারিনি কখনও! শুধু এই বিরক্তিকর ঝামেলা এড়াতে চাইতাম। কখনও কানে বালিশ চাপা দিয়ে কিংবা তুলো গুঁজে! কাকি বাবাকে বিচার দিতে আসতেন। আর বলতেন এই শেষ, এবার এর একটা বিহিত করতে চাই। এত যন্ত্রণা আর সইতে পারছি না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো উনি রাতে বিচার দিয়ে সকালে এসে বাবাকে বলতেন, ভাই থাক, ওকে কিছু বলেন না। ও আমার কাছে মাফ চেয়েছে আর বলেছে আর কখনও এমন ভুল করবে না। অথচ আমি জানি, তিনিও জানেন, আমরা সবাই জানি এই ভুল বার বার হবে। অথচ কাকি শুধুমাত্র সংসার আর বাচ্চাদের কথা ভেবে এত অপমান, এত যন্ত্রণা সয়ে যাচ্ছেন। অথচ কাকু একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী। যে সংসারে অভাবের নিত্য বসবাস, সে সংসারে এত লাঞ্ছিত হয়েও কেউ পড়ে থাকে কেন, সেটা বোঝা সত্যিই দুরূহ! এর উল্টো চিত্রও রয়েছে। এক ভাইয়া সরকারি দায়িত্বশীল পদে চাকরি করেন। কেউ কেউ হয়ত সাধনা করে এমন পাত্রকে স্বামী হিসাবে পাওয়ার জন্য। গালিগালাজ মারধর তো দূরে থাক সেই ভাইয়া জোরেও কথা বলতেন না। আর সরল সহজ ছিলেন! হয়ত তিনি ভাল ভাল খাবার আর যতœ ভালবাসা দিয়ে বউকে ভাল রাখার চেষ্টা করতেন। একটা মাত্র সন্তান নিয়ে ভবিষ্যত স্বপ্ন বুনতেন। অথচ ভাইয়ার কপালে ভাল মানুষ হওয়ার প্রাপ্য জুটল না। ভাবি একদিন তার ফুটফুটে বাচ্চা, সংসার, স্বামী, স্বামীর ভালবাসাকে দু’পায়ে মাড়িয়ে তার তথাকথিত প্রেমিকের হাত ধরে শুধুমাত্র নিজের সুখ আর স্বাচ্ছন্দ্যর কথা ভেবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ালেন! আচ্ছা এটা কেমন প্রেম! যেখানে সমস্ত পিছুটান অস্বীকার করতে হয়! যে প্রেম সন্তানের মায়াকে আটকাতে পারে না। সামাজিকতা কিংবা লোকলাজের কথা না হয় নাইবা বললাম! আসলে সুখ উপলব্ধির ব্যাপার। এটাকে বুঝতে হয়। যে অবস্থানেই থাকুক মানুষ, যদি সে উপলব্ধি করতে পারে যে সুখী, তবেই সে সুখী। সুখী হতে হলে এত বেশি কিছু লাগে না। শুধু সেটা মন থেকে বুঝতে হয়! তাই স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে বুঝুন। একে অপরকে গুরুত্ব দিন, তাতে মূল্যবোধ বাড়বে। একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন, ভালবাসুন। দেখবেন আপনাদের সন্তানও আপনাদের সঙ্গে ঠিক একই আচরণ করবে, কারণ ও আপনাদের একে অপরের ভালবাসা আর শ্রদ্ধাবোধ দেখেই বড় হবে। ফলে পারিবারিক বন্ধন মজবুত হবে। নরসিংদী, রায়পুরা থেকে
×