ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি সঙ্কটে দুই বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে ॥ তীব্র লোডশেডিং হতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

জ্বালানি সঙ্কটে দুই বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হচ্ছে ॥ তীব্র লোডশেডিং হতে পারে

রশিদ মামুন ॥ জ¦ালানি সঙ্কটে বন্ধ হচ্ছে সিরাজগঞ্জের বড় দুই বিদ্যুত কেন্দ্র। উত্তরে অন্ধকার নেমে আসার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ৪৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন কমে গেলে সারাদেশে তীব্র লোডশেডিং শুরু হতে পারে। গত বছর গ্রীষ্মেও কালবৈশাখীতে পিজিসিবির টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ায় অনাকাক্সিক্ষত লোডশেডিং করতে হয়েছিল; যাতে তীব্র সঙ্কটে বিদ্যুতের সাফল্য ম্লান হতে বসেছিল। এবার গ্রীষ্মের আগেই পরিস্থিতি উন্নয়নে বিদ্যুত বিভাগ উদ্যোগ নিয়েছে। যদিও তেল পরিবহন জটিলতার কারণে বিদ্যুতে বড় সঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগ বলছে, দফায় দফায় চিঠি দিয়ে, দেনদরবার করেও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) এবং রেলওয়ের অসহযোগিতায় সঙ্কটের সমাধান করা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে বিদ্যুত সঙ্কটে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব না হলে সঙ্কট আরও বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুত বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, বছরের শুরুতে পেট্রোবাংলার কাছে যে গ্যাসের চাহিদা জানানো হয়েছিল তা পূরণ করতে পারেনি। গ্যাসের সঙ্কটে সরকার দ্বৈত জ¦ালানির বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো তেলে চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর প্রেক্ষিতে ডিজেল দিয়ে কেন্দ্রগুলো চালানো হচ্ছিল। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জে রাষ্ট্রীয় নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিজিসিএল) দুটি ২২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। এর একটি কেন্দ্র তেল সরবরাহ না থাকায় কিছুদিন ধরেই বন্ধ রাখতে হয়েছে। আরেকটি কেন্দ্রেও তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের দুটি বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য দৈনিক ২০ লাখ ৫০ হাজার লিটার তরল এইচএসডি (ডিজেল) প্রয়োজন। এই তেল খুলনার দৌলতপুর থেকে রেলওয়ের রেকারের মাধ্যমে পরিবহন করা হয়। প্রথমে একটি রেকার দিয়ে তেল পরিবহন করা হতো। পরে রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেনের আন্তরিকতায় বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য দুটি রেকার বরাদ্দ দেয়া হয়। রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, একটি রেকার ১৫ লাখ লিটার তেল পরিবহন করতে পারে। দুটি রেকারের দৈনিক পরিবহন ক্ষমতা ৩০ লাখ লিটার। কিন্তু একটি রেকার খুলনার দৌলতপুর থেকে তেল নিয়ে সিরাজগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্রে এসে ফিরে যেতে তিন দিন সময় লাগে। সেই হিসেবে দুটি রেকার ব্যবহার করা হলেও দৈনিক গড়ে ১০ লাখ লিটারের বেশি তেল বিদ্যুত কেন্দ্র সরবরাহ পাচ্ছিল না। কিছুদিন আগে বিপিসি পার্বতীপুর ডিপোর তেল সঙ্কটের কথা বলে একটি রেকার নিয়ে যায়। অন্য রেকারটিও গত মঙ্গলবার থেকে তেল নিয়ে আর আসবে না বলে জানিয়ে দেয়। এতে চালু দুই বিদ্যুত কেন্দ্র সঙ্কটে পড়েছে। একটি কেন্দ্র জ¦ালানি সঙ্কটে আগেই বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্যটি মজুদ তেল দিয়ে বড়জোর আর দুদিন চলতে পারবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে খাতে বিদ্যুত কেন্দ্র চালানোর জন্য অন্তত ১৫ দিনের তেল মজুদ রাখার নির্দেশনা রয়েছে সেখানে দৈনিক চাহিদার তেলই মিলছে না। সঙ্কট সামাল দিতে বিপিসির বাঘাবাড়ি কেন্দ্র থেকে ট্যাঙ্ক-লরিতে তেল সরবরাহ নিচ্ছিল বিদ্যুত কেন্দ্রটি। কিন্তু প্রতিদিন ৫০টি ট্যাঙ্ক লরি তেল সরবরাহ করলেও সাত লাখ লিটারের বেশি তেল সরবরাহ করতে পারে না। সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে বিদ্যুত কেন্দ্র চালানোর জন্য বিপিসির চেয়ারম্যানের কাছে গত ১৩ এপ্রিল একটি চিঠি দেয়া হয়। চিঠিতে জরুরী সেবা খাত হিসেবে বিদ্যুতে শুক্র এবং শনিবার তেল সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়। ওই দিন যেহেতু অন্য কোথাও তেল সরবরাহ করা হয়নি তাই ১০০ ট্যাঙ্ক লরিতে বিদ্যুত কেন্দ্রে জ¦ালানি সরবরাহ সম্ভব। কিন্তু বিপিসি সেবা খাত হলেও সঙ্কটের সময় বিশেষ ব্যবস্থায় তেল সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানায়। জানা গেছে শ্রমিক সংগঠনগুলোর দৌরাত্মের কারণে কর্মকর্তারাও বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছেন না। জানতে চাইলে বিপিসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (পরিচালক অপারেশন) সৈয়দ মোজাম্মেল হক বলেন, এটি আমাদের কোন সমস্যা নয়। আমরা জেনেছি রেলওয়ে তাদের রেকার দিয়ে তেল পরিবহন করছে না। তিনি বলেন, তাদের তেল নিতে হলে রেকারের ব্যবস্থা তাদের করতে হবে। আমাদের কিছু করার নেই। তিনি বলেন, বিপিসির তেলের কোন সঙ্কট নেই। কেন জরুরী প্রয়োজনে শুক্র এবং শনিবার বাঘাবাড়ি থেকে তেল সরবরাহ করা যাবে না এমন প্রশ্নে মোজাম্মেল হক বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি কিন্তু শুক্র এবং শনিবার সাপ্তাহিক বন্ধর দিন হওয়ায় শ্রমিকদের ওভারটাইম দিতে হয়। তেল বিপণন কোম্পানি বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে আগ্রহী নয়। এজন্য শ্রমিকদের ওভারটাইমের অর্থ বিদ্যুত কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ দিলে তেল সরবরাহ করা সম্ভব বলে জানান তিনি। রেল সচিব মোফাজ্জেল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, এ ধরনের সঙ্কটের কোন কথা আমি জানি না। বিদ্যুত কেন্দ্রে তেল সরবরাহের বিষয়টি আমরা সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি। বিষয়টি নিয়ে তিনি রেলওয়ের অতিরিক্ত পরিচালক অপারেশনের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে রেলওয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মিয়া জাহানের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তার মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও সাড়া মেলেনি।
×