ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আগেই মিয়ানমারের ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর আগেই মিয়ানমারের ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা

মোয়াজ্জেমুল হক /এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রথমে গণহারে হত্যা করেছে, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, যুবতী ও মহিলাদের ধর্ষণ করেছে। শুধু তাই নয়, শিশুদেরও হত্যা করেছে নির্মম কায়দায়। এরপরে রোহিঙ্গা বসতিগুলোতে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। ফলে লাখে লাখে রোহিঙ্গারা যে যে পথে পারে সে পথে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখন যখন প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমাগতভাবে বাড়ছে তখন মিয়ানমার পক্ষ নতুনভাবে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করতে তৎপর হয়েছে। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবির নজরদারি আবারও বৃদ্ধি করা হয়েছে, যাতে এপারে আশ্রয় নেয়া কোন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্য বা পরিবার অবৈধ পথে মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে। এদিকে রোহিঙ্গাদের ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের ঘটনা এবং বর্তমানে তাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় ইতোমধ্যে পানি অনেক দূর গড়িয়েছে। শুধু দুদেশের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এমন কোন ফোরাম নেই যেখানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি আলোচিত হয়নি। সর্বত্র একটি বক্তব্যই এসেছে রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের বর্বর নির্যাতনের শিকার। তাদের প্রত্যাবাসন করতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমার রয়েছে অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষে সমঝোতা স্মারকও হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরুর কথা থাকলেও মিয়ানমার পক্ষের সাড়া না মেলায় তা কার্যকর হয়নি। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে চুক্তিও করেছে। মিয়ানমার সরকারের পক্ষেও চুক্তি করার কথা রয়েছে। কিন্তু তার আগেই মিয়ানমার সরকারের পক্ষে প্রচার চালানো হচ্ছে প্রত্যাবাসন শুরু হয়েছে। বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয় বলে আলোচনা চলছে। কেননা, সীমান্তের ওপারের তুমব্রু এলাকার জিরো পয়েন্ট থেকে ৫ সদস্যের এক পরিবারকে রাখাইনে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। এপার থেকে কাউকে নেয়া হয়নি। কেউ যায়ওনি। এরপরও মিয়ানমার সরকার এবং সে দেশের কিছু মিডিয়া ওই এক পরিবারের ফিরে যাবার বিষয়টি নিয়ে ধূ¤্রজাল সৃষ্টি করেছে। দেশটির পক্ষে প্রচার শুরু করা হয়েছে এই বলে যে, রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুতদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজ তারা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে একটি পরিবার রাখাইনে স্বেচ্ছায় ফেরত গেছে। সুচি সরকার প্রচারিত এক বিবৃতিতে জানান দেয়া হয়েছে, ৫ সদস্যের ওই পরিবারকে একটি প্রত্যাবাসন ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। ওই পরিবারের সদস্যদের হাতে ভেরিফিকেশন কার্ড দেয়ার ছবিও প্রকাশ করা হয়েছে। ঘটনাটি এমন সময় ঘটানো হয়েছে যখন রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদপূর্ণ প্রত্যাবাসন নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে। আন্তর্জাতিক চাপকে বিভ্রান্ত করার জন্য এটি একটি প্রচার কৌশল বলেও আলোচিত হচ্ছে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে শুরু থেকে যুক্ত বাংলাদেশের ত্রাণ শরণার্থী বিষয়ককমিশনার আবুল কালাম জানিয়েছেন, একটি পরিবারের ৫ সদস্য ফিরে যাওয়াটি প্রত্যাবাসন নয়। এটাকে প্রত্যাবাসন বলার কোন সুযোগও নেই। তিনি আরও জানিয়েছেন, নোম্যানসল্যান্ডে আশ্রয় গ্রহণকারীদের ফেরত নেয়ার বিষয়টি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে সাক্ষরিত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় পড়ে না।
×