ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু মে মাসে

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ শুরু মে মাসে

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শিল্পোদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া বড় ধরনের একটি প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে যাচ্ছে জাতীয় গ্রিডে তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে। আমদানি করা তরল গ্যাসে ঘুচবে গ্যাস সঙ্কট। সরবরাহের জন্য অনেকটাই প্রস্তুত মহেশখালীর মাতারবাড়ির এলএনজি টার্মিনাল এবং পাইপ লাইন। মে মাসের মধ্যেই গ্রিডে এলএনজি যুক্ত করা যাবে বলে আশা করছে পেট্রোবাংলা। এখন চলছে সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক করার প্রক্রিয়া। চট্টগ্রামে ড্রাইডকে এসে গেছে এলএনজি টার্মিনালের জন্য ৫টি পোর্ট সার্ভিস ভেসেল। এগুলোর মধ্যে দুটি ব্যবহৃত হবে জ্বালানি পরিবহন, টার্মিনালে নিয়োজিতদের আনা-নেয়া এবং রশদ সরবরাহের কাজে। অপর তিনটি নিয়োজিত থাকবে টাগবোট হিসেবে ভাসমান এলএনজি টার্মিনালের সঙ্গে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, আগে এপ্রিলের শেষ দিকে এলএনজি সরবরাহ শুরুর পরিকল্পনা নেয়া হলেও কারিগরি কিছু কারণে কিছুটা পেছাতে হচ্ছে। তবে মে মাসের মধ্যে অবশ্যই এলএনজি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে। জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ৫শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এতে করে গ্যাসের সঙ্কট অনেকটাই দূর হবে। প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী বীর বিক্রম গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্র্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চিটাগাং চেম্বার আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় ২৫ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে এলএনজি সরবরাহের কার্যক্রম উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছিলেন। পেট্রোবাংলা সূত্র জানাচ্ছে, ওই তারিখে সরবরাহ শুরু করা না গেলেও এ নিয়ে কোন অনিশ্চয়তা তো নেই। উদ্বোধনী সিডিউল খুব একটা পেছাচ্ছে না। আগামী মাসের মধ্যেই এলএনজি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হবে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ড্রাইডক সূত্রে জানা যায়, টার্মিনালের জন্য ৫টি ভেসেল ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। ভেসেলগুলো হচ্ছে সুইজার চিটাগাং, সুইজার ঢাকা, সুইজার খুলনা, সুইজার রংপুর এবং সুইজার ফক্সট্রট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জি’র সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে ভাসমান টার্মিনালটি নির্মাণ করছে পেট্রোবাংলা। এতে ব্যয় হচ্ছে ১৫৬ কোটি মার্কিন ডলার। টার্মিনালটি পরিচালনা করবে এক্সিলাইরেট এনার্জি (বাংলাদেশ লিমিটেড)। মহেশখালীর এলএনজি টার্মিনাল এখন প্রায় প্রস্তুত। অপেক্ষা শুধু কিছু সংযোজন এবং এলএনজির প্রথম চালানের জন্য। চুক্তি অনুযায়ী মধ্যপ্রাচ্যের কাতার থেকে আসবে এলএনজি’র প্রথম চালান। মহেশখালীর কাছে বঙ্গোপসাগরে উদ্বোধনী চালানটি যে ভেসেলে আসবে সেটি ভাসমান হিসেবে স্থায়ী থাকবে। এরপর প্রতি মাসে আসা জাহাজ ওই ভেসেলে এলএনজি খালাস দিয়ে ফিরে যাবে। পরে এ গ্যাসযুক্ত হবে জাতীয় গ্রিডে। চট্টগ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই তীব্র গ্যাস সঙ্কট। গ্যাসের অভাবে নতুন শিল্পায়ন যেমন ব্যাহত হচ্ছে, তেমনিভাবে গড়ে ওঠা অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান উৎপাদনে যেতে পারছে না। এরমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদনহীন থেকে গুণছে ব্যাংক ঋণের সুদ। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অনেক দাবি সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছিল না। কারণ, দেশে গ্যাসের মজুদ পর্যাপ্ত নয়। এ অবস্থায় বর্তমান সরকার গ্যাস সঙ্কট নিরসনে এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেয়। মহেশখালীর মাতারবাড়িতে তৈরি হয় এলএনজি টার্মিনাল। সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন স্থাপনের কাজও সম্পন্ন হয়ে গেছে। ফলে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা দেখছেন আশার আলো। দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হতে অপেক্ষার সময় আর বেশি নয়। চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়ে গেলে চট্টগ্রামে শিল্পক্ষেত্রে গ্যাসের অভাব অনেকটাই দূর হবে। গ্যাস স্ট্যাগারিংয়ে কবল থেকে রক্ষা পাবে চট্টগ্রামবাসী নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন এবং স্থাপিত কারখানাগুলোর উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে হিমশিম অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য গ্যাসের দাবি দীর্ঘদিনের। সরকারের এই প্রকল্প গ্রহণ এবং সফল বাস্তবায়ন দেশে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অগ্রযাত্রার সূচনা করবে।
×