ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৩২ ধারা বহাল রেখে সংসদে ডিজিটাল বিল উত্থাপন

প্রকাশিত: ০৮:২৬, ১০ এপ্রিল ২০১৮

৩২ ধারা বহাল রেখে সংসদে ডিজিটাল বিল উত্থাপন

সংসদ রিপোর্টার ॥ বহুল আলোচিত ৩২ ধারা বহাল রেখে জাতীয় সংসদে ’ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ উত্থাপন করা হয়েছে। উত্থাপিত বিলে ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য কাঠামোতে বারবার অনুপ্রবেশ করলে যাবজ্জীবন কারাদ- ও পাঁচ কোটি টাকা অর্থদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। আইনে যেকোন ধরনের ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি দিয়ে সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোন সংস্থার তথ্য-উপাত্ত, ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করা বা করতে সহায়তা করাকে গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। এ জন্য ১৪ বছর কারাদ- ও ২৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করার বিধান রাখা হয়েছে। সোমবার রাতে বহুল আলোচিত ’ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল-২০১৮’ উত্থাপন করেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম বিলটি উত্থাপনের বিরোধিতা করলেও কণ্ঠভোটে তা নাকচ হয়ে যায়। পরে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট প্রদানের জন্য তা সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। বিলের বিধান অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রোপাগা-া ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ দেন তাহলে ওই ব্যক্তি অনধিক ১৪ বছরের কারাদ- বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আবার যদি কোন ব্যক্তি একই অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটিত করেন তাহলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদ-ে বা অনধিক তিন কোটি টাকা অর্থদ-ে বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন। উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারি খসড়া আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। ব্যাপক সমালোচিত ৫৭ ধারাসহ কয়েকটি ধারা তথ্য প্রযুক্তি আইন থেকে সরিয়ে সেগুলো আরও বিশদ আকারে যুক্ত করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। বিলে আলোচিত ৩২ ধারা সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি বেআইনী প্রবেশের মাধ্যমে কোন সরকারী, আধাসরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোন সংস্থার কোন ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওযার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করিতে সহায়তা করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ। বিলে এ ধরনের অপরাধের শাস্তির বিধানে বলা হয়েছে, এ ধরনের অপরাধের অনধিক ১৪ বছরের কারাদ- বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আরও বলা হয়েছে, উল্লেখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনধিক এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উত্থাপিত বিলে জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়েছে। ১১ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন প্রধানমন্ত্রী। সদস্য হিসেবে থাকবেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইজিপি, বিটিআরসি চেয়ারম্যান ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদফতরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক। আর সদস্য সচিব থাকবেন জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিলের মহাপরিচালক। এছাড়া বিলে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি বিলে সর্বক্ষণিক দায়িত্ব পালনের জন্য এজেন্সির অধীনে একটি জাতীয় কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম গঠন করা হবে। বিলে ডিজিটাল ফরেনসিক ল্যাব স্থানেরও বিধান রাখা হয়েছে। বিলে পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর সাইবার সন্ত্রাসী কাজের জন্য ১৪ বছর কারাদ-ের বিধান করা হয়েছে। একই অপরাধ যদি দ্বিতীয়বার করা হয় তাহলে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার ইত্যাদির জন্য ৩ বছর কারাদ- ও ৫ লাখ টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-িত হবেন এমন বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে ৫ বছর কারাদ- দেয়া হবে। হ্যাকিং অপরাদের জন্য ১৪ বছর কারাদ- বা এক কোটি টাকা অর্থদ-র বিদান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ দ্বিবতীয়বার করা হলে যাবজ্জীবন বা ৫ কোটি টাকা অর্থদ- দেয়া যাবে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ও নিরাপদ ব্যববহার আবশ্যক বর্তমান বিশ্বে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল ভোগের পাশাপাশি অপপ্রয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাইবার অপরাধের মাত্রাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও ডিজিটাল অপরাধসমূহের প্রতিকার, প্রতিরোধ, দমন, শনাক্তকরণ, তদন্ত এবং বিচারের উদ্দেশে এ আইন প্রণয়ন অপরিহার্য। সাইবার তথা ডিজিটাল অপরাধের কবল থেকে রাষ্ট্র এবং জনগণের জানমাল ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধান এ আইনের অন্যতম লক্ষ্য। বিলে আরও বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নকে প্রকারান্তরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার পুনর্জাগরণ বলা যেতে পারে। এই মহান স্বপ্নদ্রষ্টার সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারই যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ অন্যতম সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
×