ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় বাহিনীর তিন শ’ কর্মকর্তাসহ ১৫ হাজার সেনা অংশ নিচ্ছে ॥ চলবে ১১ থেকে ২১ এপ্রিল

বিশাল বিমান মহড়ার প্রস্তুতি ॥ চীন-পাকিস্তানের হুমকি মোকাবেলা লক্ষ্য

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৮

বিশাল বিমান মহড়ার প্রস্তুতি ॥ চীন-পাকিস্তানের হুমকি মোকাবেলা লক্ষ্য

দুটি ফ্রন্টে চীন ও পাকিস্তানের অব্যাহত হুমকি মোকাবেলায় পুরো দেশজুড়ে এক বিশাল বিমান মহড়ার আয়োজন করেছে ভারত। দেশটির উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তসহ গভীর সমুদ্রসীমায় বিমানবাহিনীর ৩শ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ হাজার সেনা এতে অংশ নেবে। ভারতীয় বিমানবাহিনী দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লীতে এক অনুষ্ঠানের আগে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান বিমানবাহিনী প্রধান বি এস ধোনা।Ñ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। চীন ও পাকিস্তানের হুমকি মোকাবেলায় ১১ থেকে ২১ এপ্রিল ভারতীয় বিমানবাহিনী (আইএএফ) গগন শক্তি নামে এ মহড়ার পরিকল্পনা করছে। দেশটির উত্তর ও পশ্চিম সীমান্তসহ গভীর সমুদ্রসীমায় দুটি ভাগে এই মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এতে বিমানবাহিনীর ৩শ কর্মকর্তাসহ অন্তত ১৫ হাজার সেনা এবং ১১শ বিমান প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার আক্রমণের মহড়া চালাবে। ভারতীয় বিমানবাহিনী দিবসে বাহিনী প্রধান বি এস ধোনা আরও বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের সঙ্গে লড়াই করছি। বিমানবাহিনীর একটি সূত্র জানায়, গগন শক্তি মহড়ার প্রথম ধাপ পশ্চিম সীমান্তে দ্বিতীয় ধাপ উত্তর সীমান্তে অনুষ্ঠিত হবে। এমনিতেই ভারতীয় বিমানবাহিনী দুর্ঘটনার সঙ্গে লড়াই করছে। দেশটির বিমানবাহিনীতে ৪২টি স্কোয়াড্রনের অনুমোদন থাকলেও বাস্তবে আছে মাত্র ৩১ স্কোয়াড্রন। প্রয়োজনের সময় চীন ও পাকিস্তানকে মোকাবেলায় বিদ্যমান দুর্বলতা অতিক্রম করতে ভারতীয় বিমানবাহিনী ঢেউ অপারেশন নামের এক ধরনের মহড়ার অনুশীলন করছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সীমিত সংখ্যক বিমান ও সুবিধাদি দিয়ে সর্বোচ্চ আক্রমণ পরিচালনা করার জন্য তৈরি হবে। ঢেউ অপারেশন জাতীয় মহড়ার মাধ্যমে ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রথমবারের মতো এ জাতীয় মহড়ার অভিজ্ঞতা পেল। তবে ইতোমধ্যে তাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান এ জাতীয় প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। আইএএফের একটি সূত্র জানায়, এখন থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর গগন শক্তি মহড়ার আয়োজন করবে ভারতীয় বিমানবাহিনী। মহড়ায় এবারই প্রথমবারের মতো ভারতে তৈরি তেজাস যুদ্ধবিমান অংশ নেবে। ২০১৬ সালে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে এক স্কোয়াড্রন তেজাস যুদ্ধবিমান সংযুক্ত হয়। তবে বিমানবাহিনীর অন্য একটি সূত্র জানায়, মহড়া চলাকালে ধারণার চেয়েও বেশি যুদ্ধবিমান পাওয়া যাবে। ধারাসু এবং পিথোরগড়ের পাহাড়ী এলাকায় শত্রুদের আগ্রাসনের জবাবে এক উপত্যকা থেকে অন্য উপত্যকায় দ্রুত সেনা পরিবহন এবং তড়িৎ অতিরিক্ত সেনা পাঠানোর জন্যই এই মহড়ার আয়োজন। আইএএফের সূত্র জানিয়েছে, এই মহড়ায় ভারতীয় বিমানবাহিনী তাদের বহরের প্রায় সব যুদ্ধবিমান ও হেলিকপ্টারসহ এতে স্থলভিত্তিক সরঞ্জামগুলোও ব্যবহার করবে। যুদ্ধ মহড়ায় দ্রুত সেনা পরিবহনের জন্য এমআই-১৭ভি৫ হেলিকপ্টার এবং সি-১৩০জে সুপার হারকিউলিস বিশেষ অপারেশনাল বিমান ব্যবহার করা হবে। এই বিমানগুলো খুব ছোট রানওয়েতেও উঠানামা করতে পারে। সূত্র জানায়, ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই মহড়াটি সামরিক বাহিনীকে আরও ভালভাবে প্রস্তুত করে তুলবে। মহড়ার সময় বিমানবাহিনী অন্যান্য কিছু কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করবে। সু-৩০এমকেআই জঙ্গী বিমানসহ বহরের বাকি বিমানগুলো নতুন অত্যাধুনিক ল্যান্ডিং গ্রাউন্ডে অবতরণ করানো হবে। অরুণাচল প্রদেশসহ উত্তরপূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে নতুন এই ল্যান্ডিং গ্রাউণ্ডগুলো তৈরি করা হয়েছে। মহড়ায় বিমানবাহিনীর স্পেশাল ফোর্সেস গার্ডরা শত্রু সীমানার কাছে স্যাবোটাজ অপারেশান পরিচালনা করবে। একই সঙ্গে নিজেদের ঘাঁটিগুলোরও সুরক্ষা করবে তারা। বিমানবাহিনীর সূত্র জানিয়েছে, নেটওয়ার্ক কেন্দ্রিক পরিবেশে ব্যবহারের জন্য নতুন যে সব সরঞ্জাম পেয়েছে বিমানবাহিনী, সেগুলো মহড়ার সময় ব্যবহার করা হবে, যাতে করে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সঙ্গে সর্বোচ্চ পর্যায়ে সামঞ্জস্য বজায় রাখা যায়। মহড়ার জন্য এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হবে যেন সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে জরুরী ভিত্তিতে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন তৈরি হয়েছে।
×