ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এবার প্রাইমারীতে বৃত্তি পেল ৮২ হাজার ৪৭৩ জন

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ৪ এপ্রিল ২০১৮

এবার প্রাইমারীতে বৃত্তি পেল ৮২ হাজার ৪৭৩ জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাথমিকে বৃত্তি পেল ৮২ হাজার ৪৭৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেধা কোটায় ৩২ হাজার ৯৯৮ এবং সাধারণ কোটায় বৃত্তি পেয়েছে ৪৯ হাজার ৪৭৫ জন। এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় এবার থেকেই আর বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকছে না। এমসিকিউ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগসহ এ ধরনের প্রশ্ন নিয়ে নানা মহলের আপত্তির মুখে এ ঘোষণা দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান তাদের সিদ্ধান্তকে ‘বিপ্লবাত্মক’ বলে মন্তব্য করেছেন। এবারের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার ভিত্তিতে বৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ উপলক্ষে মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামালসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী জানান, প্রাথমিকে মোট বৃত্তি পেয়েছে ৮২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মেধা কোটায় ৩৩ হাজার। আর সাধারণ কোটায় ৪৯ হাজার ৫০০ জন। কিন্তু এবার মেধা কোটায় ২ জন এবং সাধারণ কোটায় ২৫ জন কাক্সিক্ষত শিক্ষার্থী বৃত্তির জন্য পাওয়া যায়নি। পরে এগুলো সমন্বয় করা হবে। মন্ত্রী বলেন, বৃত্তিপ্রাপ্তদের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃত্তির অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। আগে মেধা কোটায় বৃত্তি দেয়া হতো ২০০ টাকা। ২০১৫ সাল থেকে তা ৩০০ টাকা দেয়া হয়। আর সাধারণ কোটায় ১৫০ টাকার পরিবর্তে ২০১৫ সাল থেকে দেয়া হয় ২২৫ টাকা। বৃত্তিপ্রাপ্তদের তালিকা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে িি.িফঢ়ব.মড়া.নফ পাওয়া যাচ্ছে। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উপজেলায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যার অনুপাতে সমান সংখ্যক ছাত্র ও ছাত্রীকে এ বৃত্তি বণ্টন করা হয়। সাধারণ কোটায় বৃত্তির সংখ্যা ৪৯ হাজার ৫০০। সেই হিসেবে মোট ৭ হাজার ৯৭০ ইউনিয়ন/পৌরসভার ওয়ার্ডে প্রতিটিতে ৬টি (৩ জন ছাত্র ও ৩ জন ছাত্রী ) সাধারণ বৃত্তি হিসেবে ৪৭ হাজার ৮২০টি সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। অবশিষ্ট এক হাজার ৬৮০টি বৃত্তি হতে প্রতিটি উপজেলা/থানা হতে আরও ৩টি (১ জন ছাত্র, ১ জন ছাত্রী ও ১ জন উপজেলা মেধার ভিত্তিতে) করে ৫০৯টি উপজেলা/থানায় মোট এক হাজার ৫২৭টি সাধারণ বৃত্তি দেয়া হয়েছে। বাকি ১৫৩টি সাধারণ বৃত্তি হতে প্রতিটি জেলায় আরও ২টি (১ জন ছাত্র ও ১ জন ছাত্রী) করে ৬৪টি জেলায় আরও ১২৮টি বৃত্তি বণ্টন করা হয়েছে। ঝরেপড়া রোধ, শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি, শিক্ষার্থীদের মেধার স্বীকৃতিস্বরূপ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ভাল ফলের ভিত্তিতে বৃত্তি প্রদান করা হয়। আগে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেয়ার জন্য আলাদা পরীক্ষা নেয়া হতো। ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে উপজেলা/ওয়ার্ড ভিত্তিক বৃত্তি দেয়া হচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণীতে বৃত্তি পেলে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম এই তিন শ্রেণী পর্যন্ত বৃত্তির টাকা ছাড়াও বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ পাবে। বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি নেয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাথমিক সমাপনীতে বাদ এমসিকিউ ॥ চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা থেকেই এমসিকিউ বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রণালয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী বলেন, এ সিদ্ধান্ত বিপ্লবাত্মক। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি। এমসিকিউর বদলে সব প্রশ্নই হবে যোগ্যতাভিত্তিক। প্রাথমিকে এই যোগ্যতাভিত্তিক প্রশ্নকেই বলা হয় কাঠামোবদ্ধ প্রশ্ন বা সৃজনশীল প্রশ্ন। মন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগগুলো বন্ধ করার জন্য ইতোমধ্যে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় কিছু কিছু বিষয় প্রয়োগ করা হয়েছে। আমরা চাইছি, কায়দা করে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করা যায় কি না। বছরের তিস চলে যাওয়ার পর কেন সিদ্ধান্ত? এমন প্রশ্নে মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন এপ্রিল মাস। পরীক্ষা হবে নবেম্বরে। এখনও বহু দেরি। বাংলাদেশে যত বিপ্লব, আন্দোলন ও সংগ্রাম হয়েছে, তা এক-দুই মাসের মধ্যেই শেষ হয়েছে। আমাদের প্রস্তুতি হলো টিকচিহ্ন (এমসিকিউ) না নিয়ে পরীক্ষা নেয়া। বিদ্যালয়গুলোকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি শিক্ষকদের পাঠ্যসূচী অনুসারে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর জন্য আহ্বান জানান। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন নিয়মে প্রশ্নের কাঠামো এবং নম্বর বণ্টন কেমন হবে, তা শীঘ্রই জানিয়ে দেয়া হবে। গত বছর প্রাথমিক সমাপনী পারীক্ষার প্রায় সব বিষয়ের প্রশ্ন পরীক্ষার আগের রাতে বা পরীক্ষার দিন সকালে ফাঁস হয়ে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জেএসসি-জেডিসি এবং এ বছরের এসএসসি পারীক্ষাতেও। প্রশ্নফাঁস মহামারীর আকার ধারণ করায় প্রশ্ন পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পরীক্ষার ঘণ্টাখানেক আগে প্রশ্নফাঁস হলে সেখান থেকে সহজেই বহু নির্বাচনী অংশের উত্তর দেয়ার সুযোগ থাকে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিও প্রাথমিক স্তরের পরীক্ষায় এমসিকিউ বাদ দেয়ার সুপারিশ করে।
×