ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সিলেটে মাকে গলা কেটে, ছেলেকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২ এপ্রিল ২০১৮

সিলেটে মাকে গলা কেটে, ছেলেকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ সিলেট নগরীর মিরাবাজার খারপাড়া এলাকায় মা ও ছেলে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হয়েছেন। রবিবার বেলা ১২টার দিকে মিতালি ১৫/এ নম্বরের তিন তলা বাড়ির নিচ তলা থেকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হচ্ছে- রোকেয়া বেগম (৪০) ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন (১৬)। রোকন ’১৭ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। রোকেয়াকে গলা কেটে এবং ছেলে রোকনকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। বাড়ির ভেতরে রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছরের মেয়ে রাইসার কান্না এবং পচা গন্ধ পেয়ে আশপাশের লোকজন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। জানা গেছে, নিহত রোকেয়ার সিলেট শহরে একটি বিউটি পার্লার আছে। তার স্বামী হেলাল আহমদ দীর্ঘদিন ধরে প্যারালাইজড। থাকেন নগরীর বারুতখানা এলাকার ভাইয়ের বাসায়। রোকেয়া বেগমের ভাই জাকির হোসেন জানান, রোকেয়া বেগম মিরাবাজারের মিতালী আবাসিক এলাকার ১৫/জে নম্বর বাসাতে গত একবছর ধরে ভাড়া থাকেন। স্বামীর সঙ্গে মিল ছিল না বলে সন্তানদের নিয়ে এই ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন তিনি। তিনি আরও জানান, মাস খানেক আগে থেকেই রোকেয়া তাকে জানিয়েছিলেন যে, এই বাসায় তার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হচ্ছে। এই বাসা বদলানো লাগবে। রোকেয়ার স্বামী জগন্নাথপুর উপজেলার হেলাল আহমদের সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। তাই তিনি ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা থাকতেন। আর গত রমজান মাসে হেলাল আহমদ স্ট্রোক করার পর তার পরিবারের সঙ্গে বারুতখানার একটি বাসায় থাকেন। গত শুক্রবার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে রোকেয়া বেগমের সর্বশেষ যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। রবিবার সকালে তাদের খোঁজ নিতে মিরাবাজারের বাসায় আসেন জাকির হোসেন। বাসায় এসে ভেতর থেকে তিনি তাদের দরজা বন্ধ দেখতে পান। অনেকক্ষণ ডাকাডাকির পরও কেউ দরজা না খোলায় তিনি বাড়ির মালিককে খবর দেন। বাড়ির মালিক ঘটনা শুনে পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে ঘরে প্রবেশ করে তাদের লাশ উদ্ধার করে। এ সময় ঘরের মধ্যে ক্রন্দনরত অবস্থায় পাঁচ বছর বয়সী মেয়েকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে, কাজের মেয়েকে বাসায় পাওয়া যায়নি। বাসার মালিক সালমান হোসেন জানান, পরিবারটি তার বাসায় গত এক বছর ধরে বসবাস করছে। রবিবার সকালে নিহত মহিলার ভাই জাকির হোসেন বোনের খোঁজ নিতে এসে ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে বিষয়টি তাকে জানান। এরপর তিনি বিষয়টি ওয়ার্ড কাউন্সিলর দিনার খান হাসুকে অবহিত করেন। বেলা ১১টার দিকে হাসু এ খবর জানান পুলিশকে। এরপর পুলিশ ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বাসা খুলে ভেতরে মা-ছেলের লাশ দেখতে পায়। এ সময় শিশু রাইসাকে উদ্ধার করা হয়। এদিকে পুলিশ মৃত রোকেয়ার বাসা থেকে তার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি জব্দ করেছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানিয়েছেন, মা-ছেলেকে ব্যবসায়িক কিংবা পূর্ব শত্রুতার কারণে হত্যা করা হয়েছে। তাদের ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ এরই মধ্যে হত্যার কিছু উৎস পেয়েছে। এসব বিচার-বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, উদ্ধার করা শিশুটিকেও হত্যার চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সে সময় অজ্ঞান হয়ে পড়ায় হত্যাকারীরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে যায়। তিনি বলেন, হত্যাকারীরা অনেক সময় নিয়ে এ হত্যাকা- ঘটিয়েছে। যে কারণে কেউ বিষয়টি টের পায়নি। তিনি আরও জানান, শুক্রবার রাতেই এ হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন। তিনি জানান, মহিলার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দিতে।
×