ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস

ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৫ মার্চ ২০১৮

ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের কার্যকারিতা সম্পর্কে অবগত নন দেশের প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষ। অথচ এই আইনের আওতায় অভিযোগ করা হলে সাধারণত তা সাত দিনেই নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে বিক্রেতাকে জরিমানা করা হলে সেই অর্থের আবার ২৫ শতাংশ নগদ সহায়তা হিসেবে দেয়া হয় অভিযোগকারী ভোক্তাকে। বিদ্যমান এই আইনটি কার্যকর করতে হলে, জনসচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের। আজ ১৫ মার্চ, অন্যান্য দেশের মতো বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস পালিত হবে বাংলাদেশেও। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। এদিকে, দিবসটি উপলক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও কনজ্যুমার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) উদ্যোগে সকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হবে। এছাড়া রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ডিজিটাল বাজার ব্যবস্থাপনায় অধিকতর স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়া বেসরকারী পর্যায়েও ভোক্তা অধিকার নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হবে ঢাকাসহ সারাদেশে। জানা গেছে, বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস সামনে রেখে এবার সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে জনসচেতনতা বাড়ানোর ওপর। কারণ দেশের বেশিরভাগ মানুষ এই আইনটি সম্পর্কে অবগত নন। আর এতে করেই প্রতিনিয়ত ঠকছেন ভোক্তারা। আর এই সুযোগে গড়ে উঠছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। ওজনে কম দেয়ার পাশাপাশি পণ্যের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ভেজালযুক্ত খাবার। সেবা পেতে ভোক্তাদের পকেট শূন্য হলেও কাক্সিক্ষত সেবা তারা পাচ্ছেন না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশের বেশির ভাগ মানুষ এ আইন বা এর কার্যকারিতা সম্পর্কে জানেই না। যারা জানে তাদেরও বড় অংশ মনে করে, অভিযোগ করে লাভ নেই। ভোক্তা অধিকার আইন বিষয়ে নাগরিক সমাজের ধারণা ও সচেতনতা জানার জন্য কনজ্যুমারস ফোরামের (সিএফ) পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে ঢাকা নগরের ২৩টি এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ৪০৮ জনের ওপর একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপের ফলে দেখা যায়, এখনও দেশের ৩৬ দশমিক ২০ শতাংশ মানুষ জানে না দেশে ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণমূলক একটি আইন কার্যকর আছে। ৪৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ মানুষ জানে না ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারীভাবে একটি অধিদফতর স্থাপন করা হয়েছে। পণ্য ও সেবা গ্রহণ করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ মানুষ কোথাও কোন অভিযোগ করে না। ওই জরিপে অংশ নেয়া নাগরিকরা মনে করেন, ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে ভোক্তা অধিকার আন্দোলনে সম্পৃক্ত ও সচেতন করতে পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচার চালানো প্রয়োজন। একই সঙ্গে নাগরিকরা পাড়া-মহল্লায় ভোক্তা সংগঠন গড়ে তোলার করছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সম্প্রতি জনকণ্ঠকে বলেন, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করে এসব ক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে সরকার। তিনি বলেন, প্রচলিত বাণিজ্যের পাশাপাশি দেশে ই-বাণিজ্য বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ডিজিটাল প্রতারণার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের ভোক্তারাও ডিজিটাল সুবিধা ভোগ করছেন। ই-বাণিজ্যের জনপ্রিয়তা বেড়েই চলছে। এক্ষেত্রে যাতে ভোক্তা অধিকার বঞ্চিত না হন, সে জন্য সরকার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এদিকে, ‘সাংবাদিকতা বিকশিত হোক ভোক্তা স্বার্থ ও বিনিয়োগের জন্যে’ শীর্ষক স্লোগান সামনে রেখে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন ফর কনজ্যুমারস এ্যান্ড ইনভেস্টরস (বিজেএফসিআই) এবার বিশ্ব অধিকার দিবস পালন করছে। সংগঠনটির উদযাপন কমিটির সভাপতি পিয়ার বিশ্বাসের সভাপতিত্বে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বুধবার মানববন্ধন করা হয়েছে। ওই সময় সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল মোঃ এনামুল হক বাবুল, সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, উম্মুল উয়ারা সুইটি ও আবুল কালাম আজাদসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আজ এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য বিষয়ক উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীর উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিকে, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর থেকে পাওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০৯ সালে আইনটি কার্যকর হওয়ার পর ২০১০ সালে ওই আইনের আওতায় অধিদফতরে অভিযোগ এসেছিল মোট ৭৩টি। সবকটিই নিষ্পত্তি হয়েছে। পরের তিন বছর অভিযোগের হার ছিল আরও কম। তবে এরপর থেকে বছর বছর বাড়ছে অভিযোগ তথা মামলা। সেই সঙ্গে প্রতিকারও পাচ্ছেন ভোক্তারা। ২০১৪ সালে অভিযোগ জমা পড়ে ৫৩৭টি, সবকটিই নিষ্পত্তি হয়। ২০১৫ সালে ২২৫টি অভিযোগ জমা পড়ে, যার মধ্যে একটি ছাড়া সবই নিষ্পত্তি হয়। ২০১৬ সালে অভিযোগ পড়ে এক হাজার ৬২২টি, যার মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৬০৬টি। ২০১৭ সালের প্রথম দুই মাসে এক হাজার ৬৮২টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এ বছরও অভিযোগের পরিমাণ বাড়ছে। নিষ্পন্ন না হওয়া অভিযোগের মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অভিযোগ জমা দেয়ার পর অভিযোগকারী আর সাড়া দেননি। ফলে অভিযোগগুলো নথিভুক্ত করে রাখা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানান, মামলার সবকটিই ভোক্তার অনুকূলে গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ক্যাবের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ভোক্তা অধিকার নিশ্চত করতে হলে সবার আগে জোর দিতে হবে ব্যাপক জনসচেতনতা তৈরির ওপর। সারাদেশে ভোক্তার স্বার্থ সুরক্ষার বার্তা পৌঁছে দেয়াটা জরুরী। পাশাপাশি সুধীসমাজকেও উদ্যোগী হতে হবে। এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকেও। এছাড়া ভোক্তা অধিকার-সংক্রন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো বেশ দুর্বল। এগুলোকে আরও ভোক্তা-সহায়ক করতে হবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বিএসটিইআইকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। ভাক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, যেকোন ব্যক্তি যে, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হতে পারে, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্যক্রম সম্পর্কে মহাপরিচালক বা মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এই আইন অনুযায়ী, নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ওষুধ বা সেবা বিক্রয় করা এমনকি বিক্রয়ের প্রস্তাব করা, জেনে শুনে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এমন ভেজাল মিশ্রিত অথবা নকল পণ্য, সেবা অথবা ওষুধ বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করা অপরাধ। পণ্যের গায়ে পণ্যের উপাদান, বিক্রয় মূল্য, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, পণ্যের কার্যকারিতা ইত্যাদি না লিখে পণ্য উৎপাদকরা ভোক্তাকে ঠকাচ্ছে প্রতিনিয়ত যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম লস্কর জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে সব ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে তাদের আচরণের বিষয়ে সতর্কবার্তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কারণ কেউ অভিযোগ করলে শুধু জরিমানাই নয়, দোকান সিলগালা করে দিতেও পিছপা হচ্ছে না অধিদফতর। এজন্য ভোক্তাদের সাড়া দেয়া প্রয়োজন। যদিও এখন অনেকে স্বপ্রণোদিত হয়ে অধিদফতরে অভিযোগ করছে। ভোক্তারা এসব অভিযোগের প্রতিকারও পাচ্ছেন।
×