ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দেখলেন ও শুনলেন নির্যাতন বর্বরতার কাহিনী

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে দুই নোবেল বিজয়ী নারী নেত্রী

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে দুই নোবেল বিজয়ী নারী নেত্রী

মোয়াজ্জেমুল হক/ এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের চিহ্নসমূহ ঢাকা দিতে যে বুলডোজার অপারেশন চলছে তা সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সীমান্তের ওপারের সূত্রগুলো বলেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার পক্ষে ইতোমধ্যে মিয়ানমার সরকার ও সেনা জেনারেলদের ওপর অবরোধ এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের আওতায় আনার দাবিও উঠেছে। আর প্রত্যাবাসন শুরু হলে সে দেশে রোহিঙ্গাদের কোথায় রাখা হচ্ছে, তাদের জীবনের নিরাপত্তা কি এসব বিষয় নিয়ে বিদেশী সংস্থা ও কূটনৈতিকদের তা সরেজমিন পরিদর্শনের বিষয়টি জড়িত। এ অবস্থায় গত বছরের ২৫ আগস্টের রাতের পর থেকে পরিচালিত সেনা অভিযানে গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, গণহারে হত্যা ও গণকবর সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদির যে ক্ষতচিহ্ন রয়েছে তা নিয়ে মিয়ানমার সরকার বিব্রত। ফলে এখন চলছে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিতে বুলডোজার অপারেশন। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শনে রবিবার উখিয়ার বালুখালি ও কুতুপালং ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন নোবেল বিজয়ী দুই নারী নেত্রী। এরা হলেনÑ ইয়েমেনের তাওয়াক্কুল কারমান ও যুক্তরাজ্যের মেইরিড ম্যাগওয়ের। আরেকজন ইরানের শিরিন এবাদি আসবেন আজ সোমবার। কারমান ও ম্যাগওয়ের রবিবার দুপুরে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসার পর বিকেলে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে বালুখালি ও কুতুপালং আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। তারা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর কি ধরনের নির্যাতন ও বর্বরতা, ধর্ষণ, লুটপাট, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে তার কাহিনীও শোনেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকার নারী পক্ষ সংস্থার নেত্রী ও কর্মীরা এবং জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। শিরিন এবাদি আসার পর তিনিও আশ্রয় ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। এরপর গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তাদের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করবেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। রবিবার কারমান ও ম্যাগওয়ের গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেননি। শিরিন এবাদি আসার পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে কথা বলার কর্মসূচী রয়েছে। এদিকে, বাংলাদেশে আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গার মাঝে প্রত্যাবাসন প্রশ্নে তেমন কোন আগ্রহ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না। উল্টো অনুপ্রবেশই অব্যাহত রয়েছে। তুমব্রু সীমান্তের ওপারের শূন্যরেখা থেকে গত পাঁচদিনে তিন সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে। যার মধ্যে রবিবার ভোরে এসেছে প্রায় দেড় শ’। এরা উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও এপারে থাকা স্বজনদের বাড়িঘরে আশ্রয় নিয়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে গত ছয় মাস ধরে প্রতিদিন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের বিষয়টি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সীমান্তরক্ষী বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিকভাবে থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সময়েও রোহিঙ্গাদের কেন আসতে দেয়া হচ্ছে বা আসতে পারছে তা একটি প্রশ্নবোধক হয়ে আছে। অপরদিকে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি তুমব্রু সীমান্তের জিরো লাইন থেকে সাড়ে ছয় সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গাকে দু’দেশের সরকারী পর্যায়ের বৈঠকের পর ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি হিতে বিপরীত হয়েছে। তাদের রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে যেতে বাধ্য করা হবে এ ভয়ে ওরা এখন বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। বান্দরবান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বীকার করা হয়েছে, শূন্য রেখায় দুই সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা উধাও হয়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বান্দরবান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শফিউল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হোসেন ও নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ এসএম সরোয়ার কামাল। অভিযোগ উঠেছে, মিয়ানমার পক্ষ তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কথা বলেছে অফিসিয়ালি। কিন্তু আনঅফিসিয়ালি এদের প্রতি ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী, পুলিশ ও উগ্র মগ সন্ত্রাসীরা। ফলে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে তারা প্রতিদিন ঢুকছে।
×