ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুপ্রীয়া ভৌমিক

রাশিয়া থেকে বারেক কায়সার...

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

রাশিয়া থেকে বারেক কায়সার...

রাশিয়া থেকে দেশের বেশ কয়েকটি চ্যানেলে জানাচ্ছেন রাজনীতির সর্বশেষ তথ্য, লিখছেন দৈনিকে ক্রীড়াবিটে ‘রাশিয়ার বিশ্বকাপ প্রস্তুতি’ নিয়ে। এ যেন সাংবাদিকের পথচলা দীর্ঘায়ু হওয়া- সেরাদের সেরা হওয়ার মন্ত্র- বারেক হোসেন কায়সার। রাশিয়া সরকারের বৃত্তি নিয়ে মস্কোর গণমৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে পিএইচডি করছেন, এসএসসি করেছেন বরিশাল জেলার মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার উলানিয়া করোনেশন হাই স্কুল থেকে। এইচএসসি ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে অনার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় হয়েছেন। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায়। পাশাপাশি ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভের (ইউডা) যোগাযোগ ও গণমাধ্যম শিক্ষা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে বেশ কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। পড়াশোনা ও কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন- রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল খালেক সাংবাদিকতা বৃত্তি, আবু তাহের সাংবাদিকতা বৃত্তি, বিডি-পিকে মৈত্রী বৃত্তি, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার মিডিয়া ফেলোশিপ, সিআইপিআরবি মিডিয়া ফেলোশিপ, ওয়েভ ফাউন্ডেশন মিডিয়া ফেলোশিপসহ নানা বৃত্তি, পুরস্কার ও সম্মাননা। কায়সার আহমেদ ও রেবেকা সুলতানা দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি চতুর্থ। বাবা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। বড় আপা রোকেয়া খানম আলোর কাছে পড়াশোনার হাতেখড়ি হয়েছে। আর বড় ভাই মোঃ আরিফ হোসেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক, এই সহোদরই বারেকের আদর্শ। তাকে দেখেই স্বপ্ন দেখা শুরু করেছেন। নিজেই জানালেন সেই গল্প- তিনি তখন ১৩ বছরের কিশোর। গ্রামের কাদামাটি গায়ে লাগিয়ে বেড়ে উঠছিলেন। বড় ভাই তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। একবার বাড়ি গিয়ে ফেরার সময় সঙ্গে করে আমাকে নিয়ে এলেন ঢাকায়। উদ্দেশ্য ছিল, রাজধানীর নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়া! এই ধারাবাহিকতায় নটর ডেম কলেজের সামনে গিয়ে ভাইয়া জানালেন, এই কলেজে দেশসেরা মেধাবীরা পড়ে। তোমাকেও এখানে পড়তে হবে। সেই থেকে পণ করেছিলেন অন্য কোন কলেজে নয়, নটর ডেমেই পড়তে হবে। পরে নটর ডেমে পড়তে পেরে ভাল লেগেছে। এখানে পড়তে পারাটাই তাকে বদলে দিয়েছে। তখন থেকেই স্বপ্নরা ডানা মেলতে শুরু করে। সামনের দিনগুলোতে ‘নিউ মিডিয়া’ নিয়ে কাজ করতে চান। পিএইচডি শেষ করে দেশে ফিরতে চান তিনি। জীবনের বাকি সময়টা ব্যয় করতে চান মানুষের কল্যাণে। নিজের মেধাকে কাজে লাগাতে চান সোনার বাংলা গড়তে। গবেষণায় বেশ আগ্রহ রয়েছে এই গুণী মানুষটার। যোগাযোগ ও গণমাধ্যম নিয়ে নানামুখী গবেষণা করতে চান। আনন্দ পান লেখালেখি আর শিক্ষকতা করে। এসব নিয়েই কাটাতে চান সামনের সোনালি দিন। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময় থেকেই বরিশালের স্থানীয় দৈনিকে লিখতেন তিনি। ছোট চাচার উৎসাহ পেয়েই লেখালেখির প্রতি ভালবাসাটা জন্মে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে নিয়মিত লিখতেন। লেখালেখির ধারাবাহিকতায় করেছেন ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা। পড়াশোনায় সাফল্যের রহস্য নিয়ে হেসে জানালেন, ক্লাস কখনও মিস দিয়েছেন বলে মনে পড়ছে না। বলা যায়, নিয়মিত ক্লাস করেছেন। সব কোর্সের আলাদা খাতা ছিল। হলে ফিরে প্রতিদিন লেকচার খাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নিতেম। ইন্টারনেট আর লাইব্রেরি ওয়ার্ক করতেন সব টপিকস নিয়েই। নিজের হাতে নোট করতেন। নিজের ভাষায় সহজ করে লিখতেন সব কিছুই। এসব কারণেই হয়ত অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা হতো তার খাতা। রাশিয়ায় বৃত্তি পেতে কিছু পরামর্শ দিলেন তিনি, রাশিয়ায় বৃত্তি পেতে হলে যোগাযোগ করতে হবে ধানম-ির রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারের এডুকেশন বিভাগে। পড়াশোনার মাধ্যম রাশিয়ান ও ইংরেজী। প্রতিবছর জানুয়ারিতে রাশিয়ায় বৃত্তি নিয়ে পড়ার বিজ্ঞপ্তি দেয় জাতীয় পত্রিকায়। খোঁজখবর রাখতে পারেন। বৃত্তি নিয়ে পড়লে পড়াশোনায় কোন খরচ হয় না। উল্টো হাত খরচের জন্য যেই টাকা প্রদান করে সেটাতে একজন ছাত্রের ভালভাবেই চলে যায়। তবে নিজের টাকায় পড়তে হলে বছরে ৩-৪ হাজার ডলার খরচ হয়। সেখানে বৃত্তি নিয়ে বিনামূল্যে পড়া যায়। তবে বৃত্তি ছাড়া রাশিয়াতে পড়তে এসে অনেকেই সমস্যায় পড়েন বলে জানালেন তিনি।
×