ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

যে ক’জন পাঠকের ;###;দেখা মেলে তারা ;###;আসেন চাকরির ;###;প্রস্তুতি নিতে

গ্রন্থাগারবিমুখ হয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণীরা

প্রকাশিত: ০৮:২১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

গ্রন্থাগারবিমুখ হয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আলোকিত মানুষ গড়ার অন্যতম কারিগর গ্রন্থাগার। একটা সময় স্কুল-কলেজ পড়ুয়া পাঠকদের পদচারণায় মুখর থাকত জ্ঞানের এ বাতিঘর। কিন্তু বর্তমানে গ্রন্থাগারবিমুখ হয়ে পড়ছে তরুণ-তরুণীরা। যে ক’জন পাঠকের দেখা মেলে তারা আসেন চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে। শিক্ষাবিদরা বলছেন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে লাইব্রেরির প্রতি মানুষের আকর্ষণ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। কিছু কিছু লাইব্রেরিতে তরুণ পাঠকের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। অধিকাংশই এসব লাইব্রেরিতে আসছেন চাকরির পড়াশোনা করতে। কিংবা শুধু খবরের কাগজ পড়তে। লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানান, সাধারণ পাঠক হিসেবে এখন চাকরিপ্রার্থীদের সংখ্যাই বেশি। তাই লাইব্রেরিতে চাকরি সংক্রান্ত বইয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। তবে আধুনিকায়নের ছোঁয়া না থাকায় লাইব্রেরির সেবা বাড়ানো যাচ্ছে না। লাইব্রেরি সংশ্লিষ্ট এবং শিক্ষাবিদরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে লাইব্রেরির বিকল্প নেই। তাই পাঠক আকৃষ্ট করতে লাইব্রেরিগুলো ঢেলে সাজাতে হবে। রাজশাহীতে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারী গ্রন্থাগারে বই রয়েছে ৮৩ হাজার ১০০টি। অন্যদিকে, সবচেয়ে প্রাচীন রাজশাহী সাধারণ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৪ সালে। শতাব্দী প্রাচীন এই গ্রন্থাগারে বই রয়েছে অন্তত ৩৬ হাজার। রাজশাহীতে সনদপ্রাপ্ত বেসরকারী লাইব্রেরির সংখ্যা ৫৮টি। শুধু শিক্ষানগরী রাজশাহীয় নয় দেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুরের লাইব্রেরিগুলোর চিত্রও মোটামুটি একইরকম। অধিকাংশ চেয়ারই থাকে ফাঁকা। দু’চারজন যাও আসেন, তাদের মূল আগ্রহ সংবাদপত্র। ক্লাসের ফাঁকে তরুণদের আড্ডার মূল অনুষঙ্গ এখন স্মার্ট ফোন আর ইন্টারনেট। তাই লাইব্রেরিগুলোকে আধুনিক করা আর পাঠাভ্যাস বাড়াতে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগের দাবিও উঠেছে। বড় লাইব্রেরি। কিন্তু অধিকাংশ চেয়ারই ফাঁকা। তারপরও খুব মনোযোগ দিয়ে স্মরণীয় বাণী পড়তে দেখা গেল এক খুদে শিক্ষার্থীকে। এই দৃশ্য মেহেরপুর সরকারী কলেজ লাইব্রেরিতে। এখানে চাকরি করেন শিশুটির বাবা। সেই সুবাদে মাঝেমধ্যেই সে এখানে আসে। মেহেরপুর সরকারী গ্রন্থাগারের দৃশ্যটা অন্যরকম। এখানে বড়রাও আছেন। আছে থরে থরে সাজানো শত শত বই। কিন্তু পাঠকের মূল আগ্রহের জায়গায় সংবাদপত্র। ক্লাশের ফাঁকে সহপাঠীদের সঙ্গে আড্ডায় মেহেরপুর সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। জ্ঞান অর্জনের জন্য লাইব্রেরি নয়, বরং তাদের অবসর কাটে মোবাইল ফোনে, ইন্টারনেটে। পরীক্ষায় ভাল ফলাফল আর ভাল চাকরিই যখন জীবনের লক্ষ্য তখন লাইব্রেরির চেয়ারগুলো ফাঁকা পড়ে থাকবে সেটিই যেন স্বাভাবিক। লেখক ও লাইব্রেরিয়ানরাও বলছেন, দিন দিন পাঠক কমছে। তবে তরুণদের গ্রন্থাগারমুখী করতে নানা উদ্যোগও আছে। পাড়া, মহল্লা, গ্রাম-গঞ্জ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই পড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনেরও পরামর্শ তাদের। শুধু পাঠ্যবই নয় বা শুধু পরীক্ষায় পাশ করার জন্য নয় বরং নিজেকে আলোকিত করতে সত্যিকারের জ্ঞানী হতে তরুণদের লাইব্রেরি মুখী করতে সরকার উদ্যোগী হবে এমন প্রত্যাশা সবার।
×