ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লা মেরিডিয়ানে নির্বাহী কমিটির বৈঠক ;###;দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হবে- কেউ বেইমানি করবেন না

খালেদার ৬ শর্ত ॥ নির্বাচনে যেতে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

খালেদার ৬ শর্ত ॥ নির্বাচনে যেতে

শরীফুল ইসলাম ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে দলের পক্ষ থেকে ছয়টি শর্ত দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। শর্তগুলো হচ্ছে- ভোটের আগে সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে, নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে হবে, জনগণকে ভোটকেন্দ্রে আসার মতো পরিবেশ তৈরি করতে হবে, ভোটের জন্য ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না এবং ভোটের সময় মোবাইল ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর খিলক্ষেতে লা মেরিডিয়ান হোটেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে এই ছয়টি শর্ত তুলে ধরেন। ৮ ফেব্রুয়ারির মামলার রায় সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার বেশি হলে জেল হবে। ৮ ফেব্রুয়ারির মামলার রায়কে সামনে রেখে আয়োজিত দলের নির্বাহী কমিটির এ সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, আমি যেখানেই থাকি না কেন আমি আপনাদের সঙ্গে আছি, তাই আপনাদের ভয় নেই। দল ভাঙ্গার ষড়যন্ত্র হবে তাই আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকবেন, দলের সঙ্গে কেউ বেইমানি করবেন না। আপনাদের নানা রকমভাবে ভয়ভীতি দেখাবার চেষ্টা করবে। একবার ক্ষমা করেছি। কিন্তু ক্ষমা বারবার করা যায় না। তাই দল ভাঙ্গার যত চেষ্টাই হোক কেউ ফাঁদে পা দেবেন না। যারা দলের প্রতি অনুগত থাকবেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। যারা থাকবেন না তাদের আর ক্ষমা করা হবে না। দলের জন্য যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের খবর আমি রাখি। দলের ইয়ং লিডারশিপ তৈরি হয়েছে। সামনে তাদের নিয়ে ভবিষ্যতের পথ তৈরি করে যাব। এ সময় তিনি জানতে চান আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবেন কিনা? জবাবে সবাই সমস্বরে হ্যাঁ বলেন। আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ নেই ॥ সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাভ নেই। আমাকে কোন ভয়ভীতি দেখিয়ে দমাতে পারেনি, পারবেও না। দলের নেতাকর্মী ও দেশের মানুষের সঙ্গে আছে। বিএনপির কোন ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী আছে। দেশের বাইরে যারা আছেন তারাও আছেন। কাজেই বিএনপির কোন ভয় নেই, ভয়টা আওয়ামী লীগের। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি ও ভারপ্রাপ্ত বিচারপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের আহ্বান ॥ খালেদা জিয়া বলেন, দলের নেতাকর্মীদের সরকারের অত্যাচার নির্যাতনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সাহস সঞ্চার করে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। গণতান্ত্রিক কর্মসূচীতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, আসুন সবাই এই দেশটাকে রক্ষা করি, ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনি। দেশে বিরাজমান সঙ্কট নিরসনে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। তারা জোর করে বিচার করতে চায় ॥ খালেদা জিয়া বলেন, সর্বোচ্চ আদালত বলছেন নি¤œ আদালত সরকারের কব্জায়। পত্রিকায় যা দেখছি তাতে বোঝা যাচ্ছে, সঠিক রায় দেয়ার সুযোগ নেই। সঠিক রায় দিলে কী পরিণতি হয়, তা তো দেখেছেন। তিনি বলেন, তারেক রহমানের রায় দেয়ার পর বিচারককে দেশ ছাড়তে হয়েছে। অপরাধ নেই তারপরও শাস্তি, সেখানে কিসের বিচার হবে। তারা জোর করে বিচার করতে চায়। খালেদা জিয়ার এ কথা বলার সময় উপস্থিত নির্বাহী কমিটির সদস্যরা স্লোগানে বলেন, ‘আমার নেত্রী আমার মা, বন্দী হতে দেব না, ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে যেতে দেব না।’ সরকার প্রশাসনকে দলীয় নেতাকর্মীর মতো ব্যবহার করছে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, সরকার প্রশাসনকে দলীয় নেতাকর্মীর মতো ব্যবহার করছে। তারা মনে করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া যাবে। কিন্তু প্রশাসন যদি একটু সুযোগ পায় তাহলে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কেননা তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, পুলিশকে বাধ্য করা হচ্ছে অন্যায় ও দলীয় কাজ করতে। জাতীয় ঐক্যের আহ্বান ॥ খালেদা জিয়া বলেন, গুম ও খুনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগে উঠবে, ২০ দল জেগে উঠবে। আমি সকল রাজনৈতিক দলকে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। আজ দেশের এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অনেক বেশি প্রয়োজন। আমরা কে কী পেলাম, সেটা বড় কথা নয়। আমাদের পাওয়া ওটাই হবে, যদি জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে দেশটাকে রক্ষা করতে পারি। ইনশাআল্লাহ দেশ জাগবে, জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠবে। সকলে মিলে আমরা সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ে তুলব। দেশ গড়ার জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন হবে। আজ যারা জুলুম-অত্যাচার করছে, তাদের সবাইকে মাফ করে দিয়েছি। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না, তাদেরও সঙ্গে নিতে আমরা কোন দ্বিধা করব না। যারা বেইমানি করেনি ক্ষমতায় গেলে মূল্যায়ন পাবেন ॥ খালেদা জিয়া দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আরও বলেন, যারা সকল আন্দোলন-সংগ্রামে ছিল, যারা কাজ করেছে, যারা দলের সঙ্গে বেইমানি করেনি দলে তাদের ভাল ভাল জায়গায় অবস্থান দেয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে অবশ্যই তারা মূল্যায়ন পাবেন। কিন্তু যারা বেইমানি করবে, এক পা এদিকে, আরেক পা ওদিকে রাখবেÑ তাদের কোন মূল্যায়নের জায়গা নেই। আমি বলতে চাই, বিপদ আসলে আসুক সকলে একসঙ্গে বিপদ মোকাবেলা করব। আর সুদিন আসলে একসঙ্গে সুন্দর করে দেশ গড়ব। দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। আমরা এখানে সভা করতে চাইনি। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে চেয়েছিলাম। বিএনপি সবচেয়ে বড় দল, কিন্তু কেন সেখানে সভা করতে দেয়া হলো না। তারপরও বলবেন দেশে গণতন্ত্র আছে? তিনি বলেন, ডিজিটাল আইনের নামে নতুন কালাকানুন করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা সত্য কথা বলে। সেই কথাগুলো যেন মানুষ জানতে না পারে তাই জনগণের অধিকার হরণ করতে নতুন আইন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারের সমালোচনা ॥ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারের সমালোচনা করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা বলছে নির্বাচন হবে ডিসেম্বরে। ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে এত আগে প্রচারের কারণ কী? তিনি বলেন, নৌকা এমন ডোবা ডুবছে, যে তোলার জন্য এত আগে ভোট চাইতে হচ্ছে? মানুষকে হাত তুলে ওয়াদা করাতে হচ্ছে। জোর করে হাত উঠানো যায়। কিন্তু তারা ভোট পাবে না। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সত্য কথা বলায় সরকার তাকে দেশের বাইরে যেতে এবং পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। নির্বাচনে যাব ॥ ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের সরকার আর এই সরকারের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আমরা তারপরও বলেছি নির্বাচনে যাব। কারণ আমাদের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত ক’দিনে ৪শ’ বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপিকে কেন এত ভয়? কারণ জনগণের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক। বিএনপিকে দুর্বল করতে পারলে তারা ভয়মুক্ত থাকে। দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন ॥ সরকারের উদ্দেশে খালেদা জিয়া বলেন, হিংসা-বিদ্বেষ ও হানাহানি বন্ধ করে দেশে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করুন। আমরা কখনও প্রতিহিংসা করব না। তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধরে নেয়া হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। তারা জানে বিএনপির সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে। তাই মানুষের কাছ থেকে বিএনপিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে পারলে সুবিধা। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে চায়। এটা কোন দেশে নেই। নিজস্ব দলীয় লোকদের প্রশাসনে বসানো হচ্ছে। তারা মনে করে নির্বাচনী বৈতরণী পার করতে সহযোগিতা করবে। কিন্তু তারা যদি একটু নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করার তাহলে কারও কোন কথা শুনবে না। কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেয়া হলো ॥ খালেদা জিয়া বলেন, কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেয়া হলো? এটা তো আমাদের দাবি ছিল না। আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের দাবি ছিল। তারা ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল। চট্টগ্রাম বন্দর অচল করে দিয়েছিল। তিনি বলেন, পুলিশও চায় নিরপেক্ষ গণতন্ত্র থাকুক। কিন্তু তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া। নির্দেশ পালন না করলে পরিণতি ভাল হবে না। দুর্নীতি মামলায় দুদকের আইনজীবীর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আজকের পিপিকে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সময়েও দেখেছি। এখনও আছে। তাকে দোষ দিব না। হয়ত তাকেও বাধ্য হয়ে এমনভাবে কথা বলতে বা স্বর উচ্চারণ করতে হয়। তারা হয়ত একটু জোরোশোরে কথা বলে নিজের পজিশন ঠিক রাখে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয় ॥ সরকারকে উদ্দেশ করে খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আল্লাহ দেখছেন। আল্লাহ হয়ত ছাড় দিচ্ছেন এখন। একসময় আল্লাহ রশিটা এমনভাবে টান দিবেন তখন আর সুযোগ পাবেন না। সময় থাকতে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নেন। কাজেই সময় থাকতে ভাল কাজ করুন। আসুন দেশের গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করি এক সঙ্গে। শহীদের রক্ত দিয়ে যে দেশ প্রতিষ্ঠা করেছি তাকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না। দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি চলছে ॥ খালেদা জিয়া বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি চলছে। জনগণকে ন্যায্যমূল্যে কিছু দেয়ার কথা সরকারভাবে না। তিনি বলেন, টকশোতে অনেকে সত্য কথা বলে। জনগণের অধিকার নিয়ে তারা কথা বলে। সে কথাগুলো যখন মানুষ শুনে সরকারের আর সহ্য হয় না। তাই নতুন নতুন আইন করা হচ্ছে। ২০১৪ সালে জনগণ ভোট কেন্দ্রেও যায়নি ॥ খালেদা জিয়া বলেন, দেশে আজ জনগণের ভোটে নির্বাচিত কোন সরকার নেই। ২০১৪ সালে জনগণ ভোট কেন্দ্রেও যায়নি। ভোট কেন্দ্রে পুলিশ আর কুকুর পাহারা দিয়েছিল। ভোটও মনে হয় তারাই দিয়েছিল। আমি জানি, পুলিশও দেশের নিরাপত্তা চায়। তারাও দেশের জনগণ। কিন্তু পুলিশকেও ভয় ভীতি দেখানো হয়। দলীয় স্বার্থে তাদের ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সংসদ ইয়েস স্যার টাইপের বলে দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, কী বিরোধী দল, কী সরকারী দল সবাই একই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই শেয়ার মার্কেটের দূরবস্থা ॥ খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অসলেই শেয়ার মার্কেটের দুরবস্থা হয়। তারা নিশ্চয় সে রকম কোন কারসাজি করে। এ সরকারের আমলে সরকারী-বেসরকারী টাকা লুপাট হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লুট ও ধ্বংসের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এটি নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট বের হলে, দেশের মানুষ জানতে পারত। আর জানলে সরকারেরই মুখ পোড়া যাবে। এর আগে দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশী ব্যাংকে জমা রাখতে শুনিনি। আর বিএনপির এমন কোন সামর্থ্য নেই যে সুইজ ব্যাংকে টাকা রাখবে। ক্ষমতাসীনরাই বিদেশে সেকোন্ডহোম বানিয়ে রাখছেন। পাসপোর্ট সঙ্গে থাকে তাদের। অনেকের ছেলে দেশের বাইরে। সব কিছু মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায় যে কোন দেশের কোন প্রতিষ্ঠান ও মানুষ ভাল নেই। সব প্রতিষ্ঠানই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। চাকরি পেতে ঘুষ লাগে ৫ লাখ টাকা ॥ খালেদা জিয়া বলেন, দেশে এখন চাকরি পেতে মিনিমাম ঘুষ হলো নাকি ৫ লাখ টাকা। ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ না হলে তো চাকরি হয় না। তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনের ভূত এখনও আছে। তাই মিথ্যা মামলা থেকে রেহায় পাচ্ছে না কেউ। মহিলারাও বাদ যাচ্ছে না। তারা কিছুই করে না তারপরও আজ বেশ কিছু নারী নেত্রী কারাগারে। আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম আওয়ামী লীগের নারীরা রাস্তায় শুয়ে থাকত, রান্না বান্না করত। কাপড়-চোপড় নিয়ে আসত রাস্তায় থাকার জন্য। আর আমাদের নারীরা তাদের মতো উচ্ছৃঙ্খল নয়। নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। এককভাবে নির্বাচন করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার আগে তারা বলত আওয়ামী লীগ আসলে নাকি হিন্দু সম্প্রদায় ভাল থাকবে। কিন্তু হিন্দুরা আমাদের অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগ হিন্দুদের জমি, ঘর বাড়ি কেড়ে নিচ্ছে। মন্দির ভেঙ্গে দিচ্ছে। এই হলো আওয়ামী লীগ। মুসলমান হলে বানিয়ে দেয় জঙ্গী। আর হিন্দদের মন্দির ভাঙ্গে। আজ আমাদের সঙ্গে সঙ্গে হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার। তাই তারা বলে, অনেক ভুল করেছি। আর নৌকার কাছে যাব না। নৌকা আমাদের সব কোড়ে নিচ্ছে। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। মানুষ গুম থেকে মুক্তি চায় ॥ খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ আজকে এ দুঃশাসন থোকে, গুম-খুন, অত্যাচার থেকে মুক্তি চায়। মানুষ পরিবর্তন চায়। সে পরিবর্তন অন্য কোনভাবে নয়। গণতন্ত্রের মাধ্যমে। সে জন্য আমরা বলছি ভোট। ভোট হয়ত হবে কিন্তু বিএনপিকে মাইনাস করতে চায় বর্তমান সরকার। তিনি বলেন, দেশের মানুষকে গুম-খুন থেকে রক্ষা করতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমার বেশি হলে জেল হবে : সন্ধ্যায় রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে খালেদা জিয়া বলেন, আমার বেশি হলে জেল হবে। এই সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীভক্ত আছেন, তাদেরও জেলে যেতে হয়েছে। তবে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের কিছুই করতে পারবে না। দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্যধারণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, আমি এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছি। বিএনপির রাজনীতি করতে গিয়ে আমার মা-বাবা, ভাই-বোন ও সন্তানকেও হারিয়েছি। কিন্তু রাজনীতি ছাড়িনি। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে দেশকে রক্ষা করা। ভয়-ভীতি, লোভ-লালসা যাই কিছু দেখাক না কেন, আপোস করা চলবে না। আমি আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকব। প্রশাসনের সঙ্গে কোন ধরনের বিরোধে না জড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তারা (প্রশাসনের কর্মকর্তারা) দেশের সেবক। তাদের বিরুদ্ধে না গিয়ে কাজ করতে হবে। বিপদের সময় ধৈর্যধারণ করে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। পবিত্র কোরান তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির বৈঠক শুরু হয় বেলা সোয়া ১১টায়। উদ্বোধনী পর্বে দিলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এছাড়া দলের পক্ষ থেকে শোকপ্রস্তাব উত্থাপন ও তা গৃহীত হয়। এরপর লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ধারণকৃত একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। তার পর খালেদা জিয়া বক্তব্য রাখেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ বৈঠক হয়েছিল ২০১২ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে। আর ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে চার মাস পর ৫৯২২ সদস্যের বর্তমান কমিটি করার পর শনিবারের নির্বাহী কমিটির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। পদাধিকার বলে বিএনপির ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও ১১টি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরাও নির্বাহী কমিটির সদস্য। এবারের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রায় ৪৫০ জন নেতা অংশ নেন। তবে আগেই গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় ক’জন সদস্য এতে যোগ দিতে পারেননি। উদ্বোধনী অধিবেশন শেষে স্বল্প সময়ের বিরতি দিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শুরু হলে নির্বাহী কমিটির ক’জন সদস্য বক্তব্য রাখেন। সবশেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সমাপনী বক্তব্য রাখেন। খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভায় মূল মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।
×