ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামীকালই চূড়ান্ত হচ্ছে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ৩০ জানুয়ারি ২০১৮

আগামীকালই চূড়ান্ত হচ্ছে পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন? রাজনীতির মাঠে এখন চলছে এ নিয়ে জোর আলোচনা। আলোচনায় বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নামই উচ্চারিত হচ্ছে সব মহলে। তবে রাজনীতিতে শেষ বলে কোন কথা নেই। আগামীকাল বুধবারই দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থিতা চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভা ডাকা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন গণভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ ও দলটির সংসদীয় বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। সোমবার দুপুরে দলের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে রাষ্ট্রপতি পদে মনোয়নপত্র দাখিল করতে হবে আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত, যাচাই-বাছাই ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রার্থিতা প্রত্যাহার আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ভোটগ্রহণ হবে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংবিধান অনুযায়ী শুধু সংসদ সদস্যরাই সংসদ অধিবেশনে ভোট দিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করবেন। এদিকে কে হচ্ছেন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে নানা ধরনের আলোচনা। নাম শোনা যাচ্ছে অনেকের। সবেচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছেন বর্তমান রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নাম। সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়াদের শেষ এবং নির্বাচনী বছরে আওয়ামী লীগ কোন ধরনের ঝুঁকি নিতে চায় না। এ কারণে বিশ্বস্ততা, জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সর্বোপরি যে কোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পারদর্শী বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকেই দ্বিতীয়বারের মতো রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচনের সম্ভাবনায় প্রবল। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে রাষ্ট্রপতির পদের জন্য অপর যে আওয়ামী লীগ নেতার নাম উচ্চারিত হচ্ছে, তিনি হচ্ছেন দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমানে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের নাম। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এবার বড় ধরনের কোন চমক আসবে কি না, এ বিষয়টি একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোন নেতা নিশ্চিত নন। দলের অনেক সিনিয়র নেতাও একই ধরনের মত প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যাঁর পক্ষে গ্রীন সিগন্যাল দেবেন, তিনিই হবেন দেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন উপলক্ষে গত ২৪ জানুয়ারি সংসদ সচিবালয়ে স্পীকারের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা। সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচন আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদ সদস্যদের ভোটে। আর প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাতে নির্বাচনী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৈঠক শেষে স্পীকার সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংসদ সরবরাহ করেছে। ওই তালিকায় ভোটার হিসেবে ৩৪৮ জন এমপির তালিকা দেয়া হয়েছে। দুইজন এমপির মৃত্যুর কারণে তালিকায় নেই। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল বাংলাদেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি শপথ নেন মাটি ও মানুষের নেতা হিসেবে পরিচিত এ্যাডভোকেট মোঃ আবদুল হামিদ। স্বাধীনতার পর থেকে ১৯ মেয়াদে এ পর্যন্ত ১৬ জন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই হিসাবে আবদুল হামিদ এই পদে সপ্তদশ ব্যক্তি। বাংলাদেশের আইনে এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদপূর্তির তারিখের আগের নব্বই থেকে ষাট দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৩ এপ্রিল। স্পীকার জানান, ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইনের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে- নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্ধারিত দিন, সময় ও স্থানে মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করবেন। প্রার্থী একজন হলে এবং পরীক্ষায় তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ বিবেচিত হলে কমিশন তাঁকে নির্বাচিত ঘোষণা করবে। তবে একাধিক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ হলে নির্বাচনের জন্য তাদের নাম ঘোষণা করবে ইসি। সংসদীয় গণতন্ত্র চালুর পর ১৯৯১ সালে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় একবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেন সংসদ সদস্যরা। পরে প্রতিবারই ক্ষমতাসীন দল মনোনীত প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে আসছেন। আইন অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তা ভোটের আয়োজন করবেন। নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম লিখে নিজের সই দিয়ে তা জমা দেবেন এমপিরা। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত থাকবে। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্তকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।
×