ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাব্বির যদি এরপর আর কোন ভুল করেন, তাহলে আজীবন নিষিদ্ধ হবেন আর তামিমকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে, তা তার প্রাপ্য, জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কণ্ঠে এমনই সুর

ফের অশোভন আচরণ করলে আজীবন নিষিদ্ধ

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩ জানুয়ারি ২০১৮

ফের অশোভন আচরণ করলে আজীবন নিষিদ্ধ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ জাতীয় ক্রিকেট লীগের শেষ রাউন্ড চলার সময় এক কিশোরকে পেটানোয় এবং আম্পায়ারদের সঙ্গে পরবর্তীতে অশোভন আচরণ করায় জাতীয় দলের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে বাদ হয়েছেন। ২০ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও ছয় মাস নিষিদ্ধ হয়েছেন সাব্বির রহমান রুম্মন আর পঞ্চম বিপিএল চলার সময় তামিম ইকবাল উইকেটের আচরণ নিয়ে কথা বলায় ৫ লাখ টাকা জরিমানা হয়েছে। সোমবার বছরের প্রথমদিনেই এই দুই ক্রিকেটার শাস্তি পেলেন। শাস্তি দিয়েই ক্রিকেটে নতুন বছর শুরু হলো। সাব্বির যদি এরপর আর কোন ভুল করেন, তাহলে আজীবন নিষিদ্ধ হবেন আর তামিমকে যে শাস্তি দেয়া হয়েছে, তা তামিমের প্রাপ্য শাস্তিই মিলেছে! জাতীয় দলের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কণ্ঠে এমনই সুর। সদ্য সমাপ্ত বিপিএলে আম্পায়ারের সঙ্গে অশোভন আচরণ করে শাস্তি পেতে হয়েছে সাব্বিরকে। গত আসরেও শাস্তি পেয়েছেন। নারী কেলেঙ্কারিতে যুক্ত হওয়াতেও শাস্তি হয়েছে। এবার জাতীয় ক্রিকেট লীগে এক কিশোরকে লাঞ্ছিত করেছেন। তাতে বড় শাস্তিই হলো। শুধু কিশোরকে লাঞ্ছিত করেছেন তাই-ই নয়, ম্যাচ রেফারি শওকাতুর রহমান চিনু তা জানতে চাইলে তিনি তাকে হুমকিধমকি দিতেও ছাড়েননি। ঘটনাটি ঘটিয়ে বিসিবির আচরণবিধির লঙ্ঘন করেছেন ২৬ বছর বয়সী সাব্বির। তিনি ম্যাচ চলাকালীন ড্রেসিংরুমের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ২১ ডিসেম্বর রাজশাহীর শহীদ কামরুজ্জামান স্টেডিয়ামে ১৯তম জাতীয় ক্রিকেট লীগের টায়ার-২ এর শেষ রাউন্ডের দ্বিতীয় দিনের ঘটনা এটি। গ্যালারি থেকে ১০ কি ১২ বছরের একটি ছেলে সাব্বির মাঠে নামার সময় ম্যাঁও বলেছিল মানে বিড়ালের মতো শব্দ করেছিল। ওই ছেলেটাকে সাব্বির মাঠ থেকে খেয়াল করেছে। ম্যাচের একপর্যায়ে সে অনফিল্ডের দুই আম্পায়ার গাজী আশরাফ সোহেল ও তানভির আহমেদের কাছে ১ ওভারের জন্য বাইরে যাবে বলে অনুমতি নেয়। আম্পায়ার ভেবেছিলেন হয়ত টয়লেটের জন্যই সে অনুমতি দিয়েছে। যা হোক তিনি মাঠ থেকে বের হয়ে ছেলেটাকে ‘বল বয়’কে দিয়ে ডেকে এনে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ দিকের সাইট স্ক্রীনের পেছনে নিয়ে তার কলার ধরে চার থেকে পাঁচটি থাপ্পড় মারেন। বিষয়টি জেনে অনফিল্ড আম্পায়ররা বের হয়ে মৌখিকভাবে তা ম্যাচ রেফারির কাছে অভিযোগ করেন। ঘটনার পরের দিন ম্যানেজার আকবর আমিন ও সাব্বিরকে চায়ের দাওয়াত দেন চিনু। বিকেল ৫টার আগেই ম্যানেজারকে নিয়ে ম্যাচ রেফারির কক্ষে প্রবেশ করেন সাব্বির। ঢুকেই বেশ রাগান্বিত স্বরে বলেন, আমাকে ডেকেছেন? আমার তাড়া আছে। এখনই বের হয়ে যাব। এর মধ্যে সেখানে অনফিল্ডের দুই আম্পায়ার হাজির হন ম্যাচ রেফারি তাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, আপনি মাঠের বাইরে আমারটা দেখার কে? সে উল্টো চার্জ করে বলে আপনারা জাতীয় দলের প্লেয়ারদের ধরার জন্য বসে থাকেন। আপনি জানেন এ ঘটনা উপরে গেলে আপনাদের অসুবিধা হবে। এটা নিয়ে রিপোর্ট করলে আপনাদের সবার অসুবিধা হবে। তার এমন হুমকিধমকি দেখে আম্পায়াররা স্তম্ভিত হয়ে যান। ম্যাচ চলার সময়ই ২২ ডিসেম্বর সাব্বিরের বিরুদ্ধে গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন ম্যাচ রেফারি শওকাতুর রহমান। এ প্রতিবেদন শৃঙ্খলা কমিটিতে গেছে। শৃঙ্খলা কমিটি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থাও নেয়। সোমবার সাব্বিরের অপরাধের শুনানি শেষে বিসিবি সভাপতি জানান, সর্বোচ্চ শাস্তিই জুটেছে এই ড্যাশিং ব্যাটসম্যানের ভাগ্যে। তবে আরও বড় শান্তি দিতে চেয়েছিলেন বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান শেখ সোহেল। সাব্বিরের অপরাধে বিসিবির ধারা অনুযায়ী এর চেয়ে বেশি দেয়ার সুযোগ ছিল না। তাই সে পথে হাঁটতে পারেননি। তবে সাব্বিরের নিজেকে শোধরানোর এটাই শেষ সুযোগ দিয়েছেন তারা। একই ধরনের অপরাধ আবার করলে তাকে আজীবন নিষিদ্ধই করা হবে বলে জানিয়েছেন বিসিবির শৃঙ্খলা কমিটির চেয়ারম্যান। শেখ সোহেল বলেন, ‘শুনানিতে সাব্বির অনেক স্যরিটরি বলেছে। কিন্তু আমরা শুনিনি। কারণ এমন কা আরও অনেকবার করেছে। ও কারও কথা পাত্তাই দিচ্ছে না। তাই আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই দিয়েছি। আরও বড় শাস্তি দিতে চেয়েছিলাম।’ সঙ্গে জানান, ‘আমরা সাব্বিরকে জানিয়ে দিয়েছি, এটাই শেষ সুযোগ আর একবার এমন কোন কা ঘটালে আজীবন নিষিদ্ধ হবে।’ তবে সাব্বিরের শাস্তির শেষ যে এখানেই তাও বলেননি পাপন। আগামী বোর্ড সভায় এ শাস্তির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি, ‘প্রস্তাবনা কী এসেছে তাই বলছি। এবারই তাকে শেষ সুযোগ দেয়া হচ্ছে। টাকার অঙ্ক কিন্তু অনেক। অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য সাসপেন্ড করার চিন্তাও করেছে (কমিটি)। আমরা বোর্ড মিটিংয়ে ফাইনাল করব।’ সাব্বিরকে শাস্তি দেয়ার সঙ্গে তামিমকেও শাস্তি দেয়া হয়েছে। তামিমকে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু শুধু তামিম নন, মাশরাফিও উইকেট নিয়ে নেতিবাচক কথা বলেছিলেন। তাহলে তামিমই কেন শাস্তির মধ্যে পড়েছেন? এমন প্রশ্নও উঠছে। টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন বলেছেন, ‘শাস্তিটা প্রয়োজন ছিল। সেজন্যই হয়েছে। দিন শেষে ভাল খেলতে হবে সেটাই আমাদের কাজ। বিসিবিতে এত লোক আছে, অভিযোগ থাকলে বিসিবিকে জানানোই ভাল মনে হয়। অনেক ডিপার্টমেন্ট আছে। সভাপতিকেও বলতে পারে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সেটা যখন আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে যায় তখন আমাদের ক্ষতির কারণ হতে পারে। তা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। কারণ ঢাকায় এর (মিরপুর) বাইরে কিন্তু আর ভেন্যু নেই। ঢাকার মাঠ বন্ধ হয়ে গেলে খেলা দেবেন কোথায় আপনি? জাতীয় খেলোয়াড়, ওরা হচ্ছে রোল মডেল। দেশের কাছে রোল মডেল। তাদের কোন বক্তব্য মানুষের কাছে খারাপ দেখাবে বা দেশকে ছোট করবে সেটা কোনভাবেই বিসিবি সেটা ছাড় দেবে না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনারা হয়ত জানেন দুটি ডিমেরিট পয়েন্টের ব্যাপার ছিল। আমরা যদি বলি যে গ্রাউন্ড খারাপ হয়ে গেছে, আইসিসিতে গেলে হয়তবা এই ভেন্যুই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা যাই-ই বলি দেশের ক্রিকেটের সম্মানটা রেখে কথা বলাটা যৌক্তিক হবে।’
×