ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ফিরে দেখা-২০১৭

রাজশাহীতে বছরজুড়ে আলোচনায় রাউধা ও জঙ্গী আস্তানা

প্রকাশিত: ০৬:৪০, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

রাজশাহীতে বছরজুড়ে আলোচনায় রাউধা ও জঙ্গী আস্তানা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নানা ঘটনা আর অঘটনের বছর ২০১৭ সালের শেষ সূর্য অস্তমিত হচ্ছে আজ রবিবার। কালের আবর্তে মিশে যাবে আরও একটি বছর। রাজশাহীতে এ বছর বড় ধরনের তেমন অঘটনের খবর না থাকলেও বছর জুড়ে যে কয়েকটি বিষয় আলোচনায় উঠে আসে তার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি জঙ্গী আস্তানার খোঁজ। কিছু প্রাণহানির খবরও আলোচনায় ছিল ২০১৭ সালে। রাজশাহীর একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পড়তে আসা মালদ্বীপের মডেল কন্যা রাউধা আথিফের মৃত্যুর ঘটনাও ছিল বছরজুড়েই আলোচনায়। স্বাভাবিক মৃত্যু, আত্মহত্যা না কি পরিকল্পিত হত্যাকা- তার সমাধান হয়নি এখনও। তদন্ত, পূনঃতদন্ত নিয়ে ঘুরপাক চলছে এখনও। গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠী সিরাত পারভীন মাহমুদ রাউধার লাশ নামিয়ে ফেলে। এরপর থেকেই আলোচনায় আসে এ হত্যাকা-ের রহস্য। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণের প্রচ্ছদে প্রকাশিত ছবির পাঁচ মডেলের সঙ্গে রাউধাও ছিলেন। তিনটি জঙ্গী আস্তানার খোঁজ রাজশাহীতে ॥ ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল গোদাগাড়ী উপজেলার বেনীপুরের একটি জঙ্গী আস্তানা খুঁজে পায় পুলিশ। দুইদিন ধরে অভিযান চলে সেখানে। ফসলের মাঠের ভেতর একটি বাড়িতে আস্তানা গেড়ে থাকা একদল ‘জঙ্গী’কে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেও রাজি হয়নি কেউ। এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সন্দেহভাজন জঙ্গীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিযানে যাওয়া সদস্যদের ওপর। এই হামলার ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। এতে দেখা গেছে, এক নারী ধারালো অস্ত্র হাতে কাউকে কোপাচ্ছেন। তার পাশে লুঙ্গি পরিহিত এক পুরুষের হাতে ছিল শাবল বা বল্লমজাতীয় অস্ত্র। এ সময় নিহত হন ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবদুল মতিন। এর পর পরই সন্দেহভাজন জঙ্গী পরিবারের এক সদস্য ‘আত্মঘাতী’ বিস্ফোরণ ঘটায়, এতে পাঁচজন নিহত হয়। এ সময় আরও একজন নারী মাঠে বসেছিলেন। পরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তার নাম সুমাইয়া খাতুন। তার দুই সন্তানকেও পুলিশ জীবিত উদ্ধার করে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে রাজশাহী অঞ্চলে ২০১৭ বড় তিনটি জঙ্গী অভিযানের ঘটনা ঘটে। সবকটি ঘটনায় ঘটেছে জনমানবহীন দুর্গম এলাকায়। সর্বশেষ ২৭ নবেম্বর চরআলাতুলি মধ্যচরের অবস্থানও জনমানবহীন নির্জন। এই চরে শুধুমাত্র একটি বাড়িই ছিল। দুর্গম ও নির্জন বাথান বাড়ি হওয়ায় সেটিকেই আস্তানা হিসেবে বেছে নেয় জঙ্গীরা। দুর্গম পদ্মার নির্জন চরের বাথান বাড়িতে গোলাগুলি ও বিষ্ফোরণের পর এ অস্তানা থেকে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরা সবাই ছিল জেএমবির সক্রিয় সদস্য। ২৮ নবেম্বর দুপুরে র‌্যাবের একটি দল বিষ্ফোরণে পুড়ে যাওয়া ছিন্নভিন্ন তিনজনের লাশ উদ্ধার করে ওই আস্তানা থেকে। এর আগে রাজশাহী অঞ্চলে সর্বশেষ জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানো হয় ১১ জুন রাজশাহীর তানোর উপজেলার নিভৃত গ্রাম পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ায়। সেখান থেকে ‘জঙ্গী’ সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়। নারী ও শিশুসহ আরও নয়জনকে হেফাজতে নেয়া হয় ওই বাড়ি থেকে। রাজশাহী অঞ্চল থেকেই গ্রেফতার করা হয় নব্য জেএমবির অন্যতম ক্যাডার সোহেল মাহফুজ ওরফে হাতকাটা মাহফুজকে। এসব ঘটনা ছিল বছরজুড়ে আলোচনায়।
×