ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারের সব অর্জনে কাঁটা প্রশ্ন ফাঁস

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭

সরকারের সব অর্জনে কাঁটা প্রশ্ন ফাঁস

বিভাষ বাড়ৈ ॥ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জোরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরপর দুই মেয়াদে জনমনে সবচেয়ে বেশি আশার সঞ্চার করেছিল শিক্ষা খাত। গত ৯ বছরে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের যে কোন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চেয়ে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতর শিক্ষাক্ষেত্রে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হয়েছে চলতি বছরেই। আছে আরও বহু অর্জন। তবে শিক্ষার অর্জন আজ ম্লান হতে চলেছে প্রশ্ন ফাঁসের কারণে। বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ পরীক্ষাতেই উঠেছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ। বছরের শেষ পর্যায়ে প্রাথমিক স্তরের শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস শিক্ষার অর্জনকে ফেলে দিয়েছে প্রশ্নের মুখে। শিক্ষাবিদরা সরকারের সকল স্তরে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস বন্ধে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিয়ে বলছেন, শিক্ষায় অর্জন আছে অনেক। কিন্তু সবকিছু নষ্ট করছে প্রশ্ন ফাঁসের দুষ্টচক্র। প্রথম শ্রেণী থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা কোন কিছুই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ থেকে মুক্ত রাখা যাচ্ছে না। প্রাথমিক স্তরের শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষায় বছরের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ভয়াবহ প্রবণতা উল্লেখ করে শিক্ষাবিদরা বলছেন, এসব ঘটনায় অভিভাবকরাও জড়িয়ে পড়ছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা যা চিন্তার কারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত এক বছরের ডিজিটালাইজড হয়েছে শিক্ষার অধিকাংশ কার্যক্রম। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুগের পর যুগ ধরে ভর্তি বাণিজ্য, অনিয়ম আজ পুরোপুরি বন্ধ। বহুবছরের দাবি ও সুপারিশ অনুসারে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অটোমেশনের আওতায় আসছে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরসহ (ডিআইএ) দেশের প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিমুহূর্তে হবে মনিটরিং। তৈরি হচ্ছে সফটওয়্যার। যেখানে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য থাকছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংবলিত স্বতন্ত্র ওয়েবপেজ। এর মাধ্যমে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন প্রতিষ্ঠানের তথ্য জানা যাবে এক ক্লিকেই। এই পদক্ষেপ দেশের শিক্ষার মানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ আর শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের চেষ্টার ফসল বহুল আকাক্সিক্ষত শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর চলছে বাস্তবায়ন। পাঠ্যবইয়ের বহু যুগের অরাজকতাকে সামলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সকল শিক্ষার্থীর হাতে পৃথিবীতে একমাত্র দেশ হিসাবে তুলে দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে পাঠ্যবই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক অর্জনের দিক আছে। শিক্ষায় যা বিগত ২৫ বছরেও হয়নি তা হয়েছে গত কয়েক বছরে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বোর্ড, অধিদফতর, ডিআইএ ছাড়াও প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অনলাইনের আওতায় আসায় পাল্টে গেছে ভর্তির অনিয়মসহ বহু যুগের সংকটের চেহারা। যার সুফল পাচ্ছেন দেশের লাখ লাখ শিক্ষক, শিক্ষার্থী। অনলাইন পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করে সরকারী স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বাণিজ্যের লাগাম ধরার বিষয়টি সর্বস্তরে প্রশংসিত হয়েছে। বছরের শুরুতেই শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় ২০১১ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরে প্রায় শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়েছে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণীতে দু’টি পাবলিক পরীক্ষা সংযোজন এবং এ দু’টি পরীক্ষায় পাসের হার যথাক্রমে এখন প্রায় শতভাগ। এসএসসি ও এইচএসসিতেও পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন রকম জটিলতা ছাড়া কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের প্রথম দিনই বিনামূল্যের পাঠ্যবই বিতরণ শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যতম অর্জন বলে মনে করা হয়। বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি সারাদেশে প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও অন্যান্য স্তরে মোট চার কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৫ কোটি ১৫ লাখ ১৩ হাজার ৮৫৭ কপি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়। প্রথমবারের মতো দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে ৯ হাজার ৭০৩ কপি ব্রেইল পদ্ধতির পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়। পাশাপাশি প্রাক-প্রাথমিক স্তরে গারো, মারমা, চাকমা, ত্রিপুরাসহ পাঁচটি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য নিজ নিজ মাতৃভাষায় রচিত ৭৭ হাজার ২৮২ কপি বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আগামী বছর অর্থাৎ ২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে চার কোটি ৩৬ লাখ ৯৮ হাজার ৬৬৩ শিক্ষার্থীর জন্য ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ কপি বই মুদ্রণ-বাঁধাই করে জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির পাঁচটি কোর বিষয়ের মোট ১৫ পাঠ্যপুস্তকের প্রায় ১২ লাখ ৫০ হাজার কপি শিক্ষক শিক্ষাক্রম নির্দেশিকা সংশ্লিষ্ট সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হচ্ছে। পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম অনুসারে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গার্হস্থ্য বিজ্ঞান শাখার চারটি পাঠ্যপুস্তকের (শিশুর বিকাশ, খাদ্য ও পুষ্টি, গৃহ-ব্যবস্থাপনা এবং পারিবারিক জীবন, শিল্পকলা ও বস্ত্র-পরিচ্ছদ) পান্ডুলিপি তৈরি ও প্রকাশের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরের ৩টি উপবৃত্তি সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নির্বাচিত ৩৩ লাখ আট হাজার ৮৪৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৫৬২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে গত জানুয়ারি থেকে জুন মেয়াদে ২৮২ কোটি ৬৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। মেধাবৃত্তির আওতায় গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই লাখ ২৪ হাজার ১৫ শিক্ষার্থীকে ২২১ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ টাকা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে স্নাতক (পাস) ও সমমান পর্যায়ের দুই লাখ ৫৪ হাজার ৫৩৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৩৮ কোটি ৩৫ লাখ ৮৬০ টাকা উপবৃত্তি হিসাবে বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নিশ্চিতকরণে আর্থিক সহায়তা হিসাবে ১৪৮ শিক্ষার্থীকে তিন লাখ ৫৮ হাজার টাকা এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের এককালীন আর্থিক অনুদান হিসেবে সাতজনকে এক লাখ ৪৫ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। দেশের যে সকল উপজেলায় সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নেই সে সকল উপজেলায় একটি করে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি করে কলেজ সরকারী করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমের আওতায় বর্তমান মেয়াদে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১ বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১২ মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং ২১ বেসরকারী কলেজকে সরকারী করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালে মোট ৩১ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সরকারী করা হয়েছে। আটটি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এগুলো হলো- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, লক্ষèীপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এভিয়েশন এ্যান্ড এরোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জে হাজী আসমত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বগুড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইনের খসড়া চূড়ান্তকরণের কাজ চলছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বড় বাধা হিসাবে দেখা হতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মনিটরিংয়ের অভাবকে। মান্ধাতা আমলের মনিটরিং ব্যবস্থায় কাজও আসছিলনা। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবারই। দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের বহুবছরের দাবি ও সুপারিশ অনুসারে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে অটোমেশনের আওতায় আসছে সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরসহ (ডিআইএ) দেশের প্রায় ৩৭ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রতিমুহূর্তে হবে মনিটরিং। তৈরি করা হচ্ছে সফটওয়্যার। যেখানে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য থাকছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংবলিত স্বতন্ত্র ওয়েবপেজ। মাত্র সাত দিনে অডিট করা সম্ভব হবে দেশের প্রায় ৩৭ হাজার ৬৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আগামী মাসেই একসঙ্গে অডিট করার উদ্যাগ ডিআইএ। যার নাম দেয়া হয়েছে পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহ। কর্মকর্তারা বলছেন, এত কম সময়ে এতসংখ্যক প্রতিষ্ঠান অডিট করে রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে ডিআইএ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহের ডাকটিকেট অবমুক্ত করার সম্মতি দিয়েছেন। সে আলোকেই পেয়ার ইন্সপেকশন সপ্তাহ পালন করার উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। এই অডিট চালু হওয়ার পর প্রতিষ্ঠানে একাডেমিক, প্রশাসনিক এবং আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের আরেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) মাধ্যমে ২০১৭ সালে মোট ৩৭৪ সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি এক হাজার ৬৫২ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেরামত ও সংস্কার কাজ চলছে। এছাড়া রাজস্ব খাতের আওতায় সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চারতলা ভিত বিশিষ্ট একতলা একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমের আওতায় ৪০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে আরও দুই হাজার ২৭০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্মাণ কাজ চলছে। তবে এত কিছুর পরেও বছরজুড়েই শিক্ষা বিতর্কের মধ্যে ছিল কেবল লাগামহীন প্রশ্ন ফাঁসের কারণে। একের পর এক পরীক্ষা আর অব্যাহত প্রশ্ন ফাঁস ভাবিয়ে তুলেছে দেশের প্রতিটি মানুষকে। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন যাচ্ছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অথচ সরকারের কোন কর্তৃপক্ষ এমনকি বিটিআরসিও কোন কুলকিনারা করতে ব্যর্থ। ফলে বছরজুড়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা। কী ভর্তি পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা কোনটাই সমালোচনামুক্ত নয়। আবার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে দুই মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতর। একের পর এক প্রশ্ন ফাঁস হচ্ছে। বাদ যাচ্ছেনা প্রাথমিকের শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষাও। অথচ প্রাথমিক মন্ত্রণালয় আজ পর্যন্ত এ নিয়ে পদক্ষেপ দূরের কথা কোন কথাও বলেনি। কোন বক্তব্য নেই মন্ত্রী এ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বা অন্য কারও। আর প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের একের সময় একে বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। ‘কেবল শিক্ষকদের দায়ী’ কিংবা ‘সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টে প্রশ্ন ফাঁস’ এমন বক্তব্য নিয়ে আপত্তি উঠেছে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, সরকারের সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কর্মকর্তা এমনকি বিটিআরসি কেউই অপরাধীর নাগাল পাচ্ছে না, যা উদ্বেগের কারণ। সরকারের সাফল্য অনেকখানি প্রশ্নবিদ্ধ করেছে ‘প্রশ্ন ফাঁস’। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যত অন্ধকার। যে কোন পরীক্ষাতেই প্রশ্ন ফাঁস কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কেমন গেল ২০১৭ সালের শিক্ষা? জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ইকরামূল কবীর হতাশা প্রকাশ করেই বলছিলেন, শিক্ষার অনেক অর্জন আছে। তবে সব অর্জন আজ ম্লান হয়েছে প্রশ্ন ফাঁসে। প্রাথমিক স্তরের শিশুদের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসকে ভয়াবহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় অভিভাবকরা জড়িয়ে পড়ছে এটা আরও চিন্তার কারণ। শিক্ষার কাজের সঙ্গে সার্বক্ষণিক জড়িত আছেন বাংলাদেশ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার। তিনি বলছিলেন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জোরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পরপর দুই মেয়াদে জনমনে সবচেয়ে বেশি আশার সঞ্চার করে শিক্ষা খাত। যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মাধ্যমে উজ্জ্বল ভাবমূর্তিও তৈরি করে শিক্ষাস্তর। তবে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অর্জনকে ম্লান করছে। এই বিষয়টিতেই সরকারের সকল বিভাগকে আরও সতর্ক হতে হবে। তবে এই সময়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ আসাদুল হক। জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের অন্যতম এ নেতা বলছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস অর্জন ম্লান করেছে। আর শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দূরে ঠেলে দিয়েছেন। দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষকদের সঙ্গে।
×