ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আনন্দ-উৎসবে উদযাপিত হলো বড়দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭

আনন্দ-উৎসবে উদযাপিত হলো বড়দিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হলো খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান বড় দিন। সোমবার বড়দিন উপলক্ষে মঙ্গল ও শান্তি কামনা করতে প্রতিটি গীর্জায় হাজির হয় খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের হাজার হাজার মানুষ। এ উপলক্ষে গির্জাগুলো মনোরম সাজে সাজানো হয়। আলোর মালা দিয়ে তৈরি করা হয় ক্রিসমাস ট্রি। যিশু খ্রিস্টের জন্মের ঘটনার প্রতীক গোশালাও ছিল প্রতিটি গীর্জায়। মেরি ক্রিসমাসের আকর্ষণ ছিল বড়দিনের কেক। খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানবজাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে প্রভু যিশুর এই ধরায় আগমন ঘটেছিল। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরাও যথাযথ ধর্মীয় আচার, আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্যদিয়ে দিনটি উদ্যাপন করেন। এ উপলক্ষে প্রতিটি গীর্জায় ঢল ছিল। সারাদিন আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছে তারা। সোমবার সারাদেশে গীর্জাগুলোতে প্রার্থনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও বড়দিনের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় রবিবার রাত থেকেই। রাতে প্রার্থনার বিশেষ মাহাত্ম্য হচ্ছে, পৃথিবীতে যিশুর আগমন উপলব্ধি করা। রাজধানীর কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে রাতে প্রধান প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। সোমবার বিভিন্ন চার্চে প্রার্থনায় শান্তি ও মঙ্গল কামনার পাশাপাশি বড়দিনে উৎসবের আনন্দেও মেতে ওঠেন খ্রিস্ট অনুসারীরা। সকালে কাকরাইলের সেন্ট মেরিস ক্যাথেড্রালে বড়দিনের প্রার্থনায় অংশ নেন খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী হাজারও নারী-পুরুষ ও শিশু। প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করে তারা বলেন, এই দিনে যিশুকে আমরা বলি পেছনে যা যা করেছি তা ভুলে গিয়ে নতুনভাবে সব কিছু শুরু করতে চাই। মনের ভেতরে যত ক্ষোভ-রাগ ছিল তা এখানে এসে যিশুর চরণে দিয়ে দেই। আনন্দ নিয়ে আমরা ঘরে ফিরতে চাই, সেই আনন্দ সারাবছর ধরে রাখার চেষ্টা করি। চার্চের ফাদার ক্যারুবিন বাকলা বলেন, আজ ২৫ ডিসেম্বর যিশুর জন্মদিন, এই দিনটা অনেকটাই রহস্যাবৃত ছিল, দিনটি আজ উন্মোচিত হল। দেহ ধারণের মাধ্যমে অদৃশ্য ঈশ্বরকে প্রকাশিত করলেন। এই ঈশ্বর আমাদের প্রেমময়, দয়াবান, জীবনদাতা, রক্ষাকারী- এমন অনেকভাবেই আমরা ব্যাখ্যা করি এবং বিশ্বাস করি। সকাল ৭টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে জপমালা রানীর গীর্জায় প্রথম প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। ফাদার মিন্টু পালমা ও ফাদার রনজিত গোমেজ প্রার্থনা পরিচালনা করেন। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলে প্রার্থনা। বড়দিন উপলক্ষে গীর্জাকে আলোকসজ্জাসহ রঙিন সাজে সাজানো হয়। গীর্জার ভেতরের অংশ সুসজ্জিত করা হয়েছে জরি দিয়ে। ভেতরে সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি। বড়দিনের প্রার্থনা প্রসঙ্গে জপমালা রানীর গীর্জার ফাদার মিন্টু পালমা বলেন, সকালের প্রার্থনাটি প্রতিদিনের প্রার্থনার মতোই। তবে বড়দিনে এ প্রার্থনা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে প্রার্থনা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গল কামনা, শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য প্রার্থনা হয়েছে। ভালবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধনে নিজ পরিবার ও সমাজে বসবাসের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। গীর্জার ভেতরে বাইরে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়। গীর্জার মূল ফটকেই যিশু-মরিয়ম-জোসেফের মূর্তিসহ বিভিন্ন জিনিস কিনছেন ভক্তরা। প্রার্থনা শেষে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনন্দ উৎসব। তেজগাঁওয়ের হোলি রোজারিও চার্চে তিন দফায় প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কয়েক হাজার নানা বয়সী মানুষ মিলিত হন। বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে বর্ণিল করে সাজানো হয়েছে চার্চ এলাকা। ক্রিসমাস ট্রি আর আলোকসজ্জা ছিল নজরকাড়া। চার্চ প্রাঙ্গণে ঢুকতেই প্রার্থনাকারীদের চোখে পড়ে যিশু কোলে মা মেরির বড় আকারের ভাস্কর্য, যার চরণে প্রণাম জানিয়ে পূজারীরা প্রবেশ করেন ভেতরে। সকাল ৭টায় শুরু হয় প্রথম দফার প্রার্থনা, দ্বিতীয়টি সকাল ৯টায় এবং শেষটি সকাল ১১টায়। সেখানে থাকা সমাধিতে গিয়েও অনেককে মৃতদের জন্য প্রার্থনা করতে দেখা যায়। সকাল ৯টার প্রার্থনা পরিচালনা করেন ঢাকার আর্চবিশপ কার্ডিনাল প্যাট্রিক ডি রোজারিও, আর সকাল ৭টার প্রার্থনা পরিচালনায় ছিলেন দুই ফাদার- মিন্টু পালমা ও রণজিৎ গোমেজ। ফাদার রণজিৎ বলেন, এ বছর যেহেতু পোপ মহোদয় বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন, সেহেতু বড়দিনের উৎসবটা আমাদের জন্য বিশেষ। দেশ ও বিশ্ববাসীর মধ্যে যেন শান্তি ও সম্প্রীতি বিরাজ করে সেই প্রার্থনা আমরা করেছি। গরিব-দুঃখীসহ সকলের জন্য যেন মানবতাবোধ জাগ্রত হয় সেই প্রার্থনাও ছিল। বড়দিন উপলক্ষে প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও, দ্য ওয়েস্টিন ঢাকা, র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনসহ অন্যান্য হোটেল বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব হোটেলে শিশুদের জন্য ছিল ক্রিসমাস কিডস্ পার্টিসহ নানা ধরনের খেলার আয়োজন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেল সাজানো হয় ক্রিসমাস ট্রি ও আলোকসজ্জায়। শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলার প্রতিযোগিতা, ফ্যাশন শো, জাদু প্রদর্শনীর ব্যবস্থাও ছিল। বড়দিন উপলক্ষে বিশেষ কেক ও কুকিজের ব্যবস্থা করে সোনারগাঁও হোটেল। র‌্যাডিসন ওয়াটার গার্ডেনের লবিতে স্থাপন করা হয় বিশাল আকৃতির ক্রিসমাস ট্রি। হোটেলের চারটি রেস্তরাঁয় আয়োজন করা হয়েছে ক্রিসমাস স্পেশাল পুডিং, কেকসহ নানা মুখরোচক খাবার। আজ থেকে ২ হাজারের বেশি বছর আগে এই শুভদিনে পৃথিবীকে আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক যিশু খ্রিস্ট। বেথেলহেমের এক গোয়ালঘরে কুমারী মাতা মেরির কোলে জন্ম হয়েছিল যিশুর। খ্রিস্ট ধর্মানুসারীরা বিশ্বাস করেন, কোন পুরুষের সহবাস ছাড়াই যিশু খ্রিস্টের জন্ম। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সেখান হতেই বিকশিত হয় মুক্তির এই আলোর দিশারি। যার স্পর্শে পাপের আবর্তে নিমজ্জিত থাকা মানুষের অন্তরে এনে দেয় শান্তির পরশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করা হয় বড়দিন। এদিকে, খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শুভ বড়দিন নির্বিঘেœ পালন করার লক্ষ্যে রাজধানীতে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। উৎসস্থল ও আশপাশে পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দা পুলিশের নজরদারি ছিল। এদিকে বড়দিন উপলক্ষে আয়োজিত মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজী নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, সান্তা ক্লজের টুপি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হতে দেখা যায়। বড়দিন উপলক্ষে বাংলাদেশ খ্রীস্টান এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট নির্মল রোজারিও এবং মহাসচিব হেমন্ত আই কোড়াইয়া এক যুক্ত বিবৃতিতে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল খ্রীস্টান সম্প্রদায়ের লোকজনকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানান।
×