ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মহিউদ্দিনের বাসভবনে অশ্রুসিক্ত শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৫:০৫, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭

 মহিউদ্দিনের বাসভবনে অশ্রুসিক্ত শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার বিকেলে সদ্য প্রয়াত চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসভবনে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগ ও গোটা দেশ একজন ত্যাগী নেতাকে হারিয়েছে। জীবদ্দশায় মহিউদ্দিন চৌধুরী দলের জন্য, চট্টগ্রামের জন্য যে ভূমিকা রেখে গেছেন সে আদর্শ ধরে রাখার জন্য পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর ষোলশহর চশমাহিলের বাসভবনে প্রবেশের পর ড্রয়িং রুমে টাঙ্গানো ছবিগুলো একেক করে প্রত্যক্ষ করেন। যেখানে রয়েছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছবি, তার (প্রধানমন্ত্রী) ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের বেশ কিছু ছবি। এসব ছবি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী কিছুটা আবেগাপ্লুত হন। এরপর তিনি সরাসরি মহিউদ্দিনের বেডরুমে প্রবেশ করেন। সেখানে আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর বসার জন্য ব্যবস্থা করা হয়। বেডরুমে মহিউদ্দিন পরিবারের ১৫ সদস্যকে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। এ ছাড়া ছিলেন পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি, ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মহিউদ্দিন পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। পাশে বসেন মহিউদ্দিনের স্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন, জ্যেষ্ঠপুত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, কনিষ্ঠপুত্র বোরহানুল হাসান সালেহীন, তিন কন্যা, জামাতা ও তিন নাতি নাতনি। ঘরোয়া পরিবেশের এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী প্রায় ৪০ মিনিট সময় কাটান। বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন তার পুত্রকন্যাদের প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেয়ার কথা জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জন্মাইলে মরিতে হইবে, আমাদেরকেও একে একে চলে যেতে হবে। কিন্তু আমাকে ছেড়ে একে একে সকলে চলে যাচ্ছেন। এটা আমার জন্য বেদনার। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বাবা মাসহ অন্য সদস্যদের হত্যা করার পর আমরা দু’বোন বিদেশে ছিলাম। আমাদের হাতে ছিল সামান্য পরিমাণ ডলার। আমরা দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমরা আজকের অবস্থানে আসতে কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে অবদান রাখার কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি আজীবন মানুষের সঙ্গে ছিলেন। তৃণমূল থেকে তিনি উঠে আসেন এবং তৃণমূলের সঙ্গে থেকে জীবনের শেষ মুহূর্তটি সম্পন্ন করেছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন। তিনি মহিউদ্দিনের পুত্র কন্যাদের উদ্দেশ করে বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একজন ত্যাগী নেতাকে হারিয়েছে। দলের জন্য, দেশের জন্য ও চট্টগ্রামের জন্য তিনি অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখে গেছেন। তার আদর্শ ও ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। এর আগে বিকেল তিনটার পর প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিনের বাসভবনে পৌঁছলে গেটে তাকে অভ্যর্থনা জানান বেগম হাসিনা মহিউদ্দিন ও পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী। মহিউদ্দিনের বাসভবনে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়াকে কেন্দ্র করে শনিবার বিকেল থেকেই ষোলশহর এলাকা, মেয়র গলি ও চশমা হিলকে কেন্দ্র করে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। পদপিষ্টে নিহত পরিবারদের আর্থিক সহায়তা ॥ মহিউদ্দিন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাত ও কথাবার্তা বলার পর প্রধানমন্ত্রী বাসভবন প্রাঙ্গণে পদপিষ্ট হয়ে নিহত ১০ পরিবারের সদস্যদের নগদ ৫ লাখ টাকা হারে আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। উল্লেখ্য, মহিউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার মেজবানির অনুষ্ঠানে নগরীর রীমা কনভেনশন সেন্টারে প্রচন্ড ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে ১০ জন প্রাণ হারান। এরা সকলেই সনাতন ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়ের সদস্য। ওই কনভেনশন সেন্টারে শুধু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য মেজবানির আয়োজন করা হয়েছিল গত ১৮ ডিসেম্বর। প্রধানমন্ত্রী নিহত পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের ইচ্ছা ব্যক্ত করলে তাদেরকে মহিউদ্দিনের বাসভবন প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয়। প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি পরিবারের হাতে সাহায্যের নগদ টাকা হস্তান্তর করেন। পাশাপাশি প্রশাসনকে নিহত ১০ পরিবারের সকলের বায়োডাটা তার কাছে প্রেরণের নির্দেশনা প্রদান করেন।
×