ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নগরে গ্রামীণ আবহে আনন্দময় পৌষমেলা

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৭

নগরে গ্রামীণ আবহে আনন্দময় পৌষমেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ হিম কুয়াশায় ভর করে ঋতুচক্রের পালাবদলে এসেছে পৌষ। গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে চলছে পিঠাপুলির আয়োজন। সেই সঙ্গে আছে শীতল দিনে খেজুরের রস পানের হাতছানি। গ্রামীণ জীবনের সেই ঋতুভিত্তিক উৎসব শুক্রবার ছড়িয়ে গেল শহর ঢাকায়। তাই তো শেকড়ের টানে সকালের ঘুমকাতরতা কাটিয়ে শহরবাসীর অনেকেই ছুটে গেছেন বাংলা একাডেমির সবুজ প্রান্তরে। পিঠাপুলির স্বাদ নিতে শামিল হয়েছেন পৌষমেলায়। শুক্রবার সকাল থেকে পৌষমেলা উদযাপন পরিষদের আয়োজনে শুরু হলো তিনদিনের এই পৌষমেলা। দর্শনার্থীদের পিঠাপুলির খাওয়ার মজাটাকে আরও বাড়িয়ে দেয় শীতের বন্দনাময় নৃত্যগীত ও কবিতা আবৃত্তি। গ্রামীণ ঐতিহ্যের অনুসরণে আইলা জ্বালিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিজন কামাল লোহানী। এ সময় বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম পাঠ করেন সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতা ‘হে শীতের সূর্য’। শিল্পীর ভরাট কণ্ঠে উচ্চারিত হয়Ñ হে সূর্য! শীতের সূর্য!/হিমশীতল সুদীর্ঘ রাত তোমার প্রতীক্ষায়/আমরা থাকি/যেমন প্রতীক্ষা করে থাকে কৃষকের চঞ্চল চোখ/ ধানকাটার রোমাঞ্চকর দিনগুলির জন্যে ...। কবিতার ছন্দমাখা মেলার উদ্বোধনের আরও উপস্থিত ছিলেন আয়োজক পরিষদের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা খাতুন, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর প্রমুখ। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়। উদ্বোধনী বক্তব্যে আপন সংস্কৃতিচর্চার তাগিদ জানিয়ে কামাল লোহানী বলেন, হাজারো বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বারেবারে বাংলার প্রতিরোধের হাতিয়ার হয়েছে, এ পৌষমেলা তারই অংশ। চারপাশে যখন জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে গেছে, তখন এই পৌষমেলার মাধ্যমে আমরা সংঘবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই। বিদেশী অপসংস্কৃতি মানুষ হত্যাকারীদের পশুদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের বঙ্গ সংস্কৃতির উৎসবগুলোর চর্চা বাড়াতে হবে। গোলাম কুদ্দুছ বলেন, নগরে বেড়ে উঠা তরুণটি যখন ভুলে যায় তার শেকড়ের কথা, যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তখন বাঙালীর সংস্কৃতির এই উপাদানগুলোকে আমরা এমন মেলার মাধ্যমে তাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। শাহিদা খাতুন বলেন, আমরা এক অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এ মুহূর্তে তরুণদের হাজারো বছরের বাংলা ঐতিহ্য আর ইতিহাসে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে। পৌষমেলার মতো সাংস্কৃতিক আয়োজনগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতা বাঁশিতে লোকজ গানের সুরে শুরু হয় সাংস্কৃতিক পর্ব। তারপর নিবেদন শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনান ‘পৌষ এলো গো’। রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী বুলবুল ইসলাম গেয়ে শোনান ‘এলো যে শীতের বেলা’। এরপর দলীয় প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আসে আবৃত্তি সংগঠন প্রকাশ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যজন। একক কণ্ঠে ফকির আলমগীর গেয়ে শোনান ‘বন্ধু যেদিন আসবে আমার ঘরে’, আকরামুল ইসলাম পরিবেশন করেন হাছন রাজার দুটি গান ‘আগুন লাগাইয়া দিলো বনে’ ও ‘নিশা লাগিলো রে’, খগেন্দ্রনাথ সরকার ‘মনে ভাবনা পাতার কষ লেগেছে’, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ‘এ কি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিন পল্লী জননী’ গানটি শোনান ও সঞ্জয় কবিরাজ গেয়ে শোনান ‘সবার হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ, চেতনাতে নজরুল’। একক কণ্ঠে আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক আশরাফুল আলম। তিনি পাঠ করেন প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাইয়ূম চৌধুরী রচিত কবিতা। নৃত্য পরিবেশন করেন স্পন্দন ও ধৃতি নর্তনালয়। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি লেখক ও শিল্পীকেন্দ্র এবং বহ্নিশিখা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কণ্ঠশীলন। মেলার বিকেলের পর্বে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ ও ভিন্নধারা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বেনুকা ললিতকলা একাডেমি, জাগো আর্ট সেন্টার, নান্দনিক ও নৃত্যাক্ষ। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিশির রহমান, মহিউজ্জামান চৌধুরী, সুমা রানী রায়, আরিফ রহমান প্রমুখ। পালা গান পরিবেশন করেন রণজিৎ বাউল ও মমতা দাসী। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন রেজিনা ওয়ালী লীনা, মাশকুর-এ-সাত্তার কল্লোল। পুঁথি পাঠ করেন অভিনেতা আব্দুল আজিজ। নৃত্যনাট্য পরিবেশন করেন মুকুল নৃত্যনাট্য সংগঠনের শিল্পীরা। তিন দিনের পৌষমেলা চলবে রবিবার পর্যন্ত। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনের মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা থেকে। প্রথম পর্বটি চলবে সাড়ে ৯টা অবধি। তারপর বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয়ে চলবে রাত ৯টা অবধি। আজ শনিবার বিকেলে গান, আবৃত্তি ও নাচের পাশাপাশি থাকবে মহাদেব সংযাত্রা ও তার দলের সংযাত্রা পরিবেশনা। রবিবার উৎসবের সমাপনী দিনের আয়োজনে যাত্রাপালা পরিবেশন করবে ময়মনসিংহের দল রূপবান। মেলা প্রাঙ্গণে রয়েছে নানা স্বাদের ৫০টি পিঠা-পুলির প্রায় ৫০টি স্টল। এসব স্টলে দেখা মেলে বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাটিসাপটা, তালবড়া, বিবিখানা, মেন্ডা, মোরা, ঝিনুক, দুধ চিতই, জামাই পিঠা, বউ পিঠা, ভাপা পিঠা, সিদ্ধপুলি, পাকন, খেজুর পিঠা, মালপোয়াসহ নানা স্বাদের পিঠা। রবীন্দ্র সরোবরে শিমুল মুস্তাফার একক আবৃত্তি ॥ ‘আপোস করিনি কখনই আমি, এই হলো ইতিহাস’Ñ শিরোনামে ২০০৯ সাল থেকে রাজধানীর ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাচিকশিল্পী শিমুল মুস্তাফার একক আবৃত্তি অনুষ্ঠান। এ বছরের সেই আবৃত্তি পরিবেশনাটি শ্রোতারা উপভোগ করল শুক্রবার বিকেলে। শিমুল মুস্তাফার কণ্ঠে উচ্চারিত ৭১টি কবিতায় সাজানো এ আবৃত্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বৈকুণ্ঠ একাডেমি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশ, সৈয়দ শামসুল হক, শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহাসহ ওপার বাংলার জয় গোস্বামী ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তি করেন শিমুল মুস্তাফা। ‘বেড়ে ওঠার অবলম্বন’ ॥ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, গদ্য ও কবিতার সমন্বিত সঙ্গীত আয়োজন ‘বেড়ে ওঠার অবলম্বন’। শুক্রবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চট্টগ্রামের সংগঠন রক্তকরবী। ছায়ানটের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসবের সমাপ্তি ॥ বৃহস্পতিবার থেকে দুই দিনব্যাপী শুদ্ধসঙ্গীত উৎসবের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। উচ্চাঙ্গের সুর-তাল ও লয়ের খেলার মোহময়তায় উদ্দীপ্ত এ উৎসবের সমাপনী দিন ছিল শুক্রবার। প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের উৎসবেও ভিড় জমিয়ে ছিলেন সুররসিকরা। সেই সুবাদে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তন ছিল শ্রোতায় পরিপূর্ণ। এদিন সন্ধ্যা ৬টায় ™ি^তীয় তথা শেষ অধিবেশনের সূচনা হয়। গীতসুধার একুশে পা মিলনোৎসব ॥ প্রতিষ্ঠার একুশ বছরে পদার্পণ করল রবীন্দ্রসঙ্গীত অনুশীলন কেন্দ্র গীতসুধা। সাফল্যের সেই উদযাপনে শুক্রবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো গীতসুধার একুশের পা মিলনোৎসব। জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশনায় সাজানো হয় উৎসব। এতে গীতসুধার শিল্পীদের সঙ্গে পরিবেশনায় অংশ নিয়ে দেশের বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীরা। ‘কালারস অফ ইউথ’ ॥ দেয়ালজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ক্যানভাস। তরুণ চিত্রকরদের রং তুলির আঁচড়ে প্রস্ফুটিত হয়েছে সেসব চিত্রপট। উঠে এসেছে বিচিত্র বিষয়। সেসব ছবি নিয়ে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হলো যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। ৩২ তরুণ চিত্রশিল্পীর আঁকা ছবিতে সজ্জিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘কালারস অফ ইউথ’। ‘আমার চোখে ঢাকা’ ॥ শিশুরা হাতে তুলে নিয়েছে ক্যামেরা। সেই ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দী হয়েছে প্রিয় শহর ঢাকার স্থাপনা ও যাপিত জীবনের চিত্র। সেসব আলোকচিত্র নিয়ে শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘দুরন্ত’ আয়োজন করেছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ফোকাসিং ঢাকা’। জয়নুল, জসীম, আলমুতী জন্মোৎসব ॥ শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পল্লীকবি জসীমউদ্দীন এবং বিজ্ঞান লেখক ড. আবদুল্লাহ-আল-মুতী শরফুদ্দিনের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শুক্র ও শনিবার ছবি আঁকা, আবৃত্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে কেন্দ্রীয় কঁচি-কাচার মেলা। শুক্রবার সকালে সেগুনবাগিচার কচি-কাঁচার মেলা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী। মাগুরায় ফেরদৌস ওয়াহিদের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মাগুরা থেকে জানান, বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদের একক সঙ্গীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে মাগুরা জেলা কালেক্টরেট বিজয় চত্বরে এই একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
×