ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নানান অজুহাতে খালাস!

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ২১ ডিসেম্বর ২০১৭

নানান অজুহাতে খালাস!

দেশে প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। এই দুর্ঘটনার জন্য যে বা যারা দায়ী তারা কোন না কোন অজুহাতে খালাস পেয়ে যাচ্ছে। তাদের শাস্তি না হওয়াতে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা ও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সকলেই এনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছেন, অথচ এরা সজাগ থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা পরিপূর্ণভাবে রোধ করা না গেলেও অনেকটা কমানো যেত। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এ ব্যাপারে কারুরই যেন কোন মাথাব্যথা নেই। খবরে আর পত্র-পত্রিকায় এসব সড়ক দুর্ঘটনার খবর ফলাও করে পরিবেশিত হচ্ছে। ইদানীং তারেক মাসুদের পরিবারকে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর জন্য বেশ মোটা অঙ্কের জরিমানা করেছে মহামান্য হাইকোর্ট। নিঃসন্দেহে এটা দেশবাসীর জন্য একটা সুখবর। একজন সাংবাদিক সড়ক দুর্ঘটনায় রাজপথে মারা গেলেন, তাঁর স্ত্রী ক্ষতি পূরণের মামলা করেছেন, কিন্তু তিনি এখনও ক্ষতি পূরণ বাবদ কিছুই পাননি। নাবালক পুত্রকে নিয়ে তিনি অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনার অনেক মামলা বিচারাধীন আছে, মামলাগুলো দ্রত নিষ্পত্তি হলে বিচারপ্রার্থীরা অবশ্যই উপকৃত হবেন। তাঁদের আর্থিক দৈন্য অনেকটাই লাঘব হবে। সড়ক দুর্ঘটনা কেন হয় এটা ভাবতে হবে। অদক্ষ ড্রাইভার, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, গাড়ি মালিকদের অবহেলা, প্রশাসনের উদাসীনতা সবকিছু মিলিয়েই এ সড়ক দুর্ঘটনার মতো অপরাধমূলক কার্যাবলী সংঘটিত হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে সড়ক দুর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়তেই থাকবে, আর প্রাণ দেবে অসহায় নির্দোষ মানুষ। রাস্তা ঘাটের দৈন্যদশাও সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে গাড়ির চালকরা বেকায়দায় পড়েন, আর এজন্যও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে কী করণীয় তা প্রশাসন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকলকেই ভেবে দেখতে হবে। পুরাতন আইন বদল করে নতুন আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং জরুরী ভিক্তিতে ওই আইন বলবৎ করতে হবে। অনেক মানুষই জানে না সড়ক দুর্ঘটনার জন্য মামলা করার বিধান আছে কিনা! যথাযথ প্রচারের মাধ্যমে জনসাধারনকে জানাতে হবে সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি বিধানের আইন রয়েছে। বছর কয়েক আগে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধান রেখে আইন পাস করা হয়েছিল, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আইনটি কার্যকরী করা যায়নি। গাড়ি চালকদের আন্দোলনের মুখে সরকার আইনটি রহিত করতে বাধ্য হয়। আমরা মনে করি কঠোর আইন প্রয়োগ না করলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনা কমবে না, বরং দিন দিন তা বাড়তেই থাকবে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা খুবই কম, অথচ আমাদের দেশে কত অসহায় মনুষ প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যানও আমরা জানি না। হাইকোর্ট সড়ক দুর্ঘটনার জন্য যে রায়টি দিয়েছে তাতে মানুষ খুশি হয়েছে। অপরাধীকে কঠিন শাস্তি না দিলে সে অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে, এ ক্ষেত্রেও হয়েছে তাই। এতদিন অপরাধীর কঠিন শাস্তি হয়নি বলে এই অপরাধটি বেড়েই চলেছে। দেশের জনগণের ভালমন্দ দেখার দায়িত্ব দেশের প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার, এরা উদাসীন হলে কিংবা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন না করলে কিছুতেই জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না এবং দেশবাসীর মঙ্গল হবে না। আমরা আশা করি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সরকার ও জনসাধারণ এ বিষয়ে তৎপর হবে। সড়ক দুর্ঘটনার যে সমস্ত মামলা এখনও বিচারাধীন আছে সেগুলো অতি সত্তর নিষ্পত্তি করতে হবে। রাস্তাগুলো মেরামত করতে হবে, চালকের সচেতনতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। ভাঙ্গা লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহীন গাড়ি যাতে রাস্তায় নামতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে, অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। ত্বরিত ব্যবস্থা নিলে অবিলম্বে সড়ক দুর্ঘটনা কমবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। জাফরাবাদ, ঢাকা থেকে
×