ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈষম্য রোধে সেই কাক্সিক্ষত পরিবর্তন এখনও আসেনি ॥ ড. কামাল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭

বৈষম্য রোধে সেই কাক্সিক্ষত পরিবর্তন এখনও আসেনি ॥ ড. কামাল

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বৈষম্য রোধে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আমরা যে অসাধারণ মূল্য দিয়ে গেছি সেই কাক্সিক্ষত পরিবর্তন এখনও আসেনি। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী মিলনায়তনে এক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন। ‘নয়া উদারতাবাদ বলয়ের বাইরে: বাংলাদেশে পুঁজিবাদউত্তর সমাজব্যবস্থা রূপকল্প’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে নাগরিক উদ্যোগ। মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক রেহমান সোবহান ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। ড. কামাল হোসেন বলেন, রাজনীতি এবং অর্থনীতিকে আলাদা করে দেখার কোন কিছু নেই। বাস্তবতা জানার জন্য আগে আমাদের ইতিহাস জানতে হবে। আমরা বৈষম্য রোধে ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত যে অসাধারণ মূল্য দিয়ে গেছি সেই কাক্সিক্ষত পরিবর্তন এখনও আসেনি। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের সমান অধিকারে বিতর্কের অবকাশ নেই; থাকাও উচিত নয়। নারীরা যুদ্ধে যে অবদান রেখে গেছে তা স্মরণে রাখলে এমন বিতর্ক আর উত্থাপিত হবে না। শোষণ, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, বৈষম্য, সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য লাখো মানুষ জীবন দিয়ে গেছে। আমাদের এই বাস্তবতা বুঝতে হবে। তাহলে পরিবর্তনে খুব বেশি সময় লাগবে না। সুলতানা কামাল বলেন, বিপ্লবী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা স্বপ্ন দেখার সাহস পাই। মুক্তিযুদ্ধে আমরা যে সাহস দেখিয়েছি তা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নয়া উদারতাবাদের ভেতরে বা বাইরে; যেখানেই থাকি না কেন শোষণ, অত্যাচার, নিগ্রহ, নারী-পুরুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। তিনি বলেন, জনগণের অংশীদারিত্ব ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে আমাদের জোর দিতে হবে। সেটি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সম্ভব। সবার সমানাধিকারের দেশ গড়তে উৎপাদন ও বিপণনের সব পর্যায়ে কৃষক-শ্রমিকের অংশীদারিত্ব নিশ্চিতের সুপারিশ করেছেন অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহান। তিনি বলেন, কৃষকের উৎপাদিত আলু যখন হিমাগারে যায় তখন সেটা মাত্র ২ টাকায় যায়। সেটা যখন ঢাকার খুচরা বাজারে আসে তার মূল্য দাঁড়ায় ২০ টাকা। এটা অন্যায্য ও অতিমাত্রায় অকার্যকর পদ্ধতি। এক্ষেত্রে যে সংযোজন হলো সেখানে তাদের অংশ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে চালের কল, হিমাগার পদ্ধতি, বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ও এ্যাগ্রো প্রসেসিং নেটওয়ার্কে তাদের অংশ নিশ্চিতের পথ খোঁজার পরামর্শ দেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার স্বপ্ন থেকে বাংলাদেশের সংবিধানে সব ধরনের বৈষম্য ও বঞ্চনা থাকবে না এমন বিধান রাখা হয়েছিল। কতক মৌলিক অধিকার থাকবে, যার মধ্যে কিছু অধিকার শর্তসাপেক্ষ ও কিছু স্বাধীনভাবে। সম্পদের তিনটি রূপের কথা হয়েছিল। ব্যক্তিগত, রাষ্ট্রীয় ও সমবায়। কিছু সম্পদ রাষ্ট্রায়ত্ত করা হয়েছিল। সমবায়ের একটা ধারা বলবৎ ছিল, সেটাকে কার্যকর করা হয়েছিল। পুরো প্রক্রিয়াটা একটা সময় পর পাশার মতো উল্টে যায়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ রাষ্ট্র যেখান থেকে শুরু হয়েছিল সেখান থেকে এখন পিছিয়ে গেছে। তা না হলে আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাস দেখতাম না। তবুও আমরা আশা করতে চাই, আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ করব। উত্তরণের উপায় বের করা দরকার।
×