ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালে কুমিল্লা না রংপুর, ফয়সালা আজ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭

ফাইনালে কুমিল্লা না রংপুর, ফয়সালা আজ

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল টি২০) পঞ্চম আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচটি আজ অনুষ্ঠিত হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সন্ধ্যা ৬টায় ম্যাচটি শুরু হবে। ম্যাচটিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও রংপুর রাইডার্স মুখোমুখি হবে। যে দল জিতবে তারাই ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নেবে। দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনালে উঠবে। ম্যাচটি বৃষ্টির তোপে পড়ার সম্ভাবনাও আছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী খেলার সময় বৃষ্টি থাকতে পারে। বৃষ্টির জন্য খেলা যদি না হয় তাহলে কুমিল্লা ফাইনালে উঠে যাবে। কারণ নিয়ম অনুযায়ী লীগপর্ব শেষে যে দল পয়েন্ট তালিকায় ওপরে থাকে, কোয়ালিফায়ার বা এলিমিনেটর ম্যাচ না হলে জয়ী দল বের করতে লীগপর্বের পয়েন্ট তালিকা এবং জয়কেই প্রাধান্য দেয়া হয়। তাতে কুমিল্লাই এগিয়ে থাকছে। পয়েন্ট তালিকায় পয়েন্ট বেশি থাকার সঙ্গে লীগপর্বে দুটি ম্যাচেই রংপুরকে হারিয়েছে কুমিল্লা। তাই কুমিল্লাই তখন ফাইনালে খেলবে। বিপিএলের এবারের আসরের ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে মঙ্গলবার। এরই মধ্যে ঢাকা ডায়নামাইটস ফাইনালে উঠে গেছে। সবার আগে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে। আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে যে দল জিতবে, ঢাকার বিপক্ষে ফাইনালে লড়াই করবে সেই দল। হারা দলের বিদায় হয়ে যাবে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলার আগে প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলেছে কুমিল্লা। ঢাকার কাছে ৯৫ রানে হেরেছে। খুবই খারাপ অবস্থা হয়েছে। লীগপর্বে দাপট দেখানো দলটি সেরা চারে এসে যেন থুবড়ে পড়েছে। এত বড় ম্যাচের চাপ যেন নিতে পারছে না। আজ যদি না জিততে পারে তাহলে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে খেলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাবে ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার। কুমিল্লার মতো প্রথম কোয়ালিফায়ারে খেলতে পারেনি রংপুর। লীগপর্বে কুমিল্লা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকায় কোয়ালিফায়ার খেলার সুযোগ পেয়েছে। তাতে করে একটি ম্যাচে হারলেই বিদায়, সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেঁচেছে। রংপুর সেই শঙ্কাতেই ছিল। লীগপর্বে সেরা দুইয়ে না থাকতে পারায় চতুর্থ হওয়ায় রংপুরকে এলিমিনেটর ম্যাচে খেলতে হয়েছে। এক ম্যাচ হারলেই বিদায়, এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে রংপুরকে। ফাইনালে উঠতে হলে যেখানে সেরা চারের লড়াইয়ে এক ম্যাচ জিতলেই হবে, কুমিল্লা পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকায় এ সুবিধা পেয়েছে। সেখানে রংপুরকে ফাইনালে খেলতে হলে টানা দুই ম্যাচ জিততে হবে। এমন কঠিন সমীকরণেই পড়েছে। রংপুর এলিমিনেটর ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা উপস্থাপন করেছে। দাপট দেখিয়েই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খেলছে। যে ব্যাটসম্যানের নৈপুণ্যে ফেরার আশা করা হচ্ছিল, সেই ক্রিস গেইল দাপটেই নৈপুণ্যে ফিরেছেন। সেঞ্চুরি করেই নিজেকে মেলে ধরেছেন। আজ যদি রংপুর আবারও জয় পায় তাহলে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করবে। যদি জিততে না পারে তাহলে কুমিল্লা ফাইনালে খেলবে। দুই দলই ফাইনালে খেলতে চায়। তবে এমন ম্যাচের আগে দুই দলই সাবধানী পথ অবিলম্বন করতে রাজি। রংপুরের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা এ ম্যাচটি নিয়ে আগেই বলেছেন, ‘একটা দল চালাতে গেলে ভারসাম্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদিও এই পর্যন্ত এসেছি ভারসাম্য নিয়ে। কিন্তু সংগ্রাম করেছি। একটা ভাল দল শুধু নাম দিয়েই হয় না, ভারসাম্যটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যেভাবে খেলেছি, কিছু কিছু দিনে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে কেউ একজন এগিয়ে এসেছে বলে আমরা এতদূর আসতে পেরেছি। পরের দুই ম্যাচের কথা আমি বলব না, পরের ম্যাচটা নিয়ে ভাবছি। টুর্নামেন্টের সেরা দুই দলের একটির বিপক্ষে আমাদের খেলতে হবে। পরের ম্যাচটা দুই দলের জন্যই সমান। যারা নার্ভ (বায়ুচাপ) ধরে রাখতে পারবে তারাই সুবিধা পাবে।’ কুমিল্লার অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের আরও একটি ম্যাচ আছে। ওই ম্যাচে আমাদের ভুলগুলো শুধরে নিলেই হবে।’ দেখা যাক এখন কোন দল জিতে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলা নিশ্চিত করে। বিজয়ের মাস বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পাকিস্তানীদের পরাজিত করে সর্বত্রই বীর মুক্তিযোদ্ধারা ওড়াচ্ছে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। বাংলার ঘরে ঘরে উড়ছে বিজয় নিশান। ১৯৭১’র ডিসেম্বর। সে এক উন্মাদনার সময়। বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের দোসর আলবদর-রাজাকাররা শেষ আঘাত হানছে। হত্যা ও ধ্বংসের বিভীষিকার তা-ব চালাচ্ছে ওরা; কিন্তু সব পায়ে দলে এক নদী রক্ত পেরিয়ে বিজয় পতাকা উড়ল বাংলাদেশের আকাশে। ফিরে দেখা যাক বিজয়ের সেই মুহূর্তগুলো। ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১। চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে বাংলাদেশ। রাজধানী ঢাকা ছাড়া দেশের অধিকাংশ জেলা শত্রুমুক্ত। প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে পাক হানাদার ও স্বাধীনতার শত্রু রাজাকার-আলবদর, শান্তি কমিটির সদস্যরা। অকুতোভয় মিত্রবাহিনী সদর্পে চারদিক ঘেরাও করে ঢাকার সন্নিকটে চলে এসেছে। ঢাকায় পরিকল্পিত চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে তারা। ডিসেম্বরের এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্র স্তব্ধ করে দিল, বোমা-রকেট ছুড়ে বিধ্বস্ত করে দিল ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। পরাজয় নিশ্চিত, তবুও আত্মসমর্পণের আগে বাঙালীর নিশ্চিত স্বাধীনতা কেড়ে নিতে তখনও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিধ্বস্ত পাক শাসকরা। একাত্তরের এদিন ৫৭ নম্বর ডিভিশন গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল মিত্রবাহিনী কীভাবে রাজধানী ঢাকার মুক্তিযুদ্ধে নদীর বাধা অতিক্রম করে। ভোর থেকে ভৈরববাজারের ৩/৪ মাইল দক্ষিণে হেলিকপ্টার করে নামানো হলো ৫৭ নং ডিভিশনের সৈন্য। সারাদিন ধরে মেঘনা অতিক্রমের সেই অভিযান চলে। প্রথম বাহিনীটা ওপারে নেমেই ঘাঁটি গেড়ে বসল। কিছুটা উত্তরে ভৈরববাজারের কাছেই তখন পাকিস্তানী সৈন্যদের বড় একটা মজুদ। ব্রিজটার একটা অংশ ভেঙ্গে দিয়ে নদীর পশ্চিম পারে ওঁৎ পেতে বসে থাকে হানাদাররা। আকাশে সূর্য উঠতেই তারা দেখতে পেল হেলিকপ্টার। নদী পার হচ্ছে, কিন্তু দেখেও তারা ঘাঁটি ছাড়তে সাহস পেল না। ভাবল, ওটা বোধহয় মিত্রবাহিনীর একটি ধাপ্পা। ওদিকে ছুটে গেলেই আশুগঞ্জ থেকে মূল মিত্রবাহিনীটা ভৈরব বাজার-ঢাকার রাস্তা ধরবে। সত্যিই কিন্তু পাকিস্তানী বাহিনীকে ভুল বোঝানোর জন্য মিত্রবাহিনীর একটা বড় কলাম তখন এমন ভাবসাব দেখাচ্ছিল যে, তারা আশুগঞ্জ দিয়েই মেঘনা পার হবে। পাকিস্তানী বাহিনী এভাবে ভুল বোঝায় মিত্রবাহিনীর সুবিধা হলো এক রকম বিনা বাধায় মেঘনা পার হওয়া গেল। হেলিকপ্টারে পার হলো কিছু সৈন্য। অনেকে আবার পার হলো স্টিমার ও লঞ্চে। কিছু পার হলো দেশী নৌকায়। ট্যাঙ্ক নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সেই সমস্যাও দূর হলো এক অভাবনীয় উপায়ে। রাশিয়ান ট্যাঙ্ক সাঁতরাতে পারে ঠিকই। কিন্তু একনাগাড়ে আধাঘণ্টার বেশি সাঁতরালেই ট্যাঙ্ক গরম হয়ে যায়। অথচ মেঘনা পার হতে আধাঘণ্টারও বেশি সময় লাগবে। তখন ঠিক হলো ট্যাঙ্কগুলো যতটা সম্ভব নিজেরাই সাঁতরে এগুবে। এরপর নৌকায় দড়ি বেঁধে সেগুলো টেনে নদীর ওপারে নিয়ে যাওয়া হবে। কিন্তু এতে স্থানীয় মানুষের সাহায্য লাগবে। মিত্রবাহিনী অবাক হয়ে দেখল বাংলাদেশের কিছু রাজাকার ছাড়া সব মানুষই স্বাধীনতা চায়। সাহায্য চাওয়া মাত্রই ছুটে এলো হাজারো সাধারণ মানুষ। শত শত নৌকা নিয়ে এলো তারা। সেসব নৌকা বার বার মেঘনা পারাপার করল। বেশ কয়েক মাইল হেঁটে তারপর তারা পৌঁছেছিল ভৈরববাজার-ঢাকার মূল সড়কে এবং পরদিনই তারা রায়পুরা দখল করে নিল। ওদিকে তখন উত্তরের বাহিনীটাও দ্রুত এগিয়ে আসছে। ময়মনসিংহের কাছে তারা দাঁড়াল। খবর ছিল যে, ময়মনসিংহে পাকিস্তানী বাহিনীর একটা ব্রিগেড রয়েছে, কিন্তু সে ব্রিগেডকে অনেক আগেই যে ভৈরববাজারের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তা মিত্রবাহিনী জানত না। তাই মিত্রবাহিনী ময়মনসিংহে বড় লড়াই করার জন্য সেদিনটা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে শম্ভুগঞ্জে অপেক্ষা করল। অন্যদিকে ভারতীয় বিমান আর নৌবাহিনীও সেদিন পাকিস্তানী বাহিনীকে আরও ভয় পাইয়ে দিল। বিমানবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্র স্তব্ধ করে দিল। কুর্মিটলার ওপর বার বার রকেট আর বোমা ছুড়ল। নৌবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনার অবস্থাও অত্যন্ত কাহিল। কয়েকটি স্টিমার ভর্তি হয়ে পাকিস্তানী বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালাতে গিয়েছিল। একটা জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়েও কিছু পাকিস্তানী সেনা সিঙ্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল। সব ধরা পড়ল মুক্তিপাগল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের বিজয় অনিবার্য। এটা বুঝতে পেরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য বাঙালীকে নেতৃত্বশূন্য করতে গোপন ষড়যন্ত্র আঁটতে শুরু করে তারা। আর এ পরিকল্পনার প্রধান নায়ক স্বাধীনতার প্রধান শত্রু এদেশীয় জামায়াতের রাজাকার-আলবদর-আলশামস। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পর এসব একাত্তরের গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের মাধ্যমে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করছে বর্তমান সরকার।
×