ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়েস্ট হামকে হারিয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে সর্বোচ্চ টানা ১৩ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসাল পেপ গার্ডিওলার দল

ইতিহাস গড়ে ম্যানচেস্টার সিটির জয়

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

ইতিহাস গড়ে ম্যানচেস্টার সিটির জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ স্পেনের জায়ান্ট ক্লাব বার্সিলোনাতেই নিজের জাত চেনান পেপ গার্ডিওলা। অসামান্য সব কীর্তি গড়ে নিজেকে নিয়ে যান অন্য এক উচ্চতায়। কাতালান ক্লাব থেকে জার্মান বুন্দেসলিগার চ্যাম্পিয়ন বেয়ার্ন মিউনিখ ঘুরে স্প্যানিশ কোচ গত মৌসুমেই নতুন করে ঠিকানা গড়েন ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে। ম্যানচেস্টার সিটিতে প্রথম মৌসুমের শুরুটা অবশ্য দুর্দান্তভাবেই করেছিলেন গার্ডিওলা। কিন্তু শেষের দিকে পারফর্মেন্সের সেই ধারাবাহিকতা আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তবে চলতি মৌসুমেই গার্ডিওলার অধীনে উড়তে শুরু করেছে ম্যানচেস্টার সিটি। রবিবার ওয়েস্ট হাম ইউনাইটেডের বিপক্ষে জিতে সবচেয়ে বেশি টানা জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছে তার শিষ্যরা। এই মৌসুমে শেষ সময়ে গিয়ে ম্যানচেস্টার সিটি গোল পাবে, এই বিষয়টাকে যেন অলিখিত একটা রীতিতেই পরিণত হয়ে গেছে। রবিবার নিজেদের মাঠে আরও একবার সেটির পুনরাবৃত্তি করল সিটিজেনরা। পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত পেপ গার্ডিওলার শিষ্যরা ২-১ গোলে হারিয়েছে ওয়েস্ট হামকে। সেই সঙ্গে চেলসি-আর্সেনালের লীগে টানা ১৩ জয়ের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছে ম্যানসিটি। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শীর্ষস্থানটাও আরও সুসংহত করল তারা। শুধু তাই নয়, লা লিগা, বুন্দেস লিগার পর প্রথমবারের মতো ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জয়ের স্বপ্নেও আরও একধাপ এগিয়ে গেলেন পেপ গার্ডিওলা। অথচ তুলনামূলক দুর্বল ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ম্যাচের ৫৭ মিনিট পর্যন্ত ১ গোলে পিছিয়ে ছিল ম্যানসিটি। এর ফলে ১৯ ম্যাচ পর লীগে নিজেদের মাঠে প্রথমবারের মতো হেরেও যেতে পারত। অন্তত প্রথমার্ধে যেভাবে খেলছিল সেই পারফর্মেন্স কিন্তু তাই বলে। লীগে এবার ওয়েস্ট হাম ১৯তম দল। অন্যদিকে সিটির অবস্থান সবার উপরে। কিন্তু প্রথমার্ধের পারফর্মেন্সে সেটাও বোঝার কোন উপায় ছিল না। শুরু থেকেই ওয়েস্ট হাম ছিল দারুণ গোছানো। ম্যাচের শুরুতেই ম্যানুয়েল লানজিনির গোলে এগিয়ে যেতে পারত সফরকারীরা। কিন্তু খুব কাছ থেকে গোল করার সুযোগ পেয়েও এডারসনকে পরাস্ত করতে পারেননি ওয়েস্ট হামের আর্জেন্টাইন মিডফিল্ডার লানজিনি। শেষের দিকে ঠিকই ইত্তিহাদ স্টেডিয়ামের দর্শকদের স্তব্ধ করে দেয় ওয়েস্ট হাম। সেই লানজিনির ক্রস থেকেই দুর্দান্ত এক হেড করে সফরকারীদের এগিয়ে দেন এ্যাঞ্জেল অগবোন্না। এর ফলে স্বাগতিকদের বিপক্ষে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় সফরকারী দল। তবে পিছিয়ে পড়েই যেন গর্জে ওঠে গার্ডিওলার শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই আক্রমণে যেতে থাকে সিটিজেনরা। ৫৬ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের দারুণ এক ফ্রি-কিক ঠেকিয়ে দেন ওয়েস্ট হাম গোলরক্ষক আদ্রিয়ান। কিন্তু সাঁড়াশি আক্রমণের সুফল পেয়ে যায় সিটি। তার মিনিটখানেক পরেই সমতায় ফেরে ম্যানসিটি। অবাক করা গোলে। ডানদিক থেকে ক্রস করেছিলেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। স্ট্রাইকারদের মতো দক্ষতায় সেই বল প্রতিপক্ষের জালে জড়াতে মোটেও ভুল করেননি নিকোলাস ওটামেন্ডি। অবশ্য ওয়েস্ট হামের একজনের গায়ে লেগে সেটি দিক পরিবর্তন করেছিল একটু। এবারের লীগে ওটামেন্ডির এটা তৃতীয় গোল। ডিফেন্ডারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোল করেছেন তিনি। সমতায় ফেরার পর সিটিজেনদের আক্রমণের ধার আরও বেড়ে যায়। কিন্তু চীনের প্রাচীর হয়ে গোলপোস্টের নিচে দাঁড়ান ওয়েস্ট হামের গোলরক্ষক আদ্রিয়ান। দুর্দান্ত কিছু সেভ করে স্বাগতিক স্ট্রাইকারদের হতাশ করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সিটি ঠিকই গোলের দেখা পায়। তবে তাতে আদ্রিয়ানের কিছুই করার ছিল না। ম্যাচের বয়স তখন ৮৩ মিনিট। ডান দিক থেকে হাওয়ায় বল ভাসিয়ে দেন কেভিন ডি ব্রুইন। অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে ডেভিড সিলভা সামনে এগিয়ে শূন্যে ভেসে বাঁ পায়ের ভলিতে গোল করেন। দেখা ছাড়া আদ্রিয়ানের কিছুই করার ছিল না। তবে তারপরও হাল ছাড়েনি সফরকারী দলটি। ম্যাচের শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরানোর একটা সুযোগও পেয়ে যায় তারা। কিন্তু ওয়েস্ট হাম সেটা কাজে লাগাতে পারেনি। ওয়েস্ট হামকে হারিয়ে প্রিমিয়ার লীগে টানা ১৩ ম্যাচ জয়ের রেকর্ডে ভাগ বসাল ম্যানসিটি। তাদের আগে লীগে টানা ১৩ ম্যাচে জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছিল আরও চারটি দল। সেই দলগুলো হলো সান্ডারল্যান্ড, প্রেস্টন (১৮৯১-৯২), আর্সেনাল (২০০১-০২) ও চেলসি (২০১৬-১৭)। ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে জয়ের ফলে শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির সংগ্রহে ১৫ ম্যাচ থেকে ৪৩ পয়েন্ট। দুইয়ে থাকা নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দখলে ৩৫ পয়েন্ট। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা চেলসি ও লিভারপুলের পয়েন্ট যথাক্রমে ৩২ ও ২৯।
×