ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আটিয়ার যুবকদের উদ্যোগ

পাখির জন্য ভালবাসা নিজ খরচে গাছে গাছে মাটির কলসি

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২১ নভেম্বর ২০১৭

পাখির জন্য ভালবাসা নিজ খরচে গাছে গাছে মাটির কলসি

ইফতেখারুল অনুপম ‘বাবুই পাখি খেজুর গাছে, আঙিনাতে চড়ুই নাচে। আমগাছে কোকিল ডাকে, দোয়েল গায় গাছে গাছে।’ আগে গ্রামে হরহামেশাই দেখা মিলত নানা প্রজাতির পাখি। কিন্তু এখন নানা প্রজাতির পাখি আর চোখেই পড়ে না। গাছে গাছে পাখির কলরবও যেন উধাও হয়ে গেছে। তাহলে কি ‘পাখি সব করে রব, রাতি পোহাইল’ ছড়ার মতো ভোরে পাখির শব্দে আর ঘুম ভাঙবে না? এমন শঙ্কা আমিনুল ইসলামকে পেয়ে বসে। তিনি ভাবতে থাকেন গ্রামের মানুষ এক সময় ভোরে পাখির ডাকে ঘুম থেকে উঠত। কিন্তু হঠাৎই সেই পাখি হারিয়ে যায় গ্রাম থেকে। হারানো সেই পাখিকে ফিরিয়ে আনতে হলে পাখির জন্য কী করা যায়। একদিন সে ভাবনা থেকেই শুরু পাখির জন্য বাসা বানানোর। তার সঙ্গে যোগ দেন আরও কয়েক তরুণ। নিজেদের অর্থ খরচ করে গাছে গাছে মাটির কলসি বেঁধে দিচ্ছেন। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়াতে গাছে গাছে মাটির কলসি বেঁধে দিয়ে আটিয়া যুবসমাজের এ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহাদত হোসেন কবির ও আটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম মল্লিক। পাখির জন্য নিরাপদ বাসা তৈরিতে ‘আটিয়া যুবসমাজ’ নামে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন মীর মুনির হোসেন কামাল, শামীম আল রানা, শেখ ওবায়দুল ইসলাম, খন্দকার মনি, শেখ জাহিদুল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, খন্দকার বিপ্লব, শেখ রাজীব, সাজু। তাদের মূলমন্ত্র ‘পাখি সংরক্ষণে বন্ধু চাই, সবুজ এ দেশকে বাঁচাই।’ আমিনুল ইসলাম বলেন, ঝড়-বৃষ্টিসহ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগে পাখির বাসা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে ডিম এবং বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। ফলে বংশবিস্তার কমে যাওয়ায় দেশীয় পাখির সংখ্যা দিন দিন কমছে। প্রথমে মানুষ আমাকে পাগল বলেছে। এখন সবাই সহযোগিতা করে। ভবিষ্যতে এই কার্যক্রম উপজেলাব্যাপী ছড়িয়ে দিতে চাই। এ পর্যন্ত আটিয়ার বিভিন্ন এলাকায় গাছে মাটির কলসি স্থাপন করে তিন শ’ পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। আটিয়ার যুবকরা জানান, কুমারবাড়ি থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ৩শ’ মাটির কলসি তৈরি করা হয়। বৃষ্টির পানি যেন জমে না থাকে সেজন্য প্রতিটি পাত্রেই ছিদ্র করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও ৫ শতাধিক মাটির কলসি গাছে গাছে ঝোলানো হবে। পাখির প্রতি অনন্য ভালবাসা থেকে এই তরুণরা নিজেদের সীমিত সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে নিজ গ্রামে পাখির বাসা তৈরি করার মাধ্যমে সূচনা করেন তাদের পাখি সংরক্ষণ কর্মসূচী। তরুণ যুবকদের একটিই চাওয়া, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় এবং বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় পাখি সংরক্ষণের কাজে সকলে এগিয়ে আসবেন। এ বিষয়ে আটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক বলেন, পাখির নিরাপদ আবাসস্থল নির্মাণে এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। ভবিষ্যতে সবাই মিলে দেলদুয়ার উপজেলাকে পাখির অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলব।
×