ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কেশবপুরের হাজিদের হজ্বে নিয়ে প্রতারনার অভিযোগ

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

কেশবপুরের হাজিদের হজ্বে নিয়ে প্রতারনার অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেশবপুর ॥ এবারের হজ্জ্বে কেশবপুরের ৭৬ জন হাজির সাথে প্রতারনা করার অভিযোগ করা হয়েছে। দফায় দফায় হাজিদের কাছ থেকে থাকা, খাওয়ার ও চলাচলের জন্য আলাদা টাকা নিয়েও হাজিদের সাথে প্রতারনার করা হয়েছে। কেশবপুরের ৭৬ জন হাজি প্রতারক মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে প্রথমে আরবের বাংলাদেশ হজ্জ্ব কাউন্সেলর এবং দেশে ফিরে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। ভুক্তভোগি হাজিরা কেশবপুরের মোয়াল্লেম বা হজ্জ্ব প্রতিনিধি মান্নানের বিরুদ্ধে প্রায় ২৭ লাখ টাকা আতœসাৎ ও হাজিদের নানাভাবে হয়রানীর বিচার দাবি করেছেন। গত বছর উক্ত হাজিদের কাছ থেকে টাকা নিলেও ভুয়া হজ্জ্ব প্রতিনিধি মান্নান হাজিদের নিয়ে যায়নি। এবার নিয়ে গেলেও হাজিদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে বলে হাজিরা অভিযোগে জানিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে ৭৬ জন হাজি স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগে হাজিরা অভিযোগ করেছেন, কেশবপুর উপজেলার কন্দর্পপুর গ্রামের মৃত পাচু গাজির পুত্র আব্দুল মান্নান ভুয়া মোয়াল্লেম সেজে ২০১৬ সালে পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালনের জন্য চুক্তি মোতাবেক তাদের কাছ থেকে টাকা গ্রহন করে। কিন্তু তার গাফিলাতিতে গত বছর তাদের হজ্জ্বব্রত পালন করাতে নিয়ে যায়নি। এ বছর (১৭ সালে) হজ্জ্ব এজেন্সির চুক্তি মোতাবেক প্রথমে ২ লাখ ৩৫ হাজার, তারপর ২ লাখ ৪০ হাজার, তারপর ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর কেশবপুর শাাহী মসজিদে এক হজ্জ্ব প্রশিক্ষন কর্মশালায় সৌদি আরবে (মক্কায়) ফেতরা বাসার পরিবর্তে স্থায়ী এক বাসায় সকলকে রাখা হবে এবং হেরেম শরীফ থেকে ওই বাসার দূরত্ব হবে ৭শ’ থেকে ৮শ’ মিটারের মধ্যে বলে কথা দেয় কেশবপুরের ভুয়া মোয়াল্লেম আব্দুল মান্নান। আর এই ভাল বাসার জন্য সকল হাজিদের আরও ২০ হাজার করে অর্থাৎ মোট ২ লাখ ৭০ হাজার করে টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রত্যেক হাজি উক্ত টাকা পরিশোধ করেন। এরপর ১০/০৮/২০১৭ তারিখে আরবিতে লেখা একটি চিঠি দেখিয়ে উক্ত মান্নান জানায় সৌদি মোয়াল্লেম ফিস বেড়েছে তাই প্রত্যেক হাজির কাছ থেকে জোরপূর্বক আরও ১০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আদায় করে। হাজিরা জানান, আমারা পরবর্তীতে জানতে পারি সৌদি মোয়াল্লেম ফিস বা বিমান ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। তাছাড়া চুক্তি মোতাবেক স্থায়ী বাসার পরিবর্তে আমাদের মক্কা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আজিজিয়া জুনুবিয়াতে নিম্নমানের অস্বাস্থ্যকর এক বাসাতে থাকতে দেওয়া হয়। ফলে আমাদের মুল উদ্দেশ্য কাবা শরীফে ইবাদাত করায় ব্যহত হয়। এছাড়া মদিনা শরীফে ৮দিনে ৪০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নিয়ম থাকলেও সেখানে ফেৎরা ও বাসাসহ ৬ দিন রাখা হয়েছে। অভিযোগে হাজিরা জানান, হজ্জ্ব পালনকালে আমরা ৭৬ জন হাজি স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি বাংলাদেশ হজ্জ মিশনে গত ১৩-০৯-১৭ তারিখে। অভিযোগ নিয়ে আলোচনার সময় মক্কার মোয়াল্লেম হাফেজ বেলালি জানান, আঃ মান্নান হাজি প্রতি তাকে ২ লাখ ৪৪ হাজার করে টাকা দিয়েছে। অথচ আব্দুল মান্নান আমাদের কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার করে টাকা নিয়েছে। হাজিরা আব্দুল মান্নানকে দূর্নীতিবাজ ও প্রতারক মোয়াল্লেম দাবি করে তাদের অভিযোগ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ১৮ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ করেছেন। নির্বাহী অফিসার মিজানূর রহমান হাজিদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে কেশবপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রেরন করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ মিথ্যা, আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করার জন্য একটি মহল হাজিদের ব্যবহার করছেন। আমি এখানকার প্রতিনিধি মাত্র। হজ্বের যাবতীয় কার্ষক্রম, থাকা, খাওয়া সবই করেন ঢাকা এজেন্সির পরিচালক মাওলানা আমিরুল ইসলাম বেলালি। তিনি আমাকে যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবে হাজিদের তদারকি করে হজ্ব করিয়ে নিয়ে এসেছি। তার বিরুদ্ধে হাজিরা মক্কায় হজ্ব কাউন্সিলে একটি অভিযোগ করেছেন যা এখনো বিচারাধীন। থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, অভিযোগ পেয়েছি তবে বিষয়টি জটিল। হাজিদের ডেকে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×