ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ চায় না নয়াদিল্লী

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বর্মার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৬ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে বর্মার সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে ভারত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ভারত। রাখাইনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে ভারতও সহায়তা করতে চায়। এছাড়া বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু দেখতে চায় ভারত। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে চায় না দেশটি। এ ছাড়া বাংলাদেশীদের ভারতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাভেল ট্যাক্স তুলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ করেছে দেশটি। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের সময় বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে এসব আলোচনা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দু’দিনের সফর শেষে সোমবার ঢাকা ত্যাগ করেন। সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের আগেই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে আলোচনার প্রস্তুতি নেয়া হয়। সফরের প্রথম দিন রবিবার দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে ভারতের সমর্থন থাকবে বলেও জানানো হয়। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতের আলোচনা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। সুষমা স্বরাজের সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের প্রতি চাপ দেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এই পর্যায়ে ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে ভারত মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরিতে ভারতও কাজ করে চলেছে বলে জানানো হয়। গত ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাবিরোধী দমন-পীড়ন শুরুর পর ৫ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার সফর করেন। তখন দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কোন মন্তব্য না থাকলেও পরে ভারত একটি বিবৃতি দেয়। একই সঙ্গে গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত জাতিসংঘে মানবাধিকার কমিশনে একটি বিবৃতি পেশ করে। সেখানে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারত। তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা সফরের সময় রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া ও কোফি আনান কমিশনের বাস্তবায়ন চেয়েছে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে ভারতের জোরালো সমর্থন প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সুষমা স্বরাজ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বৈঠক করেছেন। তবে এই বৈঠকটি ছিল সৌজন্য বৈঠক। বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা তোলেন বেগম খালেদা জিয়া। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করে ভারত। তবে বাংলাদেশের নির্বাচন পদ্ধতি কি হবে, সেটা একান্তই বাংলাদেশের বিষয়। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে রাজি নয় ভারত। এদিকে ভারতে বাংলাদেশের ভ্রমণকারী বাড়ছে। চলতি বছর ১৪ লাখ বাংলাদেশী নাগরিক ভারতে গেছেন। এই সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। তবে স্থলপথে ভারত ভ্রমণকারীদের জন্য বাংলাদেশ সরকার জনপ্রতি ৫০০ টাকা ট্রাভেল ট্যাক্স আদায় করে থাকে। ভারত এই ট্রাভেল ট্যাক্স প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছে। কেননা ট্রাভেল ট্যাক্স উঠিয়ে দিলে বাংলাদেশী নাগরিকদের বেশি সুবিধা হবে বলে মনে করে ভারত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ রবিবার দুপুরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যৌথ পরামর্শক কমিশনের সভায় যোগ দিতে সফরে ঢাকায় আসেন। দুই দিন সফর শেষে সোমবার তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। গত এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো ভারতের কোন শীর্ষ মন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসলেন। এর আগে গত ৩ অক্টোবর ঢাকায় আসেন ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের পর চলতি বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় প্রতিবেশী দেশের মধ্যে যেসব সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়েছে, তার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দিল্লীতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তৃতীয় যৌথ কমিশনের বৈঠক হয়েছিল। সে বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী অংশ নিয়েছিলেন।
×