ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কারণ বাড়ির মালিকদের আপত্তি ও অনাস্থা

পুরান ঢাকাকে বদলে দেয়ার প্রকল্প পরিত্যক্ত

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ২১ অক্টোবর ২০১৭

পুরান ঢাকাকে বদলে দেয়ার প্রকল্প পরিত্যক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকা আধুনিক নগরে পরিণত করে পুরান ঢাকাকে বদলে দেয়ার পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ফলে বদলে যেতে চেয়েও বদলালো না পুরান ঢাকা। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উদ্যোগে আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি ও জরাজীর্ণ চেহারার পরিবর্তে থাকবে প্রশস্ত রাস্তা ও বহুতল ভবন। এ প্রকল্পের জন্য বাড়ি-জমির মালিকরা রাজি থাকলে ছোট ছোট বাড়ি ভেঙ্গে একাধিক বহুতল ভবন করার পরিকল্পনা ছিল। সেই সঙ্গে প্রাথমিকভাবে ২০০ ফুট করে বাণিজ্যিক স্থাপনা গড়ে তোলা হতো পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায়। এ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সর্বনিম্ন পাঁচ বিঘা জমি নিয়ে ব্লকভিত্তিক এলাকা গড়ে তোলা হবে। ব্লকভিত্তিক করা হবে পুরান ঢাকাকে। ওই ব্লকে স্কুল, হাসপাতাল, ৫০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা এবং এলাকার ভেতরে ৩০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার ব্যবস্থা করা, বাচ্চাদের খেলার মাঠের ব্যবস্থা করে দেয়া হবে। তখন ওই এলাকায় দুঃসহ যানজট ও জলজট হবে না। মালিকরা রাজি থাকলেই কেবল এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু বাড়ি-জমির মালিকদের অনাস্থার কারণে আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পটি আর আশার মুখ দেখল না। বাতিল করে দিতে হলো প্রকল্পটি। নগর ভবনে আয়োজিত পুরান ঢাকাকে আধুনিক শহর গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘পরীক্ষামূলকভাবে বংশাল পাইলট প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই’ বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এ প্রকল্পের বিষয়ে বাড়ি-জমির মালিকদের বিরোধিতা ও অনাস্থা থাকায় পাইলট প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি রর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন। এর আগে বংশাল এলাকার বাড়ি-জমির মালিকরা এ বিষয়ে তাদের অভিমত প্রকাশ করে প্রকল্পের বিরোধিতা করেন। ফলে তাদের কথা বিবেচনা করে বংশাল এলাকার প্রকল্পটি বাতিল ঘোষণা করেন মেয়র। মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ডিএসসিসির সাত একর খাসজমি রয়েছে নয়াবাজার ও ইংলিশ রোড এলাকায়, যা বেদখলে আছে। ডিএসসিসির ওই জমির ওপর রাজউকের আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে রাজউক। বংশাল এলাকার পঞ্চায়েত সভাপতি হাজী আওলাদ হোসেনসহ স্থানীয় বাসিন্দা হাজী রহমত উল্লাহ, হাজী নাসির উদ্দিন, হাজী মোস্তফা রাজউকের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে রাজউক অনেক খরচের সম্মুখীন হবে। এছাড়া আমাদের এলাকা পুরান ঢাকার মধ্যে অনেক উন্নত। আমরা এভাবেই ভাল আছি। আমরা আমাদের আগের ঐতিহ্যগত বাড়িতেই থাকতে চাই। সেক্ষেত্রে রাজউকের এমন প্রকল্প আমাদের দরকার নেই। ‘অন্য দেশগুলো তাদের ঐতিহ্যের এলাকাকে সংরক্ষণ করে, তাহলে আমরা কেন তা করব না? এটি করতে গেলে আমরা নানা ঝামেলায় পড়তে পারি, সেক্ষেত্রে আমাদের অনাস্থাও আছে।’ মতবিনিময় সভার শুরুতে আরবান রি-ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রজেক্টর প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রকল্পটি সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেখানে তিনি দেখান, প্রথমে ১০ দশমিক ২৭ একর জমির ওপর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেখানে একটি স্কুল, শিশু ও বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত স্থান, একটি মসজিদ স্থাপন করা হবে। এছাড়া মূল সড়ক ৪০ ফুট প্রস্থ এবং অভ্যন্তরীণ সড়ক ২০ ফুট প্রস্থ করা হবে। বংশাল এলাকায় রাজউকের এক সার্ভের তথ্য তুলে ধরে ওই প্রকৌশলী স্থানীয়দের জানান, প্রকল্প এলাকায় বর্তমানে ৩০৯টি বিল্ডিংয়ের স্থানে ২৯টি উঁচু বিল্ডিং নির্মাণ করা হবে, অন্যদিকে ৩১৬টি দোকানের স্থানে ৭৬৮টি দোকান করা হবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে। প্রকল্পের পরিকল্পনা জানানোর পর স্থানীয়রা একের পর এক প্রশ্ন রাখেন রাজউকের কাছে। কেউ জানতে চান এক কাঠা জমির ওপরে পাঁচতলা বাড়ি, তারা পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোন, এক্ষেত্রে অংশীদার কিভাবে দেবে রাজউক? আরেকজন জানতে চান, যতদিন প্রকল্প চলবে ততদিন তারা বাসাভাড়া পাবেন না, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। তারা কোথায় থাকবেন? এ সময় কি রাজউক তাদের খরচ চালাবে? এসব প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেনি রাজউক। এদিকে সভার শুরুতে মেয়র বলেন, যে কোন শহর বদলে যাওয়ার জন্য কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ বছর সময় দরকার হয়। ঢাকা শহর দীর্ঘদিন ধরে আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে। তবে গ্রামীণ জীবনযাপন থেকে রাজধানীতে জীবনযাপন অনেক খারাপ অবস্থায় রয়েছে। আরবান প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চিত্র হয়তবা কিছুটা বদলে যাবে। পরে এলাকাবাসীর বিরোধিতার কারণে বংশাল এলাকায় এ প্রকল্প বাতিল ঘোষণা করেন মেয়র। মতবিনিময় সভায় রাজউক চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান, স্থানীয় ৩৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবু সাঈদসহ ওই এলাকার প্রায় ৫০ জন বাড়ি-জমির মালিক উপস্থিত ছিলেন।
×