ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলি রহমান

অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৮ অক্টোবর ২০১৭

অর্থনীতিতে নতুন চ্যালেঞ্জ রোহিঙ্গা

রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে মিয়ানমার থেকে শরনার্থীর ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। বিভিন্ন সূত্রমতে নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে প্রায় ৪ লাখ ৩৬ হাজার শরণার্থী। বর্তমানে নতুন ও পুরনো মিলে রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ। এ অবস্থায় বাংলাদেশের আর্থ- সামাজিক অবস্থার ওপর পড়ছে বিরূপ প্রভাব। ফলে এসডিজি বাস্তবায়নসহ নানা বিষয়ে বর্তমানে দেশ রয়েছে হুমকির মুখে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় জন্মভূমি হিসেবে কল্পনা করছে। যারা ক্যাম্পে আছে তারা দিন কাটাচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে। এই সুযোগে কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল তাদের আর্থিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য রোহিঙ্গা সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পৃথিবীর কোন দেশেই অন্য দেশের নাগরিক অবৈধভাবে চলাফেরা করতে পারে না। আমাদের দেশ এ ক্ষেত্রে দিয়েছে উদারতার পরিচয়। জনবহুল এই দেশের শ্রমবাজার খুবই সংকীর্ণ। শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে দিন দিন। আশির দশক থেকে শুরু হয়েছে রোহিঙ্গা স্রোত এখনও থেমে নেই। ফলে চাপ পড়ছে আমাদের শ্রমবাজারের ওপর। কেননা এদের অধিকাংশই এদেশে স্থায়ী বসবাস করছে। কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ টাকার বিনিময়ে তাদেরকে সহায়তা করে মৎস্য শিকারসহ নানা কাজে ব্যবহার করছে। স্থানীয় হোটেল রেস্টুরেন্টে, রিক্সা চালক, দিন মজুর কুলি, শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরবর্তীতে লোকালয়ে মিশে যাচ্ছে। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের মতো দেশগুলোর সহযোগিতা ছাড়া রোহিঙ্গাদের ব্যয়ভার বহন করা বাংলাদেশের একার পক্ষে কখনই সম্ভব নয়। কিন্তু যতদ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন। এ সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা অনিবার্য। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভায় আঞ্চলিক সংঘাত ও শরণার্থী সংকটসহ ৯ ইস্যু তুলে ধরবে বাংলাদেশ। অন্য ইস্যুগুলো হচ্ছে- বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অবস্থা, কর্মসংস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক শ্রমবাজার, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। এছাড়া টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ, অবকাঠামো এবং নি¤œ আয়ের দেশগুলোর বিষয়গুলো এ ইস্যুর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এসবের পাশাপাশি ভবিষ্যতে কিভাবে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ও ঋণ বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয় নিয়েও আলোচনার কথা রয়েছে। ১৩-১৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে ২৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল গঠনসহ ইস্যুভিত্তিক প্রস্তুতি শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বার্ষিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব পাঠানো হলে ৪ সেপ্টেম্বর তা অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে ইআরডির সচিব কাজী শফিকুল আযম সম্প্রতি গণমাধ্যমে বলেছেন, চলমান ইস্যু হিসেবে রোহিঙ্গাদের বিষয়টি নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। কেননা এটা অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ। প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশকে শুধুমাত্র রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে হচ্ছে না, তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে জটিল ও দীর্ঘ এক কূটনৈতিক আলোচনায়ও লিপ্ত থাকতে হচ্ছে। মিয়ানমারের অন্য কোন প্রতিবেশীকে এ রকম জটিলতায় পড়তে হয়নি যা বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ শিথিল করে নিয়েছে। এসব দেশের নেতৃবৃন্দ নিজ স্বার্থে মিয়ানমারের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গি পালটে বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছেন। মিয়ানমারে রয়েছে বিপুল প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ। তাই উদীয়মান শক্তি চীন মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়তে চাচ্ছে। মিয়ানমার যখন বিচ্ছিন্নতাবাদের নীতি ত্যাগ করে নিজেকে খুলে দিচ্ছে এবং নতুন করে তার বৈদেশিক সম্পর্ক তৈরি করতে যাচ্ছে তখন মিয়ানমারের ওপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রতিবেশী দেশগুলো রোহিঙ্গা ইস্যুতে আরও সক্রিয় নীতি গ্রহণ ও সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে অনুরোধ করতে পারে। এর মাধ্যমে আসতে পারে একটি স্থায়ী সমাধান। রাখাইন রাজ্যের নিজ ভূমি থেকে অপসারিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের স্বর্গখ্যাত কক্সবাজারের জন্যও বিরাট হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। সম্প্রতি কক্সবাজার-টেকনাফে পর্যটকদের জন্য নির্মিত নয়নাভিরাম মেরিনড্রাইভ রাস্তার পাশে হাজার হাজার রোহিঙ্গা বসতি স্থাপন করে বসবাস শুরু করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের ভূমির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সরকার ঘোষিত অর্থনৈতিক জোনগুলোকে নিরাপদ ও বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ করার জন্য এখনই রোহিঙ্গাদের আবাসনের ব্যাপারে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। কারণ মিয়ানমার সরকারের আচরণ মোটেই সন্তোষজনক নয়। তাদের মিশন সফল করার জন্য আদৌ রোহিঙ্গাদের ফেরত নেবে কিনা সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ বিষয়। এই ইস্যু আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির যাত্রাকে যেন কোনভাবেই বাধাগ্রস্থ না করতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকেই গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।
×