ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

নারীর এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নারীর এগিয়ে চলা

যে কোন কর্মস্থলেই এখন নারীর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়। দেশের উন্নতির পেছনে নারীর অবদান ঈর্ষণীয়। কিন্তু নারীরাই সুবিধাবঞ্চিত। তাই জীবন চলার পথে হঠাৎ থেমে যেতে হয় তাদের। কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশ কর্মস্থলে নেই কোন ডে-কেয়ার সেন্টার, নেই কোন পরিবহনের ব্যবস্থা। সাধারণ মানুষের জন্যই বাসে উঠে যাতায়াত করা খুব কষ্টকর। আর নারী হলে তো বাসে ওঠা থেকে শুরু করে গন্তব্যে পৌঁছা পর্যন্ত সবটাই যন্ত্রণাদায়ক। একটি বাসে নারী, প্রতিবন্ধী ও শিশুদের জন্য মাত্র ৯টি সিট বরাদ্দ থাকে। আর সিটগুলো থাকে ইঞ্জিনের ওপরে ও পাশে। এই সিটগুলোতে বসার থেকে দাঁড়িয়ে থাকা অনেক ভাল। কিন্তু হেলপারের স্পষ্ট কথা মহিলাদের দাঁড়িয়ে নেয়া যাবে না। তাই প্রায়ই রাস্তায় দেখা যায়, নারী-পুরুষ মিলে দশজন দাঁড়িয়ে থাকলে পুরুষরা ঠিকই গাড়িতে ওঠার সুযোগ পায়। অপেক্ষমাণ থাকতে হয় অবলা নারীদের। শাহজাহানপুরের ফেরদৌসি আপাকে প্রতিদিন এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে অফিসে যেতে হয়। সকাল দশটায় অফিস হলেও প্রায়ই তার দেড়ি হয়ে যায়। ফলে মাস শেষে লেটফি বাবদ অনেক টাকা কেটে নেয় অফিস কর্তৃপক্ষ। মাঝে মাঝে খুব হতাশ হয়ে যায়। কখনও বলেই ফেলে চাকরিটা বুঝি আর করা হবে না। কিন্তু কষ্টটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাই পিছুটান ছাড়ছে না। মগবাজারের রুমানা হক অনেক মেধাবী। দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকে চাকরি করছেন। হঠাৎ বিয়ে হয়ে গেল। এক বছর পরই সে মা হয়। ফলে ছয় মাসের ছুটিও কাটিয়েছেন। অনেক চেষ্টা করেও চাকরিটা আর নিয়মিত করতে পারলেন না। সন্তানের লালন পালনের কথা ভেবে চাকরিটা ছেড়েই দিল। এভাবে অনেক মেধা থেকে আমাদের সমাজ বঞ্চিত হচ্ছে। একটি নারীর ওপর পুরুষের থেকে দায়িত্ব অনেক বেশি। সন্তান জন্মদান থেকে শুরু করে লালন-পালন সবকিছুতে নারীর ভূমিকা অতুলনীয়। তবুও তারা যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন পাচ্ছে না অনেক কর্মক্ষেত্রে। অন্যদিকে কিছু বাস মালিকপক্ষ মহিলাদের আলাদা গাড়ির ব্যবস্থা করলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প। নির্দিষ্ট কিছু রুটে এই ধরনের যানবাহন দেখা যায়। প্রতিটি মেয়ের জীবন চলার পথে থাকে অনেক স্বপ্ন, থাকে বাবা-মায়ের। সচেতন পরিবারের প্রতিটি ছেলে-মেয়ে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করছে বর্তমানে। কিন্তু মেয়েদের থেমে যেতে হয় মাঝপথে। কেননা সংসার হয় স্বামী-স্ত্রী দুজনের কিন্তু সংসারের কাজগুলো হয় শুধুু মেয়েদের। উন্নত দেশের দিকে তাকালে দেখা যায় সেখানে পরিবারের সবকাজ নারী-পুরুষ মিলে করছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক উন্নত। সেখানে নারীকে অবহেলা করা হয় না। রয়েছে পর্যাপ্ত ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা। এজন্যই এসব দেশগুলো উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে রাতারাতি। তাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। অফিস শেষে বাড়ি ফিরে দুজন মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে সংসারের কাজগুলো হাতে-হাতে করলে। একজনের ওপর চাপ পড়ে না। মনও ভাল থাকে। নিম্ন শ্রেণীর অশিক্ষিত নারীরা গৃহ পরিচারিকার কাজ করতে যেয়ে নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরা কষ্টার্জিত শিক্ষা নিয়েও বেশি দূর যেতে পারছে না প্রতিকূল পরিবেশের কারণে। উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়েরা স্বামী ভাল উপার্জন করবে তারা সন্তান লালন-পালন নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ফলে নারীরা এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিটি ধর্মেই নারীকে পূর্ণ স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। তাই সবার নৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তন প্রয়োজন। কিছু কর্মস্থলে ডে-কেয়ার থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ ব্যাপারে সরকারী নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। প্রতিটি কর্মস্থলে ডে-কেয়ার বাধ্যতামূলক করলে কোন মেয়ের কর্মব্যস্ত জীবন হয়ত মাঝপথে থেমে যাবে না। একই সঙ্গে নারীদের জন্য আলাদা পরিবহনের ব্যবস্থা আরও সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। ফলে লাভবান হবে দেশ ও দেশের অর্থনীতি।
×