ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে

শুভ সুন্দরের প্রতিমা সুদৃশ্য তোরণ, কেনাকাটার ধুম

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শুভ সুন্দরের প্রতিমা সুদৃশ্য তোরণ, কেনাকাটার ধুম

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর অভাব-অভিযোগ যতই থাকুক, উৎসবের রঙে সাজতে বিশেষ বিলম্ব হয় না। উপলক্ষ লেগেই থাকে। তবে এখন ছোট-খাট কিছু নয়, শারদীয় দুর্গোৎসবের মতো বড় বর্ণাঢ্য আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। এর পরই ঢাকে বাড়ি পড়বে। বাজবে শঙ্খ। আনন্দে ভাসবে শহর নগর। ভক্তদের দর্শন দিতে স্বর্গলোক থেকে মর্ত্যলোকে আসবেন দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা। নতুন জামা-কাপড়ে সেজে বিভিন্ন ম-প ঘুরে বেড়াবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। নাচবেন, গাইবেন। চলবে খাওয়া-দাওয়া, বেড়ানো। অন্য ধর্মাবলম্বীরাও বাদ যাবেন না। সবার অংশগ্রহণে দারুণ মুখরিত হয়ে উঠবে অসাম্প্রদায়িক বাংলা। শারদীয় দুর্গোৎসবের দীর্ঘ প্রস্তুতি। অনেক দিন ধরেই চলছে। গত মঙ্গলবার ছিল মহালয়া। সনাতন ধর্ম মতে, এদিন দেবী দুর্গা পা রাখেন মর্ত্যলোকে। ভোরে মন্দিরে মন্দিরে চ-ীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবীকে আবাহন করা হয়। ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে ২৬ সেপ্টেম্বর শারদীয় দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব সামনে রেখে সাজছে পূজা ম-পগুলো। জানা যায়, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার ৭৭টি ম-পে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীতে ম-পের সংখ্যা বেড়েছে। গত বছর ২২৬টি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবার সংখ্যাটি বেড়ে হচ্ছে ২৩১টি। ইতোমধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন গলির মুখে দাঁড়িয়ে গেছে সুদৃশ্য তোরণ। কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে আলোকসজ্জার কাজ। আর তখন উৎসবের রংটা সবার চোখে পড়বে বৈকি! রাজধানীর ম-পগুলোতেও চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। অধিকাংশ ম-পে মূল কাঠামো নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে রং করা ও সাজসজ্জার কাজ। ভক্তের রংতুলিতে আপন চেহারায় উদ্ভাসিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা। ষষ্ঠীর দিন চোখ এঁকে দেয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হবে প্রতিমা নির্মাণের সকল কাজ। ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী মন্দির ঘুরে দেখা যায়, প্রতিমা গড়ার কাজ মোটামুটি শেষ হয়েছে। পূজা ম-পের সামনের খোলা জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে নতুন প্রতিমা। ২৫ বছর ধরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রতিমা বানাচ্ছেন শিল্পী সুকুমার পাল। তার হাতের ছোঁয়ায় মূর্ত হয়েছেন দেবী। এখানে রাখা হয়েছে গত বছরের প্রতিমাও। ষষ্ঠীর দিন প্রথা অনুযায়ী আগের বছরের প্রতিমা বিসর্জন দিয়ে নতুন প্রতিমা উঠানো হবে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় ম-পটি তৈরি করা হয় বনানী মাঠে। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। অনেক দিন ধরে চলছে ম-প নির্মাণের কাজ। বিশাল এলাকা নিয়ে গড়া ম-পের পুরো কাজ এখনও শেষ হয়নি। সূক্ষ্ম নক্সা ফুটিয়ে তোলার কাজ করছেন শিল্পীরা। রাজধানীর অন্য ম-পগুলোতেও চলছে মহাউৎসবের প্রস্তুতি। এদিকে, উৎসব সামনে রেখে চলছে জমজাট কেনাকাটা। ঢাকার প্রায় সব মার্কেট শপিংমলে এখন বাড়তি ভিড়। গত কয়েকদিন বসুন্ধরা সিটি শপিংমল ঘুরে দেখা যায়, উৎসবের আমেজ। নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য নতুন পোশাক চাই। সেই পোশাকের খোঁজ চলছে। মোহাম্মদপুর থেকে পূজার কেনাকাটা করতে এসেছিলেন শ্যামল সরকার। একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ অফিসে কাজ করেন। বললেন, আমাদের কেনাকাটা আরও আগেই শেষ হয়েছে। পূজার ছুটিতে গ্রামের বাড়ি যাব। বাবা-মা সেখানে থাকেন। তাদের জন্য শাড়ি-পাঞ্জাবি কিনতে এসেছি। মগবাজারের আড়ংয়ের শোরুমে কথা হয় নন্দিতা ও আরতির সঙ্গে। দুই বোন এসেছিলেন শাড়ি কিনতে। ছোট বোন আরতি বললেন, পূজাতে শাড়ি না হলে হয় না। সাজটা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এ কারণেই শাড়ি কিনতে আসা। শাড়ি কেনার পর এর সঙ্গে মিলিয়ে অন্য কেনাকাটা করবেন বলে জানান তিনি। আলাদা করে বলতে হয় শাঁখারীবাজারের কথা। এখান থেকে পরিবারের নারী সদস্যরা নতুন করে শাঁখা গড়ে নিচ্ছেন। ছোট ছোট দোকানগুলোতে মেয়েদের প্রাণোচ্ছ্বল উপস্থিতি। কেউ শাঁখা হাতে পরছেন। কেউ খুলছেন। চলছে দরদাম। বীথিকা রানী নামের এক মাঝবয়সী নারী বললেন, শাঁখা সব সময় পরা হয় না। তবে এটি আমাদের ঐতিহ্য। পূজায় পরি। বাসায় পুরনো শাখা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, পূজা উপলক্ষে নতুন শাঁখা কিনেছি। পূজার জন্য নানা উপকরণেরও প্রয়োজন হয়। এসব উপকরণের বিপুল সম্ভার শাঁখারীবাজারে। প্রতিমা সাজানোর শাড়ি, দেবী দুর্গার মাথার মুকুট, গলায় পরানোর রঙিন হারÑ কী নেই? সবই জানান উৎসবের আগমনী ঘোষণা করছে।
×