ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নিট ব্যাংকঋণ কমে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সরকারের ব্যাংক ঋণ কমছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করেই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার। ঈদের আগে ও পরে মাত্র চার কার্যদিবসেই নিট ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়া হয়েছে। তবে ঈদ পরবর্তী তৃতীয় কার্যদিবস থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের চাহিদা আবার কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঈদের আগে ও পরে এই চার কার্যদিবসে সরকারের ব্যয় বাড়লেও আয় অনেক কম হয়েছে। ফলে এ সময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিতে হয়েছে সরকারকে। তবে এখন আবার তা কমতে শুরু করেছে এবং বছর শেষে এটা লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই থাকবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা। প্রতি বছরই বড় অঙ্কের ঘাটতি রেখে বাজেট পেশ করে আসছে সরকার। এ ঘাটতি মেটানো হয় দুটি উৎস থেকে। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক খাত। বৈদেশিক খাত থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা পাওয়া না গেলে অভ্যন্তরীণ উৎসের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় সরকারকে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে রয়েছেÑ ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র খাত। চলতি অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা ঋণ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ব্যাংকের বাইরে সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য উৎস থেকে সংগ্রহ করা হবে ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। সাধারণত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারী খাত নিরুৎসাহিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু দীর্ঘ বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকিং খাতে প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য থাকায় এ খাতে চাহিদামাফিক ঋণ জোগানে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রয়োজন না হওয়ায় চলতি অর্থবছরের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকাকে কোন ঋণ করতে হয়নি। উল্টো আগের নেয়া ঋণ শোধ দেখানোয় এ সময় পর্যন্ত ব্যাংকঋণ ঋণাত্মক ধারায় ছিল। এর পরিমাণ ৯২১ কোটি টাকা। কিন্তু ঈদের আগের শেষ দুই কার্যদিবস ৩০ ও ৩১ আগস্ট এবং ঈদ পরবর্তী প্রথম দুই কার্যদিবস ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৭ হাজার ৮২০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। তবে ঈদ পরবর্তী তৃতীয় কার্যদিবস ৫ সেপ্টেম্বর থেকে আবার ব্যাংকঋণ কমতে শুরু করেছে। ফলে চলতি অর্থবছরে ৩০ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের নিট ব্যাংকঋণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৩১৩ কোটি টাকা। আর দেশের তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যাংকঋণ নেয়ার চেয়ে শোধের পরিমাণ আরও বেশি ছিল। ঐ সময় ব্যাংকঋণ শোধের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার মোট ঋণ নিয়েছে ৯৭ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছর শেষে ছিল ৮৯ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৪২ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ছিল ১৫ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে তফসিলী ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের নেয়া মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৭৭ হাজার ২৪০ কোটি টাকা; যা গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত ছিল ৭৩ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকা। বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে গত অর্থবছরে মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। তবে এবার সঞ্চয়পত্র বিক্রি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ চাহিদা কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের শুরুতে সরকার কিছু ঋণ করলেও পরে তা শোধ করায় অর্থবছর শেষে তা ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। এর পরিমাণ ঋণাত্মক ১৭ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা ছিল। যদিও ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার প্রায় ৪ হাজার ৩২৬ কোটি টাকার ঋণ গ্রহণ করেছিল। তবে গেল অর্থবছরের ঘাটতি অর্থায়নের সিংহভাগ অর্থাই এসেছে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস্য থেকে। বিশেষ করে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকারের রেকর্ড পরিমাণ ঋণ আসে। এর পরিমাণ রেকর্ড ৫৩ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। সরকারের ব্যাংক ঋণের তথ্য পর্যালোচনা আরও দেখা যায়, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে কোন ঋণ না নিয়ে উল্টো ৪ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়। এরপর টানা তিন অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার বড় অঙ্কের ঋণ করেছিল। ২০১০-১১ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে সরকার নিট ১৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা ঋণ নেয়। পরবর্তী অর্থবছরে নেয়া হয় ১৮ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা আরও বেড়ে হয় ১৭ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা। তবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যাংকঋণ কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা। আর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা ঋণাত্মক ধারায় নেমে আসে। ওই অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ঋণাত্মক ৭ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা।
×