ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পরিচয় গোপন করে সুনামগঞ্জে ১২ রোহিঙ্গা, টেকনাফে ফেরত

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পরিচয় গোপন করে সুনামগঞ্জে ১২ রোহিঙ্গা, টেকনাফে ফেরত

বিডিনিউজ ॥ মিয়ানমারে অব্যাহত সেনা অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে সুনামগঞ্জে পরিচয় গোপন করে থাকা একটি রোহিঙ্গা পরিবারের ১২ জনকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার ওসি নন্দন কান্তি ধর জানান, শুক্রবার দুপুরে তাদের পুলিশ প্রহরায় টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার গোপন সংবাদ পেয়ে উপজেলার বড়দল উত্তর ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে পুলিশ তাদের আটক করে বলে জানান তিনি। এরা হলোÑ আবদুস সবুর (৫১), তার স্ত্রী আমিনা বেগম (৪২), ছেলে আবদুল হালিম (২৩), মেয়ে তালিহা আক্তার (১৫), মেয়ে হারিসা আক্তার (১৩), মেয়ে হালিমাতুস সাহিয়া (১১), মেয়ে সাবিহা আক্তার (৯), ছেলে আসলম শাহ (৭), মেয়ে উম্মা বেগম (২), আবদুল হালিমের স্ত্রী উম্মুল খাইরিন (২২) ও মেয়ে মোশারফা (১) এবং হালিমের শ্যালক কাউছার মিয়া (৭)। তাদের বাড়ি মিয়ানমারের আকিদাবাদ জেলার মংদু থানার কুয়ান শিবং গ্রামে।মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে কয়েকটি স্থান থেকে ইতোমধ্যে আরও বেশকিছু রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওসি নন্দন কান্তি ধর বলেন, স্থানীয় লোকদের কাছে খবর পেয়ে বড়দল ইউনিয়নের গুটিলা গ্রামের তোতা মিয়ার বাড়ি থেকে রাত ৯টায় তাদের আটক করে তাহিরপুর থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। ‘তাদের কাছ থেকে বাদাঘাট বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান স্বাক্ষরিত পাঁচটি নাগরিক সনদ ও তিনটি জন্মসনদ উদ্ধার করা হয়েছে।’ ওসি বলেন, স্থানীয় তোতা মিয়ার এক ছেলে চট্টগ্রামে পড়াশোনা করেন। সেখানেই রোহিঙ্গা নাগরিক আবদুস সবুরের দুই ছেলেও পড়াশোনা করতেন। সেখানে তাদের পরিচয় ও বন্ধুত্ব হয়। ‘ওই ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরে কয়েক মাস আগে এ পরিবারটি চট্টগ্রাম থেকে গুটিলা গ্রামে তোতা মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়।’ তোতা মিয়ার পরিবার তাদের চট্টগ্রামের বাসিন্দা বলায় স্থানীয়রা প্রথমে তাদের চিনতে পারেনি। পরে বিষয়টি প্রকাশ পায় বলে জানান ওসি নন্দন। নাগরিক সনদ ও জন্মসনদ দেয়ার বিষয়ে বাদাঘাট বড়দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আফতাব উদ্দিন বলেন, ‘ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মনির উদ্দিন তাদের সনদ দিতে বলেন, তাই আমি সনদে স্বাক্ষর দিয়েছি।’ গত রবিবার ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ইউনিয়নের চরশাহাভিকারী গ্রামে একটি বাড়িতে ১৩ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার আশ্রয় নেয়। বিয়ের সূত্রে ওই পরিবারের সঙ্গে তাদের আত্মীয়তা রয়েছে। বুধবার মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার চারিগ্রাম ও ধল্লা এলাকা থেকে ২০ রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাদের কক্সবাজারের উখিয়ায় পাঠিয়ে দেয়া হয়। একই দিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা তিন রোহিঙ্গা ও তাদের চার স্বজনের সঙ্গে পতেঙ্গায় আটক ১৪ জনকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ওই দিনই চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে আট রোহিঙ্গা ছাড়া পেয়েছিল। তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া ও চান্দগাঁও এলাকা থেকে আটক ১৬ জনকে টেকনাফ পাঠিয়ে দেয়া হয়। মঙ্গলবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীর ফটিকা ইউনিয়ন থেকে ১৯ জন এবং রবিবার সীতাকু- উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়ন থেকে ১৮ জনকে আটক করে টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়। মিয়ানমারের রাখাইনে সেনা নির্যাতনের মুখে গত দুই সপ্তাহে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
×