ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১২ আগস্ট ২০১৭

কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা হচ্ছে

বিভাষ বাড়ৈ ॥ অবৈধ কোচিং বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যেসব শিক্ষক এসব অনৈতিক কাজে জড়িত তাদের প্রতিষ্ঠানের নামসহ তালিকা পাঠাতে শিক্ষা অফিসার, প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষদের কাছে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। অধিদফতরের নয়টি আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসে দেয়া হচ্ছে বিশেষ চিঠি। কোন শিক্ষক কোথায় কোচিং করান, কতজন শিক্ষার্থী পড়ান, কে কোচিং সেন্টার খুলে ব্যবসা করছেন, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কোন শিক্ষক কোচিংয়ে আসতে বাধ্য করছেন-এসব প্রশ্নের লিখিত উত্তর নিচ্ছে সরকার। কোচিং বাণিজ্যে জড়িত শিক্ষকদের খোঁজে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের খবরের মধ্যেই সারাদেশের কোচিংবাজ শিক্ষকদের তালিকা করার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে অধিদফতর। শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে শিক্ষকরা কোন কোন এলাকায় কোচিং করাচ্ছেন বা কোচিং-এ গিয়ে পড়াচ্ছেন তার বিস্তারিত তথ্য নির্ধারিত একটি ছকে জানাতেও বলা হয়েছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান শুক্রবার জনকণ্ঠকে তাদের পদক্ষেপের বিস্তারিত তুলে ধরে বলেছেন, আমরা কোচিংবাজ শিক্ষকের তালিকা করা শুরু করেছি। বৈধভাবে হোক আর অবৈধভাবেই হোক প্রথমত আমরা কোচিং করছেন এমন সকল শিক্ষকের তালিকা করতে চাই। ইতোমধ্যেই আমরা অনেক শিক্ষকের তালিকা পেয়েও গেছি। আমরা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কোচিংয়ে জড়িত সকল শিক্ষকের তালিকাসহ তথ্য দিতে বলেছি। এছাড়া জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছেও একই আদেশ যাচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার মাধ্যমে তালিকা আনা হচ্ছে যাতে পরে ভালভাবে যাচাই বাছাই করা যায়। সকল তালিকা মিলিয়ে দেখা হবে বলে জানান মাউশির মহাপরিচালক। জানা গেছে, মাউশির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডেকে সারা দেশের কোচিং সেন্টারের নাম, অবস্থান, মালিক, পরিচালক ও এর সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের নাম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামসহকারে তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন মহাপরিচালক। অধিদফতরের দেশের নয়টি আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালকদের কাছেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আদেশের পর দু’একটি অঞ্চলের কর্মকর্তা মাউশির কাছে কোচিং সেন্টারের নাম পাঠিয়েছেন। নির্দেশের পর কাজ সমন্বয়ের জন্য মাউশির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সহকারী পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কোচিং সেন্টারের নাম, অবস্থান, ওইসব কোচিং এ কোন কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোচিং করান, তাদের নাম ও স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার নামের একটি ফরমেট তৈরি করা হয়েছে। চিঠি আকারে ওই ফরমেটটি অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। জানতে চাইলে এ বিষয়ে অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক এলিয়াছ হোসেন বলেন, কোচিংবাজ শিক্ষকের তালিকা করতে ইতোমধ্যে আমরা মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছি। দু’একটি অঞ্চল মাত্র কয়েকটি কোচিং সেন্টারের নাম পাঠিয়েছে। একটি ফরমেট তৈরি করা হয়েছে। সেখানে কোচিংবাজ শিক্ষকদের তালিকা করা হবে। মাউশির হঠাৎ কঠোর অবস্থানের বিষয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তার এক নোটে সারাদেশের কোচিংবাজ শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারের নামের তালিকা করতে মাউশির মহাপরিচালকে নির্দেশ দেন। মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো ওই নোটে শিক্ষামন্ত্রী লিখেছেন, শিক্ষকরা আমাদের মূল শক্তি, নিয়ামক শক্তি। তাদের ভূমিকা ছাড়া কোন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে কিছু অসৎ লোক মহান এই পেশায় ঢুকে পড়েছেন। এসব শিক্ষক তাদের নিজেদের শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেয়ার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। দুর্নীতি, প্রশ্ন ফাঁস, টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর বলে দেয়া, ক্লাসে না পড়িয়ে প্রাইভেট কোচিংয়ে বাধ্য করা, প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার হীন অসৎ পথে চলেছেন। মন্ত্রী আরও বলেন, গুটিকয়েক শিক্ষকের কারণে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের সম্মানহানি হচ্ছে। শিক্ষকদের মর্যাদা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষার জন্য এসব দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের তালিকা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা খুবই জরুরী। এ ধরনের শিক্ষকদের সবার তালিকা করতে হবে। মন্ত্রী তার নোটে দেশের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে স্থায়ী কোচিং সেন্টারের ঠিকানা, মালিক-পরিচালক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের নাম ও তথ্য সংগ্রহ করে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। মন্ত্রীর নির্দেশের পরই কোচিংবাজ শিক্ষক ও কোচিং সেন্টারের তালিকা তৈরি করতে শুরু করেছে মাউশি। এই মুহূর্তে মহাপরিচালক নিজেই এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক তদারকি করছেন বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মহাপরিচালক প্রফেসর ড. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, যেসব শিক্ষক কোচিং ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছেন, তাদের তালিকা করতে মাঠ পর্যায়ে নির্দেশনা পাঠানো হচ্ছে। যারা এ তালিকায় পড়বেন, কাউকে এবার ছাড় দেয়া হবে না। তালিকা করে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তবে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে এ বিষয়ে তিনি বলেন, নীতিমালা অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, প্রথমত তালিকা চাই। কারণ আমাদের হিসেবটা জরুরী। কারণ আজ যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে কোচিং করানো শিক্ষকের তালিকা চান তাহলে আমরা দিতে পারবো না। তাই প্রথমেই একটা তালিকা হচ্ছে। যে যেভাবেই কোচিং করাক না কেন তালিকায় নাম আসবে। নীতিমালা মেনে করলেও নাম আসবে। নাম আসার পর দেখা হবে কে কিভাবে কোচিং করান। দুদক অভিযান চালাচ্ছে বলে বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে মহাপরিচালক বলেন শুনেছি। কিন্তু প্রথমেই তালিকা দরকার। দুদকের পক্ষ থেকেও আমাদের কাছে বিভিন্ন সময় তালিকা চাওয়া হয়। তবে আমাদের তালিকা তৈরির সঙ্গে দুদুকের পদক্ষেপের কোন সম্পর্ক নেই। দুটি আলাদা পদক্ষেপ।
×