ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিকার্কের হৃদয় ভেঙ্গে ইতিহাস গড়লেন গালিয়েভ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ আগস্ট ২০১৭

নিকার্কের হৃদয় ভেঙ্গে ইতিহাস গড়লেন গালিয়েভ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইতিহাস নতুন করে স্পর্শ করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিলেন ওয়েড ভ্যান নিকার্ক। ৪০০ মিটার দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ২০০ মিটার স্প্রিন্টে স্বর্ণপদক জিতলেই ১৯৯৫ সালে সাবেক মার্কিন দৌড়বিদ মাইকেল জনসনের সমকক্ষ হতেন তিনি ডাবল জয়ে। স্বপ্নটা এবার অত্যধিক রঙিন ছিল এ দক্ষিণ আফ্রিকান দৌড়বিদের চোখে। কারণ এবার ২০০ মিটার স্প্রিন্টে কিংবদন্তি উসাইন বোল্ট, জাস্টিন গ্যাটলিন, আসাফা পাওয়েল, ইয়োহান ব্লেক, তরুণ উদীয়মান ডি গ্রাসি, আকানি সিমবিন কেউ নেই। কিন্তু সেই নিকার্কের হৃদয় ভেঙ্গে গড়ে উঠেছে আরেক ইতিহাস। সবাইকে বিস্মিত করে সেই ইতিহাস রচনা করেছেন আজারবাইজান বংশোদ্ভূত তুরস্কের স্প্রিন্টার রামিল গালিয়েভ। তিনি ২০.০৯ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক জয় করেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপস আসরে এটিই প্রথম স্বর্ণপদক জয় তুরস্কের। অপরদিকে ট্রিপল জাম্পে তৃতীয়বারের মতো বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিশ্চিয়ান টেইলর। আর মহিলাদের ৪০০ মিটার হার্ডলসে ফেবারিট যুক্তরাষ্ট্রের দালিলাহ মোহাম্মদকে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন তারই স্বদেশী কোরি কার্টার। ফাঁকা মাঠে অন্যতম ফেবারিট হিসেবে নিকার্কের ইতিহাস গড়ার দিকে দৃষ্টি ছিল সবার। ৪০০ মিটারে এবার স্বর্ণপদক জিতেছেন অলিম্পিকেও স্বর্ণজয়ী এ দৌড়বিদ। ভালভাবেই উঠে গেছেন ২০০ মিটারের ফাইনালেও। এর মধ্যে আবার কিংবদন্তিরা, ফেবারিট ও অভিজ্ঞরা এবার অনুপস্থিত এই ইভেন্টে। সবাই একটি রেকর্ড ছোঁয়া দেখতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছিলেন লন্ডন অলিম্পিক স্টেডিয়ামের দিকে। কিন্তু রেস শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তেই দর্শকরা দুয়োধ্বনি দিতে দিতে মাঠ ত্যাগ করতে শুরু করেন। কারণ বেশ কিছুটা পিছিয়ে থেকে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে ছিলেন তিনি। জিতে যাচ্ছিলেন গালিয়েভ। শেষ পর্যন্ত তিনিই জিতলেন ২০.০৯ সেকেন্ড টাইমিং নিয়ে। নিকার্ক শেষ পর্যন্ত ২০.১১ সেকেন্ড সময় নিয়ে রৌপ্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকেন। ডাবলের স্বপ্ন ভেস্তে যায় তার। ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জেরিম রিচার্ডস সমান টাইমিং নিয়েও বিচারকদের রায়ে ফটো ফিনিশে ব্রোঞ্জ জেতেন। গালিয়েভের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরই তুরস্কের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তাকে মুঠোবার্তায় এবং ফোন করে অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসা করেছেন। প্রেসিডেন্ট রিসেপ এরদোগান টুইটারে লিখেন, ‘রামিল গালিয়েভকে উষ্ণ অভিনন্দন। সে আমাদের সবাইকে গর্বিত করেছে ২০০ মিটারে স্বর্ণপদক জিতে।’ ২৭ বছর বয়সী গালিয়েভ ২০১১ সালে তুরস্কের নাগরিকত্ব লাভ করেন। এর দুই বছর পর তিনি দেশটির পতাকাতলে প্রতিযোগিতা করার অনুমতি লাভ করেন। আর সেই গালিয়েভ তুরস্ককে করলেন সবচেয়ে গর্বিত। কারণ দেশটির প্রথম পুরুষ এ্যাথলেট হিসেবে বিশ্ব আসরে পদক জয়ের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। আর দেশটির জন্য প্রথমবার কোন স্বর্ণপদক জেতার রেকর্ডও গড়লেন তিনি। অবশ্য গালিয়েভ তার জন্মভূমিকে ভোলেননি জেতার পর। তিনি পুরো মাঠ চক্কর দিয়েছেন তুরস্কের পতাকা হাতে নিয়ে ও আজারবাইজানের পতাকা গায়ে জড়িয়ে। কারও চোখে ফেবারিট দূরের কথা ভাবনাতেও ছিলেন না গালিয়েভ। কিন্তু সেই তিনিই জিতে সারাবিশ্বকে হতচকিত করেছেন। এ বিষয়ে গালিয়েভ বলেন, ‘এটা কোন চমক নয়। আমি জিততে চেয়েছিলাম। আর এই বছর সেটা খুবই সম্ভব বলেই আমার মনে হয়েছিল এবং সেটা আমি করেই ফেললাম। আমি নিজের ওপর বিশ্বাস করি। এই যাত্রাটা বেশ কঠিন ছিল। যখন দৌড়ানোর জন্য নামা হয় তখন নিজের সর্বোচ্চের বেশি নিংড়ে দিতে হয়।’ ইতিহাস হাতছাড়া হওয়ার পর নিকার্ক বলেন, ‘আমি কখনও চেষ্টা করিনি উসাইনের জায়গা পূরণ করতে। কিংবা মাইকেলকে ছুঁতে চাইনি। আমি ইতোমধ্যেই অনেক আধিপত্য, কঠোর শ্রম ও ভাল নৈপুণ্য দেখিয়েছি নিজস্ব অবস্থান ও ভাবমূর্তি তৈরির ক্ষেত্রে।’ মহিলাদের ৪০০ মিটার হার্ডলসে সবার নজর ছিল যুক্তরাষ্ট্রের দলিলাহর দিকে। কারণ তিনি গত অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছিলেন। কিন্তু তাকে চমকে দিলেন কোরি কার্টার। ফুটবলের প্রতি দারুণ আসক্তি ছিল কোরির। কিন্তু এ্যালিসন ফেলিক্সের ভাই ওয়েস ফেলিক্সের অনুপ্রেরণায় তিনি এ্যাথলেটিক্সে আসেন। আর সেটাই তাকে এখন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করল। ৫৩.০৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে শেষ করে তিনি স্বর্ণপদক জয় করেন। আর দলিলাহ ৫৩.৫০ সেকেন্ড টাইমিংয়ে রৌপ্য এবং জ্যামাইকার রিসতানান্না ট্রেসি ৫৩.৭৪ সেকেন্ড সময় নিয়ে ব্রোঞ্জ জয় করেন।
×