ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আরও বেশ কয়েক বছর খেলার আশা

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছর পূর্তি মাহমুদুল্লাহর

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ২৬ জুলাই ২০১৭

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছর পূর্তি মাহমুদুল্লাহর

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ভাল লাগছে। বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ১০টা বছর পার করলাম। চেষ্টা করব আরও বেশ কয়েক বছর যাতে পারফর্ম করে যেতে পারি।’ কথাগুলো বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ বছর পূর্তির দিনে এমন আশাই প্রকাশ করলেন মাহমুদুল্লাহ। সঙ্গে এই ১০ বছরে তার অনুভূতির কথাও যোগ করলেন, ‘আমার প্রতিটি দিনই চ্যালেঞ্জিং। আপনি কখনই স্থায়ী হতে পারবেন না। যতদিন যাবে আপনাকে নিয়ে প্রতিটি দল ততোই ওয়ার্ক আউট করবে।’ দশ বছর পূর্তির দিনে আবার একটি সুসংবাদও মিলেছে। অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজকে সামনে রেখে ফিটনেস ক্যাম্প করছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ক্যাম্পে অনুশীলন করতে গিয়ে রবিবার ইনজুরিতে পড়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। জিমনেশিয়ামে ওজন তুলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। পিঠের মাংশপেশিতে টান লাগে তার। ওয়েট ট্রেনিং করতে গিয়ে পেশিতে টান লাগে। শুরুতে অল্প ব্যথা অনুভূত হয়। এরপর ধীরে ধীরে ব্যথা বাড়তে থাকে। পরে মাহমুদুল্লাহকে দ্রুত এ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরীক্ষা করে দেখা হয়। চোট গুরুতর নয়। আজ ফিটনেস ক্যাম্পেও ফিরবেন মাহমুদুল্লাহ। নিজেই জানিয়েছেন, ‘সকালে ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম পরীক্ষা করে দেখেছেন। এই চোট খুব একটা গুরুতর নয়। অবশ্য এখনও কিছুটা ব্যথা আছে। ব্যথা আর না বাড়লে আগামীকাল (আজ) থেকেই অনুশীলনে নামতে পারব বলে আশা করছি।’ আজ শুধু সাইক্লিং করবেন মাহমুদুল্লাহ। ১০ বছর পূর্তির দিনে ভাল সংবাদই পেলেন তিনি। সেই দশ বছর শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই। কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেন মাহমুদুল্লাহ। জাতীয় দলে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে জড়ান। সেই থেকে মাহমুদুল্লাহ এগিয়ে চলেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। তা জয় করার চেষ্টা করে চলেছেন। জয় করছেনও। প্রথম ম্যাচেই ৩৬ রান ও ২ উইকেট নিয়ে অলরাউন্ডারের ভূমিকায় নিজেকে পরিচিত করে তুললেও সময়ের পরিক্রমায় এখন যেন ব্যাটসম্যান হয়েই রয়েছেন মাহমুদুল্লাহ। একই বছর সেপ্টেম্বরে টি২০ অভিষেক হয় তার। তারও প্রায় দুই বছর পর ২০০৯ সালের জুলাইয়ে টেস্ট অভিষেক হয়। এই সময়ে অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হয়েছে মাহমুদুল্লাহকে। কখনই ভেঙ্গে পড়েননি। তারকাখ্যাতি এতটা গায়ে মাখেনি। নিজে থেকেই যেন অন্তরালে থাকতে পছন্দ করেন। তবে এতদিনের ক্যারিয়ারে সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শততম টেস্টের আগে যেন ভেঙ্গে পড়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ। এমন একটি ম্যাচের আগে মাহমুদুল্লাহকে দলেই রাখা হয়নি। এমনকি তখন শোনা গিয়েছিল হাতুরাসিংহে শ্রীলঙ্কা থেকে মাহমুদুল্লাহকে বাংলাদেশেই পাঠিয়ে দিতে চেয়েছেন। ওয়ানডে দলেও রাখতে চাননি। শেষ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ নিজেকে প্রমাণ করেছেন। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জেতা ম্যাচটিতে সেঞ্চুরি করে বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলে তার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। তিনি যে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, সেই প্রমাণ দিয়েছেন। ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটি করেছেন মাহমুদুল্লাহ। যে তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন তার প্রতিটিই দেশের বাইরে। তিনটিই আবার আইসিসি টুর্নামেন্টে। দুটি বিশ্বকাপে, একটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। টেস্টে একটিই মাত্র সেঞ্চুরি পেয়েছেন। দেশের মাটিতে এখন পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহর কোন সেঞ্চুরি নেই। মাহমুদুল্লাহ স্বাভাবিকভাবেই সেই সেঞ্চুরির খোঁজে আছেন। মাহমুদুল্লাহ কয়েকটি ম্যাচ খারাপ খেললেই সমালোচনায় পড়েন। দলে তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ওঠে প্রশ্ন। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর হয়তো এ প্রশ্ন একটু কমবে। কিন্তু এই ১০ বছরে নিজেকে অনেক বদলে ফেলেছেন তিনি। ১০ বছর আগের মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে এখন অনেক পার্থক্য। সময় যত গড়িয়েছে, নিজেকে আরও পরিণত করেছেন। মাহমুদুল্লাহই যেমন বললেন, ‘আমি মানসিকভাবে এখন অনেক গোছালো। এটা তাই বুঝতে পারি যে, আমার কোথায় শক্তি আছে। এগুলো নিয়ে সবসময় কাজ করি। প্রতিনিয়তই কাজ করতে হবে। আমি জানি কষ্টের কোন বিকল্প নেই। এটা ধরে রাখাই জরুরী।’ মাহমুদুল্লাহ ৩৩ টেস্টে একটি সেঞ্চুরিসহ ৩০.১৫ গড়ে ১৮০৯ রান করেছেন। ১৪৫ ওয়ানডে খেলে তিনটি সেঞ্চুরিসহ ৩৪.৬৭ গড়ে ৩১৫৫ রান করেছেন। আর ৫৮টি টি২০ খেলে ২০.২৫ গড়ে ৮১০ রান করেছেন। আরও বেশ কয়েক বছর পারফর্ম করে যেতে চান মাহমুদুল্লাহ।
×