ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সবচেয়ে ‘নিকৃষ্টতম বাজেট’॥ এরশাদ

প্রকাশিত: ০১:০৭, ২৮ জুন ২০১৭

সবচেয়ে ‘নিকৃষ্টতম বাজেট’॥ এরশাদ

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রস্তাবিত বাজেটকে সবচেয়ে ‘নিকৃষ্ট বাজেট’ আখ্যায়িত করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, অর্থমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটকে তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ বাজেট বললেও এটি জনগণের কাছে সবচয়ে নিকৃষ্টতম বাজেট। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলেছে এটি দুঃসহ বাজেট। শ্রমজীবি মানুষ এই বাজেট নিয়ে আতঙ্কে আছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ সালের বাজেটের ওপর আলোচনার সমাপনি দিনে বক্তব্যে রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদও সমাপনি আলোচনায় অংশ নেন। বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। গত বছর অর্থমন্ত্রী এই ঘাটতির ৬৫ ভাগ পূরণ করতে পেরেছেন। এবারের বাজেটের পুরো ঘাটতি পূরণ করতে পারবেন না। অর্থমন্ত্রী অবাস্তব ভিত্তির ওপর দাড়িয়ে বাজেট দিয়েছেন। প্রবৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী নতুন বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ৭.৪ শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বেসরকারি খাতে ৬৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। আর সরকারি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের কোন হিসাব দেখছিনা। অর্থমন্ত্রী বিনিয়োগ ছাড়া এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করবেন কি করে? মানি মার্কেটের অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, মানি মার্কেট থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। সীমাহীন লুটপাট হয়েছে ব্যাংকিং খাত থেকে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলেননি। বেসিক ব্যাংকের অবস্থা খুব খারাপ। কারা এই ব্যাংক লুটপাট করেছেন তাদের নাম প্রকাশ করুন। শেয়ার বাজার প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, পুঁজিবাজার থেকে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেছে। বিনিয়োগকারীরা সবকিছু হারিয়ে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। কিন্তু সরকার এ ব্যাপারে কোনই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। শক্তিশালী শেয়ার বাজার ছাড়া সমৃদ্ধশালী অর্থনীতি হবে না। শিক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁস আর কোচিং বাণিজ্যের কারণে শিক্ষায় ধ্বস নেমেছে। ভাবতেও ঘৃণা হয় একজন শিক্ষক কীভাবে নকল সরবরাহ করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ- ‘গরু হোক, ছাগল হোক- সবাইকে পাশ করাতে হবে। দেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি? ’ এরশাদ দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডকে রংপুরে নিয়ে আসার দাবি জানান। তিনি রংপুরে একটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানিয়ে বলেন, দেশের চিকিৎসকদের ওপর আস্থা না থাকার কারণে বৃহৎ অংশের মানুষ বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছে। কারণ দেশের অনেকেই শুধুমাত্র কমিশনের খাওয়ার জন্য ইচ্ছেমত টেস্ট দেয়। দেশের গরীব মানুষ কোথায় যাবে? অর্থমন্ত্রী হঠাৎই রেগে উঠেন, তাঁর মেডিটেশন করা উচিত। মানুষ স্বাস্থ্যের কারণে ব্যায়াম করে, তার ওপরও কর বসাচ্ছেন কেন? হঠাৎ করেই খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেল কেন সে ব্যাপারে সঠিক তথ্য দেশবাসীকে জানানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, চালের মূল্যে ৫০ টাকা হয়ে গেল। গরীব মানুষ খুব অসহায়। দ্রুত চাল আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করতে হবে। কঠোর বেকারত্ব চলছে। একজন কনস্টেবলের চাকুরি নিতে ৫ লাখ, শিক্ষক নিয়োগে ১০ লাখ টাকা দিতে হচ্ছে। এটা ভীষণ লজ্জ্বার। বিমানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বহনকারী বিমানেও নাট-বল্টু খোলা পাওয়া যায়। এ কারণে গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশ বিমানে চড়ি না। এ বিষয়ে অধিক নজর দেওয়া উচিত। তিনি রংপুরে শিক্ষাবোর্ড, রংপুর মেডিক্যালকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত এবং হাইকোর্টের বেঞ্চ স্থাপনের দাবী জানান। বিড়ি শিল্প প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ২ বছরের মধ্যে বিড়ি থাকবে না। তিনি সিগারেটের ওপর ২ শতাংশ এবং বিড়ির ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। ৫০ লাখ লোক বিড়ি শিল্পে কাজ করে। এদের পুনর্বাসন না করে তাদের পথে বসিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাই সিগারেটের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বিড়ির ওপর ২ শতাংশ শুল্ক আরোপের দাবি জানান।
×