ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আদায়ে বিশেষ কৌশল নেয়া হবে

আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১০ জুন ২০১৭

আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ সঠিক মান যাচাইয়ে সর্বোচ্চ জোর দিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা দিতে যাচ্ছে সরকার। অবৈধভাবে স্বর্ণ আমদানি প্রতিরোধ এবং এ শিল্প খাত থেকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায়ে নীতিমালায় বিশেষ কৌশল গ্রহণ করা হবে। প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে শীঘ্রই স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওইসময় তিনি বলেন, চলতি বছরেই স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা করা হবে। এ জন্য ব্যবসায়ী সমিতি ও সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। যাতে জুয়েলারি শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারে। একই সঙ্গে এই শিল্প বহির্বিশ্বেও রফতানি বাজার তৈরি করতে পারে। জানা গেছে, নীতিমালা না থাকায় দেশে সব স্বর্ণই অবৈধভাবে আসছে। এতে স্বর্ণ চোরাচালানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব। এছাড়া এ শিল্পের ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা দাবি করে আসছিলেন। সম্প্রতি আপন জুয়েলার্সের অবৈধ স্বর্ণ মজুদের সন্ধান পায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া আরও কয়েকটি স্বর্ণের দোকানের বিরুদ্ধে অবৈধ স্বর্ণ আমদানির অভিযোগ উঠেছে। এই বাস্তবতায় স্বর্ণ আমদানিতে নীতিমালা জরুরী হয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ীরা যাতে সঠিক রাজস্ব প্রদান করে স্বর্ণ আমদানি করতে পারে এ জন্য নীতিমালা করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বর্ণ আমদানি নীতিমালা অনুসরণ করা হবে। বিশেষ করে সরকার যাতে এ শিল্প খাত থেকে ন্যায্য রাজস্ব আদায় করতে পারে সেদিকটি বিবেচনায় নিয়ে আমদানি নীতিমালা করা হবে। তিনি বলেন, দেশে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের মান যাচাইয়ের ভাল কোন মেশিন নেই। এমনকি এসব পণ্যের রিসেল ভ্যালু বা পুনঃবিক্রিতে সঠিক দাম পাওয়া যায় না। আমদানি নীতিমালায় স্বর্ণের সঠিক মান পরীক্ষা-নিরীক্ষা মানের বিষয়টিতে সর্বোচ্চ জোর দেয়া হয়েছে। এদিকে বাজেট ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী বলেন, জুয়েলারি আবহমান বাংলার একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। বাংলাদেশে জুয়েলারি শিল্পের উজ্জ্বল ভবিষ্যত থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তার অভাবে এ পর্যন্ত এই শিল্পের তেমন বিকাশ হয়নি। তাই জুয়েলারি শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করার লক্ষ্যে স্বর্ণ আমদানির জন্য সময়োচিত ও বাস্তবসম্মত একটি নীতিমালা প্রণয়নের জন্য এই সেক্টরের ব্যবসায়ী সমিতি বিভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। এসব প্রস্তাব পর্যালোচনা করে আমরা স্থির করেছি সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে স্বর্ণ আমদানি এবং জুয়েলারি শিল্পের জন্য একটি যুগোপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, যাতে এ দেশে জুয়েলারি শিল্প বিকাশ লাভ করতে পারে এবং একই সঙ্গে এই শিল্প বহির্বিশ্বেও রফতানি বাজার তৈরি করতে পারে। এই নীতিমালা প্রণয়ন এই ক্যালেন্ডার বছরেই সমাপ্ত করব বলে আশা করছি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক দীলিপ কুমার আগরওয়ালা সম্প্রতি বাজেট প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্যকে স্বাগত জানাই। আমরা দীর্ঘদিন থেকে স্বর্ণ নীতিমালা ও স্বর্ণ আমদানির নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলে আসছিলাম। অর্থমন্ত্রী জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের দুঃখ অনুধাবন করতে পেরে নীতিমালা প্রণয়নের কথা বলেছেন। দ্রুতই এ নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে বলে আশা করছি। জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরসহ সীমান্তের বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া, হিলি, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ চোরাচালান হয়। এসব এলাকায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। পেশাদার দালাল দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। বিমানের এক শ্রেণীর অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। কোন ফ্লাইটে কখন-কীভাবে চালানটি আসবে, তা ওই কর্মকর্তাদের আগে থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। কর্তব্যরত ওই কর্মকর্তারা তাদের অধস্তনদের ম্যানেজ করেন। প্রতিটি চালানে থাকে আলাদা আলাদা এজেন্ট। আর এজেন্টের মাধ্যমেই পাচারের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এজেন্টরা পেশাদার বহনকারীকে চালান বুঝিয়ে দেন। এসব ধাপে কোন ব্যত্যয় ঘটলেই বেহাত হয়ে যায় চালান। তবে বর্তমানে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের কঠোর নজরদারির কারণে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং সীমান্ত এলাকায় এখন হরহামেশাই ধরা পড়ছে চোরাই স্বর্ণের চালান। ২০১৩ সালের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ২৭ মণেরও বেশি স্বর্ণ আটক করা হয়েছে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকার বেশি। শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতরের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা সময়ে সময়ে চোরাচালানের মাধ্যমে আসা স্বর্ণ আটক করে তা বাংলাদেশ ব্যাংকে গচ্ছিত রাখছে। স্বর্ণ চোরাকারবারিদের কারণে সরকার এ শিল্প খাত থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। জানা গেছে, সম্প্রতি দেশের অন্যতম শীর্ষ স্বর্ণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদ তার বন্ধুদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে রাজধানীর রেইন ট্রি হোটেলে ধর্ষণ করার অভিযোগে গ্রেফতার হন। ওই ছাত্রীদের একজন গণমাধ্যমকে জানান, সাফাত নিজেকে স্বর্ণ চোরাচালানির অন্যতম হোতা দাবি করে এই ঘটনা চেপে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছে।
×