ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিজিবি সদরে বড় পর্দায় মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন

প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু হলো

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩০ মে ২০১৭

প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা চালু হলো

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চালু হলো প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা। প্রযুক্তির কল্যাণে সীমান্তে সর্বক্ষণিক নজরদারি মনিটরিং করা সহজ হবে। পাশাপাশি সহজ হবে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের সার্বিক কর্মকা-, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেয়া। এতে সীমান্তকেন্দ্রিক চোরাচালানসহ যেকোন ধরনের অপরাধ এক সময় শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। সীমান্তে সব ধরনের দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে। যা দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাবে। সোমবার সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিজিবি সদর দফতরে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বড় পর্দার মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করা হয়। এর উদ্বোধন শেষে বাহিনীটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যদের কার্যক্রম মনিটরিং ও তদারকি করতেই এমন প্রযুক্তি স্থাপন করা হলো। এর ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে সীমান্তের অনেক বিষয় ঢাকার পিলখানায় বসে দেখা, নির্দেশনা দেয়া, সার্বিক পরিস্থিতির ওপর পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে। এই সিস্টেমের আওতায় থাকবেন বিজিবির প্রতিটি সদস্য। বিশেষ করে যারা সীমান্তে দায়িত্ব পালন করেন, তারা যেকোন ধরনের অসুবিধার কথা তাৎক্ষণিকভাবে বিজিবি সদর দফতরকে অবহিত করার পাশাপাশি সরাসরি ভিডিও কলের মাধ্যমে দেখাতেও পারবেন। যা যেকোন ধরনের পরিস্থিতিতে প্রয়োজনী উদ্যোগ গ্রহণের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর হবে। সরকার বিজিবির জন্য বাজেটে সন্তোষজনক বরাদ্দ রাখছে জানিয়ে বাহিনীটির প্রধান বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত দেশের বর্ডার ম্যানেজমেন্টে যা যা থাকে, বিজিবিতে যাতে সেটা থাকে এ লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। উন্নত দেশের সীমান্তের সার্কুলার রোড থাকে। ২০৪১ সালের মধ্যে এ সার্কুলার রোড করা সম্ভব হবে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনা যেন, উদাহরণ হিসেবে থাকে এমন লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। প্রযুক্তিনির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা চালুর মধ্যদিয়ে সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে অস্ত্র, মাদক ও নারী শিশু পাচারের ঘটনা ঘটে সেসব পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব জায়গায় প্রযুক্তিনির্ভর নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বা ভিডিও দেখে সহজেই এ ধরনের অপরাধীদের শনাক্ত করা সহজ হবে। সীমান্তে বর্তমানে ৮ হাজার বিজিবি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংখ্যা বাড়িয়ে ১৫ হাজার করার প্রক্রিয়া চলছে। মিয়ানমার সীমান্ত আলাদাভাবে পর্যবেক্ষণ করতে রামু রিজিওন গঠনের কাজ চলছে। সীমান্ত পুরোপুরি সুরক্ষা করা সম্ভব হলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। যা দেশকে দিনকে দিন উন্নতির দিকে নিয়ে যাবে। বিজিবি মহাপরিচালক আরও জানান, সীমান্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রযুক্তিনির্ভর করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে এমন সিস্টেম চালু করা হলো। এতে করে দুর্গম অঞ্চলের সীমান্তে থাকা কোন বিজিবি সদস্যের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ও ডিভিও কল করা সম্ভব হবে। তিনি কক্সবাজারের একজন বিজিবি সদস্যের সঙ্গে কথা বলে সেখানকার সার্বিক পরিস্থিতি জানেন। যেকোন ধরনের দুর্ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ আরও সহজ হবে। দেশের সীমান্তের কি ঘটছে তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকেই পর্যবেক্ষণ করা যাবে। দেশের সাড়ে ৪ হাজার কিলোমিটার সীমান্ত এলাকায় সশরীরে উপস্থিত থেকে পাহারা দেয়া কঠিন ব্যাপার। এজন্য আপাতত এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে রাস্তা ঘাট নির্মিত হলে এবং বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়লে প্রযুক্তির পাশাপাশি সশরীরে উপস্থিত থেকে বিজিবি সদস্যরা সীমান্ত সুরক্ষায় আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবেন। প্রযুক্তির ব্যবহারের কারণে সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা আরও সহজ হবে। সীমান্তকেন্দ্রিক অপরাধ দমন করাও সহজ হবে। প্রযুক্তি নির্ভর সীমান্ত ব্যবস্থাপনা শতভাগ চালু হলে সীমান্তকেন্দ্রিক সব ধরনের দুর্নীতিও শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। এর আগে বিজিবির যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল সাইফুল আজম পারভেজ জানান, ডিসপ্লেতে একই সঙ্গে আটটি টিভি চ্যানেল মনিটরিং করা যাবে। যেকোন সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে তথ্য সংগ্রহ করা সহজ হবে। বিজিবির সকল রিজিওন ও সেক্টরের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করা যাবে। যেকোন ধরনের অকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া সহজ হবে। সীমান্তে থাকা বিওপি (বর্ডার অবজারভেশন পোস্ট) ও আইসিপিগুলো থেকে মোবাইল ফোনের সংযোগের মাধ্যমে সীমান্তের ভিডিও সরাসরি দেখা যাবে। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সীমান্তের যেকোন পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় ডিসপ্লেতে দেখা যাবে। তথ্য আদানপ্রদান করা সহজ হবে। এই সিস্টেমের আওতায় থাকা সকল রিজিওন, সেক্টর, ব্যাটালিয়ন ও বিওপির যেকোন ঘটনার প্রতিবেদন ও তথ্য এই সিস্টেমে জমা হবে। স্কাইপি, ইমো, ভাইভার, হোয়াটসএ্যাপ ও ম্যাসেজিং প্লাটফরমের মাধ্যমে যেকোন ব্যক্তি ও গ্রুপের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কোন বিষয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। এই সিস্টেমে স্যাটেলাইট ম্যাপ দেখানো এবং সে অনুযায়ী অপারেশন পরিচালনা করা যাবে। ভবিষ্যতে আধুনিক বর্ডার ব্যবস্থাপনার জন্য ব্যবহৃত সকল গেজেট এই প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত করা যাবে। সীমান্ত থেকে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যাবে। বিজিবির সকল ইউনিটের কার্যক্রমের হালনাগাদ তথ্য ওই ওয়েব পেজে আপলোড থাকবে। বিজিবির গৌরবময় ইতিহাস থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে বিজিবির অবদান, শহীদদের তথ্য, বিজিবি পদক, পুরস্কার, জনবল নিয়োগ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রজ্ঞাপন আপলোড থাকবে। থাকবে ছবি, প্রকাশনা ও ভিডিওর আপলোড। সকল রিজিওয়নের পৃথক ওয়েবসাইটগুলো বিজিবি ওয়েব পেজে যুক্ত থাকবে। বিজিবির ওয়েব পেজ থেকে জাতীয় ওয়েবসাইটগুলো ভিজিট করা যাবে। পাশাপাশি জাতীয় অনলাইন ফর্ম ও সেবাসমূহ ব্যবহার করা যাবে। অনুষ্ঠানে বিজিবির উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
×