ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবেশী দেশকে বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দিতে প্রস্তুত কর্তৃপক্ষ ॥ পোর্ট চেয়ারম্যান

’২১ সালের মধ্যে প্রথম সারির স্মার্ট পোর্ট হবে চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ এপ্রিল ২০১৭

’২১ সালের মধ্যে প্রথম সারির স্মার্ট পোর্ট হবে চট্টগ্রাম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ঘোষিত রূপকল্প সামনে রেখে নতুন নতুন টার্মিনাল নির্মাণ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনের মধ্য দিয়ে ক্রমেই বাড়ছে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা। ২০২১ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর স্থান করে নেবে পৃথিবীর সেরা ৩০টি বন্দরের তালিকায়। সরকার প্রতিবেশী দেশকে বন্দর ব্যবহারের সুবিধা দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে প্রস্তুত রয়েছে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরের ১৩০ বছর পূর্তি ও বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এমনই আশাবাদ ব্যক্ত করেন বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল। তিনি জানান, ২০১৫ সালে এই বন্দর ৬ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার ৯২৯ মেট্রিক টন কার্গো এবং ২০ লাখ ২৪ হাজার ২০৭ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং করে লয়েড লিস্ট প্রকাশিত বিশ্বের সেরা ১শটি কন্টেনার পোর্টের মধ্যে ৭৬তম স্থান দখল করেছে। পক্ষান্তরে, ২০১৬ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ মেট্রিক টন কার্গো এবং ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৯০৯ টিইইউএস কন্টেনার। এক বছরে কন্টেনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৯ এবং প্রায় ১৭ শতাংশ। আশা করছি, লয়েড লিস্টে এ বছর বন্দরের অবস্থান আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। সরকারের রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১ ও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোলস ২০৩০ কে সামনে রেখে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে এ বন্দর ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের প্রথম সারির একটি স্মার্ট পোর্টে রূপান্তরিত হবে। চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, পৃথিবীর সকল দেশই এখন রিজিয়ন নিয়ে চিন্তা করে। দুয়ার বন্ধ করে থাকার দিন চলে গেছে, দুয়ার খুলতে হবে। তবে সবকিছুই হবে নিজের স্বার্থকে অক্ষুণœ রেখে। আমদানি-রফতানি এবং দেশের অর্থনীতি গ্রোথের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বন্দরের সক্ষমতার প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, বন্দরের গ্রোথ কমে গেলে তা দেশের অর্থনীতিকে এফেক্ট করবে। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সরকার দেশে নতুন নতুন বন্দর গড়ে তোলা এবং নৌপথ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নেও বিভিন্ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নতুন টার্মিনাল নির্মাণ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যেই নিউমুরিং কন্টেনার টার্মিনালের (এনসিটি) জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ৩০ শতাংশ সংগৃহীত হয়েছে। ২০১৯ সালের মধ্যে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালের (পিসিটি) কাজ শেষ হবে। কর্ণফুলী কন্টেনার টার্মিনালের (কেসিটি) কাজও শেষ করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত বে-টার্মিনালের প্রথম পর্বের নির্মাণ কাজ শেষ হবে। এছাড়া মীরসরাই ও ফেনীর সোনাগাজী ইকোনমিক জোনকে সাপোর্ট দিতে মীরসরাই ও সীতাকু-ের মাঝামাঝি স্থানে মধ্যম আকারের একটি বন্দর নির্মাণের সমীক্ষা চলছে। সরকার এখনই ভারতের তিন অঙ্গরাজ্যের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে কতটা প্রস্তুতি রয়েছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, সীমান্তবর্তী ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যে যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নসহ কার্যক্রম চলছে। গ্র্যাজুয়েলি চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নও ঘটছে। সুতরাং তেমন সিদ্ধান্ত হলে চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তুতি রয়েছে বলে তিনি জানান। চট্টগ্রাম বন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (এডমিন এ্যান্ড প্লানিং) মোঃ জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর জুলফিকার এবং উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ। তারাও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা এবং চলমান প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি তুলে ধরেন। ২৫ এপ্রিল ছিল চট্টগ্রাম বন্দর দিবস। ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল প্রণীত হয়েছিল পোর্ট কমিশনার এ্যাক্ট-১৮৮৭। সে হিসাবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবার জাকজমকপূর্ণভাবে পালন করছে ১৩০তম বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে বন্দর ভবনসহ পুরো এলাকা শোভিত হয় রং-বেরঙের পতাকায়। বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগেও ছিল বিশেষ ভোজের আয়োজন। এদিন অন্তত ১২ হাজার মানুষকে ভোজে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও ছিল, যাতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন খ্যাতিমান শিল্পীরা। তবে এবারের নতুন এবং বিশেষ আকর্ষণ দুদিনব্যাপী পোর্ট এক্সপো। চট্টগ্রাম বন্দর কার শেডে ২৭ এপ্রিল শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মতো পোর্ট এক্সপো। বেলা ১২টায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ এক্সপো উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিন ২৮ এপ্রিল বিকেলে সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। বন্দরের কার্যক্রম, সক্ষমতা এবং ভাবমূর্তি বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ আয়োজন। এক্সপোতে অংশগ্রহণ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ, বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন বার্থ অপারেটর ও সংস্থা, ব্যাংক এবং আমদানি-রফতানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শতাধিক স্টল। নতুন এ আয়োজনকে ঘিরে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ব্যবসায়ী মহলে।
×