ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করমর্দনের জন্য জার্মান চ্যান্সেলর হাত বাড়ালেও ট্রাম্প সাড়া দেননি

যুক্তরাষ্ট্রে বিব্রত মেরকেল

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ১৯ মার্চ ২০১৭

যুক্তরাষ্ট্রে বিব্রত মেরকেল

জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেলের সঙ্গে নিজের মিল খুঁজে পেয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে তাকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের দু’জনের মধ্যে অন্তত একটি মিল রয়েছে। তা হলো, আমাদের দু’জনের ফোনেই আড়িপাতা হয়েছে।’ এর আগে ট্রাম্প তার পূর্বসূরি বারাক ওবামার প্রশাসনের বিরুদ্ধে ফোনে আড়িপাতার অভিযোগ করলেও তার কোন প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। এমনকি তার প্রশাসনের কর্মকর্তারাও তার সে দাবি সঠিক নয় বলে স্বীকার করেছিলেন। এরপর মেরকেলের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আবার সেই দাবি পুনরুল্লেখ করলেন। এছাড়া ট্রাম্প উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটোর প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তবে তিনি একথাও বলেছেন যে, সদস্য দেশগুলোকে অবশ্যই অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ন্যাটোকে অর্থ দিতে হবে। অভিবাসীদের প্রশ্নে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, অভিবাসন একটি বিশেষ সুবিধা, এটা কোন অধিকারের বিষয় নয়। ট্রাম্প আরও বলেন, তিনি কারও থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকায়ও বিশ্বাস করেন না। কিন্তু এটা বিশ্বাস করেন, পারস্পরিক বাণিজ্যনীতি ন্যায়সঙ্গত হওয়া উচিত। অন্যদিকে মেরকেল জানিয়েছেন, তিনি ও ট্রাম্প আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন মিশনে জার্মানির অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মেরকেলের এটিই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে স্পষ্ট মতপার্থক্য ছিল লক্ষণীয়। হোয়াইট হাউসের ইস্ট রুমে দুই নেতার এই সংবাদ সম্মেলন ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সম্মেলনে দু’জনের কাউকে খুব একটা সহজ ভঙ্গিতে দেখা যায়নি। ন্যাটো, প্রতিরক্ষা বাজেট এবং অভিবাসনের মতো ইস্যুগুলোতে দুই নেতার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে পার্থক্য ছিল লক্ষণীয়। সংবাদ সম্মেলন চলাকালে মেরকেলকে হাসতে বা সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। বিশেষ করে ট্রাম্প যখন বলছিলেন ওয়াশিংটনের ন্যাটো মিত্ররা জোটে যার যার অংশের ন্যায্য ব্যয় বহন করছে না। এছাড়া বাণিজ্য বিষয়েও ট্রাম্প বক্তব্য রাখার সময় মেরকেলকে খুশি হতে দেখা যায়নি। নির্বাচনে জয়লাভের পর ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করার মিশন নিয়ে মেরকেল যুক্তরাষ্ট্র গিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় থেকে শুরু করে নির্বাচনে জেতার পরও ট্রাম্পের বিভিন্ন কথাবার্তা দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। মেরকেল এই সম্পর্ক উন্নয়ন ঘটাতে সেখানে যান। আন্তরিকতাপূর্ণ পরিবেশে মেরকেলের এই সফর শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত অবস্থা হৃদ্যতাপূর্ণ ছিল না। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে মেরকেল যথারীতি ট্রাম্পের সঙ্গে করমর্দন করেন। কিন্তু শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনের শেষে মেরকেল নিয়ম রক্ষার্থে করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালেও ট্রাম্প হাত বাড়াননি। সবমিলিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় মেরকেলকে। ট্রাম্প আর মেরকেল এর আগে কখনও পরস্পরকে সামনাসামনি দেখেননি। তাদের এই প্রথম সাক্ষাতটি যথেষ্ট উষ্ণ পরিবেশে হয়েছে এটি বলা যাবে না। ন্যাটো ও প্রতিরক্ষা ব্যয় ছাড়াও দুই নেতার মধ্যে আরও যে বিষয়ে বিরোধ রয়েছে সেটি হলো অভিবাসন। ট্রাম্প অভিবাসী আসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চান। অন্যদিকে মেরকেল অভিবাসীদের বিষয়ে উন্মুক্ত দুয়ার নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। দুই নেতা সংবাদ সম্মেলনে পাশাপাশি দাঁড়ালেও তাদের বক্তব্য যেন এই বার্তাই তুলে ধরছিল যে তারা দু’জন দুই ভূবনের বাসিন্দা। ইতোপূর্বে মেরকেল ৬টি মুসলিম দেশ থেকে আমেরিকায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেন। তবে এখন বিশ্বের অতি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা মোকাবেলার লক্ষ্যে আন্তঃআটলান্টিক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার জন্য মেরকেল কিছুটা নমনীয় বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের এই বৈঠক আরও আগেই হওয়ার কথা ছিল। মঙ্গলবার তারা আলোচনায় বসতে পারতেন তবে সোমবার রাত ও মঙ্গলবারের তুষার ঝড়ের কারণে মেরকেলের সফরসূচী পরিবর্তন করতে হয়। -নিউইয়র্ক টাইমস ও বিবিসি
×