ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুনামগঞ্জ সমিতির স্মরণসভা

সুরঞ্জিত ছিলেন রাজনীতির কবি

প্রকাশিত: ০৮:৫৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সুরঞ্জিত ছিলেন রাজনীতির কবি

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ছিলেন একজন আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ। তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। তিনি তার কর্মের মাধ্যমে চিরদিন বেঁচে থাকবেন। তার অবদান আমাদের জাতীয় রাজনীতির পথ চলতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, গণতন্ত্র-সংবিধান যতদিন থাকবে ততদিন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও বেঁচে থাকবেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধু একজনই, এমন একজন আর কোনদিন এই বাংলার বুকে আসবেন না। সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গণপ্রন্থাগারে ঢাকাস্থ সুনামগঞ্জ সমিতি আয়োজিত স্মরণসভায় আলোচকরা একথা বলেন। আকবর হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহধর্মিণী ড. জয়া সেনগুপ্ত, এ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ব্যক্তিগত সহকারী এটিএম মোয়াজ্জেম হোসেন ফিরোজ। স্মরণসভায় অংশ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আমার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ছিলেন। শুধু সংসদ নয়, সংসদের বাইরেও আমাদের সম্পর্ক ছিল খুবই নিবিড়। বয়সে আমি বড় হলেও বৃহত্তর সিলেটের মানুষ হিসেবে আমরা একে অপরের খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। রাজনীতিতে এত অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান আমি আর দেখিনি। সুরঞ্জিত শুধু সিলেটের নেতা নন, তিনি অল্প বয়সেই জাতীয় নেতাতে পরিণত হন। তিনি বলেন, সংসদে সব সময় সুরঞ্জিতের বক্তব্য শোনার জন্য উদগ্রীব থাকতাম। তিনি ছিলেন অসম্ভব জনপ্রিয় একজন নেতা। জনগণের প্রতি তার ভালবাসা ছিল অসীম। জনগণও তাকে ভালবাসত। আমি মনে করি সুরঞ্জিত আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন। সংসদে তার উপস্থিতি ছিল নিরবচ্ছিন্ন। সংসদীয় পদ্ধতিকে এগিয়ে নিতে তিনি কাজ করে গেছেন। তবে সংবিধানের প্রথম অনুমোদনে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত স্বাক্ষর করেননি। এটা তার ঠিক হয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনের সময় তিনিসহ সবাই স্বাক্ষর করেছিলাম। জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি সংসদে এসেছি প্রথমবার ১৯৯৬ সালে। আর সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এসেছিলেন সেই ১৯৭০ সালে। তার কাছ থেকে আমরা সংসদীয় রাজনীতি ও নিয়মনীতি শিখে বড় হয়েছি। আমাদের মাঝে একটা মিল রয়েছে যে, দু’জনই আমরা ভাটি অঞ্চলের মানুষ। তিনি শুধু ভাটি অঞ্চলের মানুষই নন, তিনি সারাদেশের জনপ্রিয় রাজনীতিক ছিলেন। আজ তিনি পৃথিবীতে নেই। আমি তার শূন্যতা অনুভব করি। শুধু সংসদে নয়, রাজনীতির মাঠেও তাকে দেখে মুগ্ধ হয়েছি। তিনি যখন বক্তব্য দিতেন তখন মনে হতো সিনেমার নায়ক, যাত্রার নায়ক কথা বলছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধু একজনই, এমন একজন আর কোনদিন এই বাংলার বুকে আসবেন না। মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত শুধু একজন রাজনীতিবিদ ছিলেন না। তিনি ছিলেন রাজনীতির কবি। সাহিত্যের রসবোধ দিয়ে তিনি যেভাবে বক্তব্য দিতেন তা সবাইকে মুগ্ধ করে রাখত। তিনি ভালবেসে রসিকতা করতেন। আমি যখন রাজনীতিতে আসতে চেয়েছিলাম তখন তিনি বলেছিলেন তোমার স্ত্রীকে সামলাতে পারবে তো। এই পথটা এত মসৃণ নয়। তিনি আপাদমস্তক একজন অসাম্প্রদায়িক মানুষ ছিলেন।
×