ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভাষার মাসে বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের দুই প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ভাষার মাসে বটতলার ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের দুই প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাষা আন্দোলনের মাসে বটতলা তাদের নন্দিত প্রযোজনা ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের দুটি মঞ্চায়ন করতে যাচ্ছে। দল সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে নাটকটির একটি মঞ্চায়ন হয়। আজ শনিবার একই মঞ্চে নাটকটির আরও একটি প্রদর্শনী হবে। ‘ক্রাচের কর্নেল’ বটতলার নবম প্রযোজনা। শাহাদুজ্জামানের উপন্যাস থেকে নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন সামিনা লুৎফা নিত্রা ও সৌম্য সরকার। নির্দেশনা দিয়েছেন মোহাম্মদ আলী হায়দার। এই নাটকের মাধ্যমে বটতলা বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অস্থির সময়কেউন্মোচন করতে চেয়েছে। না জানা অনেক বিষয়ের বিশ্লেষণাত্মক উপস্থাপনা এবং ইতিহাসের অলিগলিতে বিচরণের ক্ষেত্রে নাটকটি দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। অনেক তর্ক-যুক্তি এবং জানা অজানা অনেক বিষয়ের বিশ্লেষণাত্মক উপস্থাপনার মাধ্যমেই এগিয়ে চলে মূলত নাটকটি। নাটকের কাহিনীতে দেখা যায় একটি নাটকের দল নানা দুঃখ, কান্না, সাহসের গল্প থেকে বলতে শুরু করে এক কর্নেলের গল্প। এক বা একাধিক স্বপ্নবাজ, পাগল, মৃত্যুর নেশায় পাওয়া মানুষদের গল্প। একটি সময় ও দুঃসময়ের গল্প। একটি স্থানের ও কালের গল্প হয়েও যেটি কেবল একটি স্থানের ও কালের গল্পমাত্র নয়। লোকে বলবে ঐতিহাসিক গল্প কিন্তু যারা জানে ইতিহাস মানুষের হাতে রচিত হয়Ñ অনেক সময় কিছু মানুষের প্রয়োজনে, যে মানুষগুলো ক্ষমতাধর তাদের কাছে ইতিহাস একটি জটিল বিষয় আর যেহেতু সময়ের বদলে ইতিহাসের ব্যাখ্যা বদল হয়। নাটকের দলটি তাই তাদের গল্প তাদের মতো করে বেছে নেয় আর তাদের মতো করে বুঝবার ও বোঝাবার চেষ্টা করে। কিন্তু এই দলটি যেহেতু সমকালের অংশ তাই সেও সঙ্কটমুক্ত নয় তাদের সঙ্কট তারা এখনও নায়ক খুঁজে পায়নি, নায়ক বুঝেও পায়নি তারা আবার এমন এক দেশের গল্প বলে যে দেশটিও নায়ক খুঁজে পায়নি, বুঝে পায়নি। কিন্তু নায়ক কেন লাগবে? বোকার প্রশ্ন! নায়ক ছাড়া চলবে কেন? গ্যালিলিও নাটকের চরম সঙ্কটকালে শিষ্য আন্দ্রেয়া বলে বসে : সেই দেশই দুর্ভাগা যে দেশ কোন নায়কের জন্ম দেয় না। গ্যালিলিও মৃত্যুর ভয়ে এই মাত্র তার সত্য বিক্রি করে এসেছে চার্চের কাছে আন্দ্রেয়া তাই গভীর মর্মবেদনায় উচ্চারণ করে এই বাক্য গ্যালিলিও যে তার নায়ক ছিল! গুরু গ্যালিলিও জবাব দেয় মর্মপীড়ায় : না আন্দ্রেয়া, সেই দেশই দুর্ভাগা যে দেশের একজন নায়কের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এত আর রবীন্দ্রনাথের আইডিয়াল রাজ্য নয় যেখানে আমরা সবাই রাজা! নাটকের দলটি সেই অর্থে দুর্ভাগা, বাংলাদেশ সেই অর্থে দুর্ভাগা! কর্নেল তাহেরের জীবনের প্রস্তুতি, প্রেম, সংগ্রাম ও মৃত্যুর গল্প বলতে গিয়ে নাটকের দলটিকে যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব ও পরবর্তী বিস্তৃত ঘটনারাশির কথা বলতে হয় তখনই সঙ্কট! মিডিয়ার দখলে থাকা সংস্কৃতির ভাগীদার হয়ে, পরস্পরবিরোধী ইতিহাস ব্যাখ্যার অংশ হয়ে দলটির সদস্যদের কাছে ইতিহাস জটিল হয়ে ওঠে, কেউ না কেউ ইতিহাস খেলে বলে মনে হয় কিন্তু এত বড় জাল ছিঁড়ে কে নায়ক বনবে? কে হবে যোগ্য কর্নেল তাহের? অথবা কর্নেল তাহেরই কি সেই আরাধ্য নায়ক যাকে দেশ খুঁজে পায়নি? অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের পূর্বের নায়কেরা ও খলনায়কেরা, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নায়কেরা ও খলনায়কেরা, মুক্তিযুদ্ধের পরের নায়কেরা ও খলনায়কেরা কি তাদের পরিচয়ে স্থির থেকেছেন? এইসব প্রশ্ন অবধারিত। সবাই না হলেও অনেকেই আসেন মঞ্চে, চলে যান। মঞ্চের বাইরে থাকেন কেউÑ থিয়েটারের ভাষা এভাবে তৈরি হয়। মূল কথা সময়। সামষ্টিক সময়। একটি দল যেমন দেশের সঙ্কটকে মূর্ত করে, দেশও তেমনি বিশ্বের বাইরের নয়। একটি কাল কাউকে নায়ক হওয়ার পথ তৈরি করে দেয়, আবার কালই পথ ভেঙ্গে ফেলে। এক কাল অতিক্রান্ত হলে সেই কালের ব্যাখ্যা দাঁড় করায় মানুষ। নায়ক ও খলনায়ক বেছে নেয় তারাই। ক্রাচের কর্নেলও একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে চেয়েছে যেটা ধ্রুব ব্যাখ্যা নয়, একটি ব্যাখ্যা। তবে নাটকের অন্যতম শক্তি ইতিহাসকে তুলে আনার চেষ্টা। নাটকের শৈল্পিক উপস্থাপনাও দর্শকদের আকৃষ্ট করে। ‘ক্রাচের কর্নেল’ নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন ইমরান খান মুন্না, কাজী রোকসানা রুমা, সামিনা লুৎফা নিত্রা, তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, বাকীরুল ইসলাম, পংকজ মজুমদার, ইভান রিয়াজ, ম. সাঈদ, নাফিজ বিন্দু, সবুজ সরকার, মনজুরুল ইসলাম রনি, গোলাম মাহবুব মাসুম, নাফিউল ইসলাম প্রমুখ। নাটকের সহকারী নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনা ইমরান খান মুন্না, পোশাক পরিকল্পনায় হুমায়রা আক্তার, কোরিওগ্রাফি সামিনা লুৎফা নিত্রা, আলোক পরিকল্পনায় খালিদ মাহমুদ সেজান, আলোক প্রক্ষেপণে এটিএম মহিবুল্লাহ, দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনায় ম. সাঈদ, আবহ সঙ্গীত পিন্টু ঘোষ, আবহ সঙ্গীত নিয়ন্ত্রণ নীলাঞ্জনা সেজুতি, পোস্টার ডিজাইন জাহেদুল হক রনি, প্রযোজনা তত্ত্বাবধান তৌফিক হাসান ভূঁইয়া, মঞ্চ ব্যবস্থাপক মনজুরুল ইসলাম রনি, রূপসজ্জায় আব্দুল কাদের।
×