ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু এখন নিরাপত্তারও হুমকি ॥ শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ০৮:০৯, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জলবায়ু এখন নিরাপত্তারও হুমকি ॥ শেখ হাসিনা

বিডিনিউজ ॥ জলবায়ু পরিবর্তনকে নিরাপত্তার অন্যতম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে সে দিকে মনোযোগী হতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মানির মিউনিখে সিকিউরিটি কনফারেন্সে শনিবার এক প্যানেল আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কীভাবে আঞ্চলিক থেকে শুরু করে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে হুমকি হিসেবে আসছে, তা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। ১৯৬৩ সালে স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমিতে মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের যাত্রা শুরু হলেও পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এই সম্মেলন বিশ্ব নিরাপত্তা ও বিভিন্ন পরিবর্তনের প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন এক অনিশ্চিত যাত্রার পথে রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার ধারণা কতগুলো মৌলিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তন নতুন উপাদান হয়ে এসেছে। খাদ্য, পানি ও অভিবাসন- জলবায়ু পরিবর্তনের তিনটি সরাসরি প্রভাবের কথা উঠে আসে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের আলোচনায়। শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খাদ্য উৎপাদন ও খাদ্যের মান- দুটোই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়; জীবন ও জীবিকার জন্য নিরাপদ ও সুপেয় পানির সঙ্কট বেড়ে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনে ও আন্তর্জাতিকভাবে লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে। এটির সরাসরি প্রভাব রয়েছে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পদের ওপর, যা নিরাপত্তায় নতুন উদ্বেগ। এসব প্রভাবের কারণে সম্পদের ওপর চাপ ক্রমে বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এটা অস্থিরতা, সহিংসতা ও সংঘাতও ঘনিয়ে আনতে পারে। সব ক্ষেত্রেই, জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন হতে পারে। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণে জলবায়ু পরিবর্তনসহিষ্ণু শস্য ব্যবস্থা এবং পানির যথাযথ ব্যবহার ও কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনায় একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি দেশের ব্যর্থতা সবার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে মন্তব্য করে নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব ভাগ করে নেয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা। একে বৈশ্বিক ইস্যু হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সমাধানও বৈশ্বিক হওয়া উচিত। বর্তমান বিশ্বে নিরাপত্তা আলোচনার ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক কনফারেন্স’ হিসেবে বিবেচিত এই সম্মেলনে বাংলাদেশের কোন রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান হিসেবে প্রথমবারের মতো অংশ নিলেন শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশে সরকারের নিজস্ব উদ্যোগে নানা পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ কম রেখে উন্নয়ন কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নিজেদের সম্পদ থেকে ২০০৯ সালে আমরা ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করেছি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের সাফল্য অনেক দেশ অনুসরণ ও পুনরাবৃত্তি করছে। আমরা উপকূলীয় ৯০০ কিলোমিটার এলাকায় গ্রিনবেল্ট প্রকল্প হাতে নিয়েছি। সারাদেশের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘সোলার নেশন’ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে বলে সম্মেলনে বক্তব্যে আশার কথা শোনান শেখ হাসিনা। প্যানেল আলোচনা শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যে, তিনি কীভাবে জলবায়ুুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া মোকাবেলা করবেন।
×