ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এ আন্দোলনের মাধ্যমে তৎকালীন পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণদাবির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এ আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও ব¯স্তুত এর বীজ বপিত হয়েছিল বহু আগে। অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়। কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য বিরাজ করছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এ ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যত পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায্য এ সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেনি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। ফলে বাংলা ভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ-মিছিল ইত্যাদি বেআইনী ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। বদরুদ্দীন উমর ‘পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি (তৃতীয় খ-)’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, ১৯৫২ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি চিঠি গোপনে পাচার হয়ে আসে। তাতে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমান এবং বরিশালের মহিউদ্দীন আহমেদ নিজেদের মুক্তির জন্য জেলের মধ্যে অনশন ধর্মঘট শুরু করেছেন। এ সংবাদের সঙ্গে চিঠিতে রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করার অনুরোধ জানানো হয়। বদরুদ্দীন উমর তার গ্রন্থে বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারির ওই চিঠি পাওয়ার পরই ১৯ ফেব্রুয়ারি বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ছাত্র সভা আহ্বান করা হয়। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন মুখলেছুর রহমান। সভায় যারা বক্তৃতা দেন তাদের মধ্যে ছিলেনÑ জিল্লুর রহমান, নাদিরা বেগম ও শামসুল হক চৌধুরী। সভায় শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দীন আহমেদসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করে প্রস্তাব গ্রহণ ছাড়াও ‘বিশ্ববিদ্যালয় রাজবন্দী মুক্তি আন্দোলন কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি গঠনের কয়েকদিনের মধ্যে ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বদলি হয়ে যান। ভাষা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর ঢাকা জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন হায়দার নামে প্রবীণ একজন অফিসার। এ বিষয়ে প্রাদেশিক মুসলিম লীগের তৎকালীন সম্পাদক মোহন মিয়ার বক্তব্য হলো, ‘ফরিদপুর জেলা বোর্ডের নির্বাচন উপলক্ষে ফরিদপুর রওনা হই। রাত দশটা কী এগারোটার দিকে আমি নূরুল আমিনের বাড়ি হয়ে যাই। সেই সময় ভাষা আন্দোলন নিয়ে নানা বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করি। ছাত্ররা বড় ধরনের গ-গোল করতে পারে। এ বিষয়েও কথা হয়। এর পরই নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল।’ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহুসংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অমান্যের অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। গুলিতে নিহত হন রফিক, শফিউল, সালাম, বরকতসহ অনেকে। শহীদদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। শোকাবহ এ ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র বাংলায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
×