ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাবমেরিন ওয়্যার মুভি ॥ দ্য গাজি এ্যাটাক

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাবমেরিন ওয়্যার মুভি ॥ দ্য গাজি এ্যাটাক

বলিউডে যুদ্ধের সিনেমা খুব বেশি হয়নি। তবে ‘বর্ডার‘, ‘এলওসি’ ‘কারগিল’, ‘লাকসা’, ‘হাকিকাত’, ‘১৯৭১’, ‘ট্যাঙ্গো চার্লি’, ইয়াহান, ‘আব তুমহারে হাওয়ালে ওয়াতান’, ‘মাদ্রাজা ক্যাফে’, ‘চিলড্রেন অব ওয়্যার’, ‘মিশন কাশ্মীর’ প্রভৃতি ছবি দর্শক সমালোচকদের হৃদয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সবার প্রশংসা অর্জন করেছে ছবিগুলোর নির্মিত, পাত্রপাত্রীদের অভিনয়। যুদ্ধবিরোধী জোরালো বক্তব্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে প্রতিটি ছবিতেই। এ সপ্তাহে মুক্তি পাচ্ছে আরও একটি নতুন যুদ্ধের ছবি। যা বলিউডি সিনেমার দর্শকদের কৌতূহলী করেছে। চলতি সপ্তাহের নতুন এই হিন্দী ছবিটি হলো ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’। এ ছবির পরিচালক সংকল্প রেড্ডি। পরিচালক হিসেবে একেবারেই নতুন তিনি। যুদ্ধের এ ছবিটির মাধ্যমে চিত্র পরিচালক হিসেবে তার অভিষেক হচ্ছে। ১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধকালীন সময়ে পাকিস্তানের যুদ্ধজাহাজ পিএনএস গাজি ভারতীয় নৌসেনাদের আক্রমণে ঘায়েল হয়েছিল। ভারতের বিশাখাপট্টমে রহস্যজনকভাবে পাকিস্তানী যুদ্ধজাহাজটি ডুবে যায়। বাস্তবের সেই শিহরণ জাগানো ঘটনাকে উপজীব্য করে ‘দ্যা গাজি এ্যাটাক’ ছবির চিত্রনাট্য তৈরি করা হয়েছে। ভারতীয় সাবমেরিন এস টয়েন্টি ওয়ানের এক্সিকিউটিভ নেভাল অফিসার ক্যাপ্টেন রণবিজয় সিং, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার অর্জুন ভার্মা, এক্সিকিউটিভ অফিসার দেবরাজের বীরত্বপূর্ণ অভিযানের বিবরণ ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিতে চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখতে বসে যে কোন সিনেমা দর্শক অনায়সেই ১৯৭১ সালে ফিরে যাবেন, যখন আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। ৪৫ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাবার পর ১৯৭১ এর যুদ্ধে ভারতীয় সমুদ্রসীমায় ডুবে যাওয়া পাকিস্তানী যুদ্ধ সাবমেরিন পিএনএস গাজিকে কেন্দ্র করে বলিউডে ‘দ্য গাজি এ্যাটাক‘ ছবিটি নির্মিত হয়েছে। হলিউডে আন্ডারওয়াটার ওয়্যার ফিল্ম হরদম নির্মিত হচ্ছে যা দর্শক দেখছেন এবং চমকিত হচ্ছেন। তবে বলিউডে এর আগে এ ধরনের আন্ডার ওয়াটার ওয়্যার ফিল্ম নির্মিত হয়নি। ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিটি এক্ষেত্রে প্রথম প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচনা করা যায়। মূলত ১৯৭১-এর পাক ভারত যুদ্ধকালীন সময়ের পটভূমিকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর দুঃসাহসী অভিযান, নৌসেনাদের কৃতিত্ব ও সাফল্য তুলে ধরার পাশাপাশি বেশকিছু মানবিক গল্প তুলে ধরা হয়েছে এ ছবিতে। পাকিস্তানী যুদ্ধজাহাজ পিএন গাজি বঙ্গোপসাগরে ভারতের বিশাখাপট্টম বন্দরে ডুবে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও চলচ্চিত্রে ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ তুলে ধরার ক্ষেত্রে ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবির কাহিনীকার চিত্রনাট্যকার পরিচালক সবাই বেশ সতর্ক ছিলেন। এখানে বাস্তব ঘটনার পাশাপাশি কিছু কল্পিত কাহিনীরও অবতারণা করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে নতুন পরিচালক হিসেবে অভিষিক্ত হওয়া সংকল্প রেড্ডি বলেন, ১৯৭১-এ পাক ভারত যুদ্ধের সময় পাকিস্তানী যুদ্ধজাহাজ পিএন গাজি ডুবে যাওয়ার ঘটনাটি সত্যি। বঙ্গোপসাগরের যেখানটায় জাহাজটি ডুবেছিল এখনও পানির নিচে সাগরতলে জাহাজটি পড়ে আছে। এর বাইরে আমি এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু ঘটনার অবতারণা করে গল্প সাজিয়েছি, যা মোটেও আরোপিত মনে হবে না। এ জন্য আমি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে অনেক গবেষণা করেছি ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিটিকে বলিউডের ‘অন্য আট দশটি সাধারণ গতানুগতিক সিনেমার কাতারে ফেলা যাবে না। এ ছবিতে প্রচলিত অর্থে কোন নায়িকা নেই, নাচ, গান, কমেডি আইটেম সঙ রোমান্টিক দৃশ্যের অবতারণাও করা হয়নি দর্শকদের আকৃষ্ট করতে। তার পরেও ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিটি নির্মাণে বেশ বড় অঙ্কের বাজেট লেগেছে। যদিও এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নানা গৌরবগাথা বলিউডের অনেক সিনেমায় চমৎকারভাবে তুলে ধরা হলেও ভারতীয় নৌবাহিনীর বীরত্বপূর্ণ অভিযান এবং গৌরবগাথা তুলে ধরে তেমন কোন হিন্দী সিনেমা নির্মিত হয়নি। যদিও তাদের ঐতিহাসিক অবদান গৌরবগাথা রুপালি পর্দায় তুলে ধরার মতো, অনেক উপাদান রয়েছে এখানে। ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবির প্রধান অভিনেতা রানা দা¹ুবাতি সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে বলেন, ভারতের ইতিহাসে নৌবাহিনীর অনেক বীরত্বপূর্ণ অবদানের কথা সবাই জানে না, আমি বলব ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিটি দেখার পর দর্শক এ সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবে। এ ছবিটি নির্মাণ সহজ কাজ ছিল না, আমি প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা এ ছবির পরিচালকের সঙ্গে কাটাতাম, একটি শট গ্রহণের আগে অনেক আলোচনা করে ঠিক করতাম শেষ পর্যন্ত ফাইনাল শটটি গ্রহণ করা হতো। অনেক সহকর্মী শিল্পী আমাকে বলেছেন কেন আমি এমন একটি সাবমেরিন নির্ভর যুদ্ধের সিনেমায় অভিনয় করতে গেলাম? যেখানে আমি বাহুবলির মতো একটি ব্লকবাস্টার ছবিতে অভিনয় করেছি। সবাই ভেবেছে আমি হয়ত পাগল হয়েছি। কিন্তু আমার কাছে ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। তাই আমি এ ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি অনেক দিন ধরে, ভিজাগ এ আর কে সমুদ্র সৈকতে ওই সাবমেরিনটিকে দেখে আসছি, তবে এই সাবমেরিন নিয়ে যে একটা সিনেমা হতে পারে, আমার ধারণা ছিল না।’ ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবির বেশিরভাগ অংশই কম্পিউটার গ্রাফিক্সের মাধ্যমে করা হয়েছে। এ ছবি নির্মাণে ভারতের অনেক দক্ষ সিনে কলাকুশলী কাজ করেছেন। তাদের মেধা ও শ্রমের ফসল হিসেবে দর্শকদের মন ভরাবে ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ছবিটি। এ ছবিতে কোন নায়িকা চরিত্র না থাকলেও তাপসি পান্নু আছেন বিশেষ একটি চরিত্রে। সাধারণত কোন সাবমেরিনে কোন নারী নৌসেনা থাকতে পারে না, তাপসি এ ছবিতে একজন উদ্বাস্তু নারীর চরিত্রে রূপদান করেছেন, ঘটনাচক্রে যে ওই যুদ্ধজাহাজের একজন যাত্রী হয়েছিল। গত বছর ‘পিঙ্ক’ ছবিতে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টির পর তাপসি আসছেন ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’, ছবিতে ভিন্নধর্মী অন্য আরেক চরিত্রে। এ ছবিতে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি দর্শকদের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করবে। পিঙ্কগার্ল তাপসি অভিনীত আরও একটি নতুন হিন্দী সিনেমা ‘রানিংশাদিডটকম’ মুক্তি পাচ্ছে একই সপ্তাহে। এ ছবিতেও তাকে ব্যতিক্রমধর্মী চরিত্রে দেখা যাবে। ১৯৭১ সালে ঘটে যাওয়া সেই আলোচিত যুদ্ধজাহাজ পিএনএস গাজি ডুবে যাওয়ার ইতিহাস উপমহাদেশের মানুষ ভুলে যায়নি। যদিও ভারত বলেছিল তাদের সাবমেরিন আইএনএস রাজপুত পাকিস্তানের সাবমেরিন গাজিকে ডুবিয়ে দিয়েছিল, ওদিকে পাকিস্তান দাবি করেছিল অভ্যন্তরীণ বিস্ফোরণের কারণে তাদের সবচেয়ে বড় সাবমেরিনটি সাগরে ডুবে যায়। সে যাই হোক ভারত নির্মিত সর্বপ্রথম সাগরতলে চলাচলকারী সাবমেরিননির্ভর গল্পের সিনেমা হিসেবে আসছে ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’। ১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধের সময় পাকিস্তান তাদের সর্ববৃহৎ সাবমেরিন পিএনএস গাজিকে পাঠিয়েছিল ভারতের নৌবাহিনীর সবচেয়ে বড় সাবমেরিন জাহাজ আইএনএস বিক্রান্তকে ধ্বংস করতে। এতদিন পর সেই ঘটনাবলী সবাইকে আলোড়িত করবে সন্দেহ নেই। ‘দ্য গাজি এ্যাটাক ছবিটি হিন্দীতে নির্মিত হলেও তেলেগুভাষায় ডাব করে একই সঙ্গে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রানা দা¹ুবাতি, তাপসি পান্নু ছাড়াও এ ছবির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন কে কে মেনন, অতুল কুলকারনির মতো দক্ষগুণী অভিনয় শিল্পীরা। অমিতাভ বচ্চন এ ছবিতে নেপথ্য কণ্ঠ দিয়েছেন। হিন্দী ভার্সনের মতো তেলেগু ভার্সনে কণ্ঠ দিয়েছেন দক্ষিণ বিখ্যাত অভিনেতা চিরঞ্জীবী। সব মিলিয়ে ‘দ্য গাজি এ্যাটাক’ ভারতীয় সিনেমা অঙ্গনে ভিন্নমাত্রা যুক্ত করতে আসছে। হলিউডি সাবমেরিন ওয়্যার মুভি দেখে অভ্যস্ত দর্শকদের জন্য হিন্দীতে নির্মিত এ ছবি নতুন স্বাদ দেবে সন্দেহ নেই।
×