ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিরপেক্ষভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নিরপেক্ষভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দায়িত্ব নিয়ে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার ঘোষণা দিলেন নতুন সিইসি কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, তাদের কাজ হবে সংবিধান অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা। এ সময় কাজ করার ক্ষেত্রে কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবেন না। নিরপেক্ষভাবে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবেন। বুধবার শপথ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব অঙ্গীকার করেন। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনের অন্য চার সদস্য সুপ্রীমকোর্টের জাজেজ লাউঞ্জে শপথ গ্রহণ করেন। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা নতুন কমিশনারদের শপথবাক্য পাঠ করান। এদিকে শপথ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনের অন্য চার সদস্য সরাসরি চলে যান পশ্চিম আগারগাঁওয়ে অবস্থিত নির্বাচন কমিশন ভবনে। নির্বাচন কমিশন সচিব নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য কমিশনারদের স্বাগত জানান। কমিশনের দায়িত্ব নিয়েই বিকেল ৫টায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় নবনিযুক্ত হুদা কমিশন। নির্বাচন কমিশন ভবনের নিচতলায় লনের পাশে উন্মুক্ত স্থানে তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। এ সময় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তাদের কমিশনের দায়িত্ব-কর্তব্য বিষয়ে সাংবাদিকদের সামনে স্বাগত বক্তব্য দেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এর আগে তিনি অন্য কমিশনারদের পরিচয় করিয়ে দেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, শপথ গ্রহণের পর থেকে আমাদের ওপর নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আমাদের কার্যক্রমের প্রধান প্রধান পাথেয় হবে দেশে সংবিধান, সংবিধানের অধীনে বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা ও নির্বাহী আদেশসমূহ। এ কমিশনের অনুসরণীয় হবে ’৭২ সাল থেকে ২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করা ১১টি কমিশনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দিকনির্দেশনা। প্রায় ৪৫ বছর ধরে নির্বাচন কমিশন ধীরে ধীরে একটি প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একজন সচিবে অধীনে এখানে রয়েছে সুসংগঠিত প্রশাসনিক কাঠামো ও সুদক্ষ জনবল। তিনি বলেন, সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একটি নির্বাচন কমিশনের প্রধান তিনটি কাজের মধ্যে রয়েছ রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা, অনুরূপ নির্বাচন পরিচালনা করা ও সংসদ নির্বাচনের সীমানা নির্ধারণ করা। এর বাইরেও স্থানীয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত। স্মার্টজাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণের কাজ নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। সংবিধানের অধীনে অভিজ্ঞ নির্বাচন কমিশনারদের নিয়ে এসব দায়িত্ব পালনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নতুন সিইসি বলেন, আমরা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে শপথ গ্রহণ করেছি। সংবিধান ও সংবিধানের অধীনে প্রণীত আইনকানুন বিধিবিধানের ভিত্তিতে দায়িত্ব পালনে অটল এবং আপসহীন থাকব। নির্বাচন কমিশনের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দক্ষতা ব্যবহার করে কাজ করবেন। এসব কাজে সরকার, সব রাজনীতিক দল ও গণমাধ্যমের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন নূরুল হুদা। স্বাগত বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করেই সব রাজনৈতিক দলের আস্থা অর্জনে আশাবাদী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাংবিধানিক কাজে সরকারের প্রভাব বিস্তারের সুযোগ নেই। আমরা সাংবিধানিক দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করব। কাজেই কারও দ্বারা প্রভাবিত হবো না। নতুন ইসির ওপর আস্থা রাখার বিষয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল ও সবার আস্থা অর্জনে কাজ করে যাব। আমরা কাজের মাধ্যমে এমন অবস্থান সৃষ্টি করব, যাতে সবার আস্থা অর্জনে সক্ষম হই। নিজেকে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, কোন দলের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কোন দলের নির্বাচনী কাজেও আগে যুক্ত ছিলাম না। তিনি বলেন, আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ একটাই দেশের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেয়া। এজন্য আমরা কাজ করে যাব। নির্বাচনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অযাচিত প্রভাব ঠেকাতে কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আমরা যে কোন প্রভাব, হস্তক্ষেপ কঠোরভাবে মোকাবেলা করব। আইন-বিধির বাইরে কোন কিছুকেই প্রশ্রয় দেব না। দায়িত্ব নেয়ার পর বর্তমান ইসির পরবর্তী কাজ সম্পর্কে বলেন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম হাতে নেবেন। প্রথম কাজ হবে আলোচনা করব নিজেদের মধ্যে, দেখব, বুঝব; সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পরিকল্পনা নেব। বুধবার শপথ নেয়ার মাধ্যমে দেশের ১২তম ইসির যাত্রা শুরু হয়েছে। এদিন প্রধান নির্বাচন হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক সচিব কেএম নূরুল হুদা। এছাড়া অন্য চার কমিশনারের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব রফিকুল ইসলাম, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ কবিতা খানম ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদত হোসেন চৌধুরী। বুধবার নতুন কমিশনের প্রথম সংবাদ সম্মেলনে নবনিযুক্ত কমিশনের সদস্য ছাড়া কমিশন সচিব ও উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত মঙ্গলবার শেষ হয় রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। ওইদিন সাবেক নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজের বিদায়ের মধ্য দিয়ে আগের কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়। যদিও সদ্য সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমেদসহ কমিশনের অন্য তিন সদস্য আব্দুল মোবারক, মোঃ আবু হাফিজ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) জাবেদ আলী বিদায় নেন গত ৮ ফেব্রুয়ারি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৫ বছর দায়িত্ব পালন করবেন। এ সময় তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ছাড়া অন্য সব স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচন তাদের অধীনেই হবে। শপথ ॥ এর আগে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বুধবার বিকেল ৩টায় শপথ গ্রহণ করেন। সংবিধান অনুযায়ী শপথ গ্রহণের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নবনিযুক্ত কমিশনের অধীনে ন্যস্ত হয়েছে। সব স্বার্থের উর্ধে থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে শপথ নেন তারা। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বুধবার বিকেলে সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে তাদের শপথ পড়ান। সিইসি নূরুল হুদাসহ নতুন কমিশনের সদস্যরা বেলা ২টা ৫০ মিনিটের মধ্যেই জাজেজ লাউঞ্জে পৌঁছে যান। প্রধান বিচারপতি আসেন বিকেল ঠিক ৩টায়। বাংলাদেশের দ্বাদশ সিইসি হিসেবে প্রথমে শপথ নেন কেএম নূরুল হুদা। তিনি শপথনামায় সই করার পর প্রধান বিচারপতি তাকে অভিনন্দন জানান। এরপর একইভাবে একে একে মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদত হোসেন চৌধুরী প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে শপথ নেন। শপথ পরিচালনা করেন সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম। নতুন ইসি গঠনের জন্য সার্চ কমিটির নেতৃত্ব দেয়া বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ছাড়াও আপীল বিভাগের বিচারক এবং সুপ্রীমকোর্ট, নির্বাচন কমিশন ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন এ অনুষ্ঠানে।
×